সবাই আমরা বলছি আমাদের দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা অনেক উন্নতি করেছি ও করছি। ২০১৯ তে হজ্জ করতে গিয়েছিলাম। নামাজ শেষে হারাম শরীফে থামের সাথে হেলান দিয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।পাশে উপবিষ্ট মধ্য বয়সের ইরানের একজন হাজি সাহেবের সাথে সালাম বিনিময় হলো। আমি বাংলাদেশের জানতে পেরে আমার সাথে কথা বলার জন্য তিনি যেনো খানিকটা আগ্রহী হয়ে উঠলেন বলে মনে হলো।আরো একটু কাছে এগিয়ে বসলেন। জানতে চাইলেন আমি কি করি।আমার পরিচয় বললাম। তিনি ও নিজ পরিচয় দিলেন।বিনয়ের সহিত নিজেকে একজন সামান্য ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিলেও তিনি যে একজন সফল ব্যবসায়ী সেটা আমি সহজেই বুঝতে পেরেছিলাম।পরে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করতে লাগলেন। কথা শুনে বুঝতে পারলাম তিনি একজন বেশ সচেন মানুষ এবং অনেক খবরই রাখেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেত্রীত্বের ও প্রশংসা করলেন।এটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছিলো। নিজের দেশের প্রশংসা বিদেশের মাটিতে, বিদেশীদের মূুখে শুনতে কার না ভালো লাগে। সাথে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীরও। চাকুরী জীবনে ১৯৮৯ খ্রিঃ হতে অনেক বারই শান্তি মিশনে কাজের সুবাদে অনেক দেশে ছিলাম। বুঝতে পারতাম বিদেশী সহকর্মীরা বাংলাদেশের পুলিশ অফিসার শুনলে প্রথম অবস্থায় তেমন একটা গুরুত্ব দিতো না। কিছু দিন কাজ করার পর অবশ্য সে ভাবটা কেটে যেতো এবং তাদের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে ধারণা অনেকটাই ইতিবাচক পরিবর্তন হতো। আমাদের মহান মুুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫২ বছর পেরিয়ে গেলো। আমরা কি স্বাধীনতার চেতনা সত্যিকার অর্থে অর্জন করতে পেরেছি? স্বাধীনতার চেতনা বলতে কি আমরা কেবল পক্ষের আর বিপক্ষের বিভাজন আর ধর্ম নিয়ে টানা হেচরার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবো? আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মনে করি বঙ্গবন্ধুর আসল লক্ষ্য ছিলো এ দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগন কর্তৃক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে সরকার পরিবর্তনের একটা স্থায়ী বিধান বা নিয়ম প্রতিষ্ঠিত করা। নির্বাচিত প্রতিনিধিগন কর্তৃক দেশ পরিচালিত হলে উন্নয়ন ধারা বাহিক ভাবে হতেই থাকবে। কারণ জনপ্রতিনিধিদের জনগনের কাছে জবাব দিহিতা রয়েছে। জনগনের আদালতে তাদেরকে সময় মতো ফিরে যেতেই হবে,যা অন্য কোনো ব্যবস্থার সরকারে নেই।তাই চেয়ে ছিলেন নির্ধারিত সময় জনগনের সত্যিকারের ইচ্ছা ও আকাঙ্খার প্রতিফলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ও দায়ীত্বশীন হওয়া, যা তিনি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষায় পাকিস্তানী শাসক ও সামরিক জান্তাদের কাছ থেকে পাননি। ‘৭০ এর নিবার্চনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও তারা ক্ষমতায় বসতে দেয়নি। পরিনামে আমাদের স্বাধীনতা। যদিও তার প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই চলে আসছিলো। বঙ্গবন্ধু জানতেন যে তিনি নির্বচনে ভালো করলে ও ক্ষমতা তারা বাঙালির কাছে ছাড়বেন না। তাই ছিলো তার সেই বিকল্প পরিকল্পনা। তবে এ কথা স্বীকার করতে হয় যে তাদের মনে এতো দূরভিসন্ধি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচানটা কিন্তু সুষ্টু হয়েছিলো। আমি ‘৭০ এর নির্বাচনন অতি নিবিড় ভাবে দেখেছি। এডভোকেট মরহুম সিরাজুল হক সাহেবের এম,এল,এ নির্বাচনে আমি প্রচারণায় যথেষ্ট স্বক্রিয় ছিলাম। নির্বাচনটি সুষ্ঠু হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেরই নানান যুক্তি তর্ক থাকতে পারে। তবে আমাদের এখনকার মতো দিনের ভোট রাতে হয়নি। প্রতিপক্ষের লোকদের এলাকা ছাড়া করা হয়নি এবং মামলা দিয়ে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষনার চেষ্টা করে ফাকা মাঠে গোল দেয়ার অপচেষ্টা ও করেনি।