মুহাম্মদ আবদুল আওয়াল
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনী সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। যেখানে ভোটারদের প্রদত্ত একটি ভোট ও বিফলে যাবে না এবং সত্যিকারের রাজনৈতিক ও যোগ্য ব্যক্তিরাই সাংসদ হিসেবে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পাবেন এবং রাজনীতির উৎকৃষ্টতা বৃদ্ধি পাবে। সারা গণতান্ত্রিক বিশ্বেই এখন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মূলক ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজনীতিকে দূর্বৃত্তায়নের হাত হতে রক্ষা করার জন্য ও এ ব্যবস্থা অধিকতর কার্যকর বলে তাত্ত্বিকগন মনে করেন। গণতন্ত্রের তীর্থস্থান খ্যাত গ্রেট ব্রিটেনে ও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবী দিন দিন যৌক্তিক বিবেচনায় জোড়ালো হচ্ছে।বর্তমানে সুইডেন, নরওয়ে,কসুভো, সুইজারল্যান্ড, নামিবিয়াসহ আরো অনেক দেশে এ ব্যবস্থা প্রচলিত আছে এবং কার্যকর রূপে বাস্তবে প্রমাণীত।
এ ব্যবস্থায় যেহেতু কোন নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার জন্য কোন প্রার্থী থাকবে না সেহেতু সে এলাকার সাংসদ প্রার্থীকে হুন্ডা আর গুন্ডা টাকা খরচ করে জোগাড় করতে হবে না। কেন্দ্রীয় ভাবে দল তার দলের নেতাদের তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনে আগেই প্রেরণ করবে। সে ক্ষেত্রে যোগ্য, সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিদের নামই তালিকার উপর দিকে স্থান পাব। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে যে কয়জনের নাম আসবে তারাই প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। আর এতে সত্যিকার অর্থে Rule of majoriy প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় তা হচ্ছে না। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে একটি নির্বাচনী এলাকায় ৪ লক্ষ ভোটার আছে। তার মধ্যে নির্বাচনে ভোট দিলো ৩ লক্ষ ভোটা ও প্রার্থী ৪ জন। ১ জন প্রার্থী পেলো ১লক্ষ ২০ হাজার ভোট, ২য় জন পেলো ১লক্ষ ভোট, ৩য় জন পেলো ৬০ হাজার ভোট এবং ৪র্থ জন পেলো ২০ হাজার ভোট। এর মধ্যে ১লক্ষ২০হাজার ভোট প্রাপ্ত প্রথম জনকেই বিধিমোতাবে নির্বাচিত ঘোষনা করা হবে। অপর দিকে ১ লক্ষ + ৬০ হাজার+ ২০ হাজার মোট= ১ লক্ষ ৮০ হাজার ভোট বিফলে গেলো। শাসন ক্ষতায় তাদের মতামতের কোন মূল্য আর রইলো না। এভাবে ৩০০ আসন থাকলে একই অবস্থায় নির্বাচিত হয়ে আসবে। আর আমরা তাদের Rule of majority বলে থাকি। মূলত পক্ষান্তরে তা হয় Rule of minority. কিন্ত আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেকটা ভোটই হিসাবে আসবে এবং মূল্যবান।
এতে দলীয় তালিকায় নিজের নামকে উপরে রাখতে সবাই চেষ্টা চালাবে।আর এর জন্য সৎ ও যোগ্যতার প্রতিযোগিতা চলবে, এবং অযোগ্য, দূর্নীতি বাজরা পিছিয়ে পড়বে। তবে এতে দলীয় প্রধানদের সততা , বিচক্ষণতা এবং নিরপেক্ষতার প্রয়োজন অত্যধিক। তা না হলে নির্বাচনী ইসতেহারে তালিকা ঘোষনা করলেই মানুষ বুঝতে পারবে কোন দলের কে ক্ষমতায় আসছে। সৎ লোকের স্থান তালিকার প্রথম দিকে না থাকলে ভোটে তার প্রভাব পড়তেই পারে। তালিকায় এলাকার জন্য প্রার্থী যেহেতু নির্ধারিত থাকবে না সেহেতু দিনের ভোট রাতে দেয়ার ব্যপারে কেউ তেমন আগ্রহী হবে না এবং সুষ্ট নির্বাচন অনেকটাই সহজ হয়ে আসবে। এ ভাবে ২।৪ টি নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলে সুষ্ঠুনির্বাচন তখন একটা শক্ত কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে যাবে। ফলে তখন আর কেউ নিজের মতো করে নির্বাচনকে পরিচালিত করতে পারবে না।
তাই ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থা চালু করে ভোটারদের প্রতিটি ভোটের যথাযথ মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে সুষ্ঠ নির্বাচন ও ভোটারদের ভোটের সঠিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে করেই গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা পাবে সত্যিকারের টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। নির্বাচন পরম্পরায় তা দাঁড়াবে শক্ত কাঠমোর উপর। বিজ্ঞজনদের প্রতি আবেদন বিষয়টি গভীর ভাবে ভেবে দেখা।