1. banglapostbd@gmail.com : admin :
  2. admin@purbobangla.net : purbobangla :
স্বদেশ ভাবনা : আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন কোন পর্যায়ে - পূর্ব বাংলা
সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য বলার সাহস থাকাই হলো সাংবাদিকতা ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য বলার সাহস থাকাই হলো সাংবাদিকতা শহীদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবর জিয়ারত করলেন বিএনপি নেতা বিপ্লব মাওলানা শাহ সুফি মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন মমিন (রঃ) এবং কবরবাসী স্বরণে ১ম বার্ষিক দোয়া মাহফিল ইউনেস্কো ক্লাব এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন বায়েজিদ বোস্তামী ও মালেক শাহ (র.) ওরশ সম্পন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ফোরকানিয়া মাদরাসা শিক্ষক সমিতির কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত  আল্লামা আবুল খাইর ফাউন্ডেশন ২৬৫ জন রোগীর ছানি অপারেশন করালেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলে রাজপথ ছাড়বো না: হান্নান মাসউদ

স্বদেশ ভাবনা : আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন কোন পর্যায়ে

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৬৫ বার পড়া হয়েছে

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ১৫ বছর একটানা রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জয়লাভ করে দলটি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে।

২০১৪ সালের জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দলটি আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়। এ তিনটি নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করে। নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে দলটি জনস্বার্থে যেসব কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেয়, সেগুলোর তালিকা নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনেক অঙ্গীকার একাধিক নির্বাচনি ইশতেহারে তালিকাভুক্ত হয়। এ নিবন্ধে কেবল ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ঘোষিত অঙ্গীকারগুলোর, বিশেষ করে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারগুলোর বাস্তবায়ন অবস্থা পর্যালোচনা করা হবে।

‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ শীর্ষক আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮’তে যেসব অঙ্গীকার তুলে ধরা এবং বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে ছিল-গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়া জোরদারকরণ; জাতীয় সংসদকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ; আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ; দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলার নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; জনগণের ক্ষমতায়ন; উচ্চ আয়; টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন; অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্পগুলোর (মেগা প্রজেক্ট) দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গ্রামে নগরের সুবিধা সম্প্রসারণ; তরুণ ও যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ নিশ্চিতকরণ; সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস; খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন; সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাভিত্তিক যান্ত্রিকীকরণ; ব্লু ইকোনমি-সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন; সর্বোপরি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

প্রথমে দেখা যাক গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়া জোরদারকরণের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের কোন পর্যায়ে আছে। শহিদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর গুলিস্তানে নূর হোসেন স্কয়ারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তখন পর্যন্ত একটানা তের বছর ক্ষমতায় থাকার পর গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। গণতন্ত্র, এর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও বিকাশের অন্যতম শর্তাবলি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, সেই নির্বাচন জাতীয় বা স্থানীয় যে পর্যায়েই অনুষ্ঠিত হোক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্ধারিত দিনের আগের রাতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ব্যালট বাক্সে ভোট প্রদান। নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। উল্লেখ্য, গত এক দশকে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ায় বৈশ্বিক গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে। ২০০৬ সালে লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআরইউ) গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ত্রুটিপূর্ণ ক্যাটাগরিতে। এরপর থেকে দেশটি একধাপ নিচের ক্যাটাগরিতে তথা হাইব্রিড রেজিম বা মিশ্র শাসন ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসি (ভি-ডেম) কর্তৃক প্রকাশিত ‘অটোক্রাটাইজেশন টার্নস ভাইরাল’ শীর্ষক প্রতিবেদন ২০২১-এ বলা হয়েছে, উদার গণতান্ত্রিক সূচকে (লিবারেল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটা তলানিতে অর্থাৎ ১৫৪তম। আর শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে বাংলাদেশ আছে ‘ইলেকটোরাল অটোক্রেসি’ তথা নির্বাচনভিত্তিক স্বেচ্ছাতন্ত্র বিভাগে।