(যদিও বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন মামলায় পরিকল্পিত ভাবে দীর্ঘ সময় জেলে রেখেছিলো সেটা নির্বাচনের আগে।) এতোটুকু ভালোর কথাতো স্বীকার করতেই হয়, যা বর্তমান পাকিস্তানে সরকার ও জান্তা তাদের জনগনের প্রতিও করছে না। ইমরান খান ও তার দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা ( ইমরান খানের বিররুদ্ধে প্রায় দুশতের কাছাকাছি) দিয়ে নির্বাচনের অনুপোযোগি করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে। হাজার হাজার নেতা কর্মী জেলে আটক রেখেছে, যারা বাইরে আছে তারা আত্মগোপন করে আত্মরক্ষা করছে। তেমনি আমাদের দেশেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা অসংখ্যা মামলা মাথায় নিয়ে কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে জেলে পঁচে মরছে! শেষ পযর্ন্ত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসকেও প্রতিপক্ষ মনে করে তাঁর বিরুদ্ধ এক সপ্তার মধো প্রায় ৬৮ টি মামলা রুজু হয়েছে। মানুষ কি তার অর্থ বুঝে না?এর পরামর্শক কে তা আল্লাহ পাকই ভালো জানেন। এতে মানুষের কাছে সরকারের বিশ্বাস ও গ্রহণ যোগ্যতা এবং আন্তর্জাতিক ভাবে সরকারের ভাবমুর্তি কোন পর্যায়ে পৌছেছে সে সব কিছুরই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আমরা পাকিস্তানীদের অপছন্দ করলেও দুর্ভাগ্য- জনকভাবে তাদের এ সব কু-কর্মগুলো খুব ভালো ভাবেই মনের অজান্তে ধরে রেখেছি! উন্নয়ন? সে তো তারা ও করেছে। যেমন পারমানবিক বোমা বানিয়েছে সাথে আরো আধুনিক অনেক মারণাস্ত্র। এখন তাদের মানুষ খেতে পায় না, আটার জন্য জীবন দিতে হয়, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে না পারায় মানুষ আত্মহত্যা করছে, ১ ডলার কিনতে প্রায় ৩৪০ পাকিস্তানী রুপি লাগছে।তাও পাওয়া কঠিন। জিনিস পত্রের দাম আকাশ ছোয়া। বৈদেশিক রির্জাভ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।দেশটা প্রায় দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে অর্থাৎ দেউলিয়া ঘোষণা করা সময়ের ব্যপার মাত্র। বিগত ৭২ বছরে সে দেশটাতে কোন নির্বাচিত সরকার তার মেয়াদকাল ৫ বছর পূর্ণ করতে পারেনি।অর্ধেকেরও বেশী সময় বন্দুক তাক করে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে গায়ের জোড়ে দেশ চালিয়েছে আর লুট করে দেশে গায়ের জোড়ে দেশ চালিয়েছে আর লুট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে সেনা জেনারেলরা। নির্বাচিত কোন সরকারই স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারেনি। জান্তাদের কথা মতো চলতে হয়েছে। (যদিও আমাদের বেলায় এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতীক্রম।) নির্বাচিত কয়েকজন প্রধাান মন্ত্রীকে হত্যাও করেছে। এক শ্রেণী বড় লোক বনে আরাম আয়েশে আছে দেশে কিংবা বিদেশে। আর সাধারণ জনগন দরিদ্র হতে আরো দরিদ্রে পরিণত হয়েছে ও হচ্ছে। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাকে, বঙ্গমাতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে, পরবর্তীতে জেলের অভ্যান্তরে জাতীয় চার নেতাকে এবং চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে কি জঘন্যতম মিল। দারিদ্রতা আমাদের সে পর্যায়ে না পৌছলেও জিনিস পত্রের দাম যে ভাবে বাড়ছে এতে জনগন ভালো নেই, এমনটা অকপটেই বলা যায়। ডলারের দাম বাহিরে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে, তা পাওয়া কঠিন। দুনিয়ার কোথাও না থাকলেও আমাদের দেশে আর পাকিস্তানেই আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক একটি অদ্ভুত ব্যবস্থা।রাষ্ট্র বিজ্ঞানের পাতা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। দুনিয়ার সভ্য কোন দেশেতো নয়ই। যদিও পাকিস্তানের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে জান্তাদের পছন্দ মতো এবং পক্ষপাত দোষে দুষ্ট ও তাদের আজ্ঞাবহ।আমাদের অবশ্য এমনটা হয়নি।তবে আর সব কিছুতে কি দঃসহ মিল! যদিও আমাদের সরকার সংবিধান পরিবর্তন করে তা বাতিল করেছে। এ অদ্ভুত ব্যবস্থা তো বাতিল হওয়াই বাঞ্চনীয়। কিন্তু আমাদের বিরোধী দলগুলো মরিয়া হয়ে চাইছে আবার বহাল করতে। তাছাড়া তাদের বিকল্প কি বা করার আছে!ভোট তো সুষ্ঠু হয় না, সেটা দিনে হোক বা রাতে হোক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়েও ঐক্য মতে আসা যায় না।অতীতে আমরা ভালো করেই দেখেছি। অপর দিকে আমরা ও উন্নতি করেছি ও করছি।পারোমানণবিক বোমা না বানালেও পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট ইত্যাদি আরো যা যা। কিন্তু পারিনি সরকার পরির্বতনের একটা স্থায়ী পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে।এ দায়িত্ব কোনদিন ও জনগনের উপর নয়।দায়ীত্বটা রাজনীতিবিদদের। তাদের ব্যার্থতার মাশুল জনগনকে কেনো পদে পদে দিতে হবে?।হরতাল আন্দোলনের নামে দোকান পাট যানবাহনে আগুন, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা , রেল লাইন তুলে ফেলা, জনগনের টাকায় কেনা বিদেশ থেকে আনা গাড়ির বগিসহ অন্যান্য জ্বালিয়ে দেয়া, এসব রাজনৈতিক দলের লোকজনই করে থাকে, সাধারণজনগন নয়। কোন্ দিন যেনো আবার পদ্মাসেতু, মেট্রো রেল ইত্যাদিতেও আগুন দেয় সেটা আল্লাই জানেন! কারণ ক্ষমতার জন্য আমরা কি না পারি? স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে।বন্দুকের নলের মূখে ক্ষমতা দখল কি আমাদের ও কম হয়েছে? এ ইতিহাস তো সবারই জানা। আমাদের লোকজন টাকা পাচারে কম কিসে? বেগম পাড়াসহ আরো আরো দেশে কার কার বাড়ি আছে সে সব খবর তো প্রায় প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হয়। ডঃমুহাম্মদ ইউনুসকে সুদখোর বলা হয়।যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ব্যাংক খালি করেছে তাদের কে কি নাম দেবেন? ব্যাংক-খোর বললে বিশেষণ টা যথেষ্ঠ কি তাদের জন্য? হয়তো না। তারা আরো অধিক বিশেষণে ভুষিত হওয়ার দাবি রাখে। প্রতিবেশী ভারত, মালদ্বীপ,নেপাল,ভুটান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো আরো দেশে তো সরকার বদল ও ক্ষমতা নিয়ে এমনটি হতে দেখি না। তাদের তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগে না। তো আমাদের কেনো লাগে?তারা কিভাবে সরকার পরিবর্তন পদ্ধতিতে এতাে দূর এগিয়ে গেলো? সারা দুনিয়া পারে আমরা কেনো পারি না? দিনের ভোট তো তাদের রাতে করতে হয় না। আমাদের হয় কেনো? আমাদের করতে হয় এর কারণ দুর্নীতি ও চুরি। এ ব্যপারে কোনো দল কোনো দলের চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নয়। সুযোগ পেলে যেনো প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। ক্ষমতা হাত হতে চলে গেলে উপায় কি হবে, সে চিন্তা থেকেই রাজনৈতিক পদ্ধতির উন্নয় অর্থাৎ সরকার পরির্বতনের পদ্ধতি স্থায়ী ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারেনি। ক্ষমতায় থেকে পছন্দ মতো কৌশল তৈয়ার করা হয় যা তাদেরকে ক্ষমতায় স্থায়ী করবে। উন্নয়নের নামে দুটি ফায়দা লোটা যায়।একটি হলো উন্নয়নের টাকা হতে নিজেদের চুরি আর অপরটি হলো জনগনকে বুঝানো যে আমরা অনেক কিছু করছি। ভাবখানা এমন যেনো নিজের বা পূর্ব-পুরুষের জমিদারী বিক্রি করে টাকা এনে এ সব করছে। সব টাকা যে জনগনের সে কথা তারা বেমালুম ভুলে যায়। বলে থাকে আমি করেছি। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ও উন্নয়ন করছে। মাত্র দুবছরে তারা তাদের মূদ্রার মান প্রতিবেশী সব দেশের উপরে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে।পশ্চিমারা তাদের বিরুদ্ধে যতো অপপ্রচারই চালাক না কেনো তালেবান সরকার সৎ শাসক। সে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে অত্যন্ত ভালো। আমরা মিথ্যার ধুম্রজালে হাবুডুবু খাচ্ছি।আমাদের মিথ্যার যেদিন অবসান হবে,যেদিন সরকার সৎ হবে এবং সরকার পরির্তনের ক্ষমতা সত্যিকার অর্থে জনগনের হাতে আসবে, সে দিনই স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।স্বাধীনতার চেতনা বলতে সত্যিকার অর্থে সেটাকেই বুঝি এবং মূলত সরকার কর্তৃক দেশের গুনগত উন্নয়ন বলতেও তাই বুঝি। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য দায় ভার কখনো জনগনের উপর চাপনো যায় না। এ সব কেবলি রাজনীতিবিদদের সৃষ্টি এবং সমাধানের দায়িত্ব তাদেরই, জনগনের নয়।জনগন শান্তিতে থাকতে চায়। আমরা আশা নিয়ে বেঁচে আছি এবং আশা নিয়েই বেঁচে থাকবো ইনশাল্লাহ।