জাতীয় সংসদকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের রাতে এবং নির্বাচনের দিনে নজিরবিহীন অনিয়মের কারণে বিএনপিসহ বেশির ভাগ বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন বয়কট করে। এর ফলে জাতীয় সংসদের মোট ৩০০ আসনের ২৫৯ আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। তাছাড়া সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনের হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বাকি সব আসন পায় আওয়ামী লীগ। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা সংসদের কার্যকর ভূমিকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের ‘পার্লামেন্টওয়াচ : একাদশ জাতীয় সংসদ ১ম থেকে ২২তম অধিবেশন (জানুয়ারি ২০১৯-এপ্রিল ২০২৩)’ প্রকাশ করেছে গত ১ অক্টোবর। এতে বিরোধী দলের শক্তিশালী ভূমিকা পালনে ঘাটতি, কোরাম সংকটের কারণে আর্থিক অপচয়, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক কার্যক্রমে তুলনামূলক কম গুরুত্ব প্রদান, আইন প্রণয়ন বা বিল পাশের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও গঠনমূলক বিতর্কের ঘাটতি ইত্যাদি নেতিবাচক দিক ফুটে উঠেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাবে জাতীয় সংসদ প্রতিনিধিত্বমূলক না হওয়ায় তা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি, যা সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ : আইনের শাসনের অর্থ হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সর্বদা আইন অনুযায়ী কাজ করবে, যার ফলে রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকের কোনো অধিকার লঙ্ঘিত হলে সে তার প্রতিকার পাবে। বিরোধী দলের জন্য স্পেস না থাকা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের কর্মী এবং মুক্তচিন্তার মানুষের ওপর নিপীড়ন, বিচারব্যবস্থায় মামলাজট ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটা তলানিতে। ২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট প্রকাশিত বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪০টি দেশের মধ্যে ১২৭তম। আর গত এক যুগে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ২০২০ সালে দেশে আন্তর্জাতিক গুম দিবস পালন উপলক্ষ্যে ১২টি হিউম্যান রাইটস গ্রপের এক যৌথ বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে কমপক্ষে ৫৭২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও এসব বিষয়ে জবাবদিহির অভাব আছে বলে মন্তব্য করেন ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট।

দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা : আওয়ামী লীগ সরকারের একটানা প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে প্রশাসনকে প্রায় পুরোপুরি দলীয়করণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের একটি অংশ এতটাই প্রভাবশালী হয়ে পড়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি ছাড়া আর কারও কাছে তাদের জবাবদিহি করার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন না। তারা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির তোয়াক্কা করেন না। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে মাঠ প্রশাসনই এসব নির্বাচন পরিচালনা করে। সেই মাঠ প্রশাসনের একাধিক জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আওয়ামী লীগ যেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে, সেজন্য দলটির অনুকূলে ভোট প্রদানের জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন। মিডিয়া ও সচেতন জনগণের সমালোচনা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেবল নিরপেক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাধ্যমেই দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচকের এক ধাপ অবনতি হয়ে ২০২১ সালে বিশ্বে ১৩তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ ২০২২ সালে নিম্নক্রম অনুযায়ী ১২তম অবস্থানে এসেছে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ বছরে। পরবর্তী টানা চার বছর (২০০২-২০০৫) খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের সময়কালে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিল। বর্তমানে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন না হলেও বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর সারিতে রয়েছে।

দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস : সরকারি হিসাবে ২০১৬ সালের ২৪.৩ শতাংশ দারিদ্র্যহার বর্তমানে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এলেও মোট জনসংখ্যার (১৭ কোটি) একটি বিরাট অংশ (৩ কোটির বেশি) দারিদ্র্যসীমার নিচেই রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফনে (৯.৯২ শতাংশ) সমাজে শ্রেণিবিন্যাসে পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ মধ্যবিত্তের নিম্ন-মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তের দরিদ্র এবং দরিদ্রের অতিদরিদ্র স্তরে নেমে আসার জোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে দেশে দারিদ্র্যহার বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে আয়বৈষম্য কমার পরিবর্তে বেড়েছে। আয়বৈষম্য পরিমাপকারী গিনি সহগ ২০২২ সালে বেড়ে ০.৪৯৯ শতাংশে পৌঁছায়। ২০১৬ সালে এটি ছিল ০.৪৮২ এবং ২০১০ সালে ০.৪৫৮। অর্থাৎ দেশে আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে। যারা আয়ের নিম্নসীমায় আছেন, তাদের সম্পদের পরিমাণ আগের চেয়ে আরও কমে গেছে।

উপর্যুক্ত অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকার সফল না হলেও বেশকিছু অঙ্গীকার পূরণে কমবেশি সফল হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এর একটি। আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে যে ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে সেগুলো হলো-পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মাস-র‌্যাপিড ট্রানজিট, এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত কাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন। এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সেতুটি এখন যানবাহন পারাপারে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

গ্রামে নগরের সুবিধা সম্প্রসারণ, তরুণ ও যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, নারীর ক্ষমতায়ন, সব স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাভিত্তিক যান্ত্রিকীকরণ-এসব অঙ্গীকার আংশিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।

সবশেষে যা বলতে চাই তা হলো, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এ প্রক্রিয়া থেমে থাকে না। স্বাধীনতা-পরবর্তী সব সরকারই কমবেশি উন্নয়ন করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একটানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় রয়েছে, যে সময়ে দুটি নির্বাচন হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। অন্য কোনো দলীয় সরকারের ক্ষেত্রে এটা ঘটেনি। একটানা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব ক্ষেত্রে সাফল্য এনেছে, তা উন্নয়নের চলমান প্রক্রিয়ারই অংশ। সরকারের উচিত হবে বাস্তবায়িত না হওয়া অঙ্গীকারগুলোর ব্যাপারে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা প্রদান করা। আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla