নাছির উদ্দিন
কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে সীতাকুণ্ড থানার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে মৃৎ কুঠির শিল্প। উপজেলার মহাদেবপুর, কুমারপাড়া, বড় দারোগারহাট, বহরপুর, মহালঙ্গা, বাড়বকুণ্ড ও বাঁশবাড়ীয়ায় এক সময় প্রায় ৩শ পরিবার মৃৎ কুঠির শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা, শিল্পের উন্নয়ন ও প্লাষ্টিকসহ নতুন নতুন সামগ্রীর প্রসারে অন্যান্য এলাকার মত উপজেলায় প্রায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ কুঠির শিল্প।
সরেজমিনে দেখা যায় পূর্বপুরুষদের পেশায় আঁকড়ে থাকা পাল পাড়ার সোহাগী রানী, গীতা রানী ও মনোরঞ্জন পাল সহ অনেকেই মাটির সামগ্রী তৈরি ও রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা উপজেলার দক্ষিণ রহমতনগর সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লক্ষণ দে বলেন মেলামাইন, প্লাষ্টিক কিংবা আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রেতাদের চাহিদার পরিবর্তনে দুর্দিনে মৃৎশিল্প সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। বর্তমান বাজারে আগের মত মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। ক্রেতারা মাটির জিনিজপত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এ পেশায় যারা জড়িত ও জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের সংসার পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মৃৎ কুঠির শিল্প ব্যবসায়ী নারায়ন নাথ জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পন্য তৈরি না হওয়ায় কুমিল্লার পদুয়া বাজার ও ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে নিয়মিত মৃৎ শিল্প সামগ্রী সীতাকুণ্ড বাজারে আমদানী করতে হয়। থানা সংলগ্ন পাল বাড়ীর খোকন পাল জানান, পারিবারিক ভাবে প্রায় ৫৮ বছর যাবৎ আমরা মৃৎ কুঠির শিল্পের সাথে জড়িত। সুনিপুণ হাতে মাটি দিয়ে তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, থালা-বাটি, সরা-বাসন, বিক্রি করেই তাদের সংসার চলছে।
সীতাকুণ্ড সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলম (উপ-অধিনায়ক ১৪ বিএনসিসি ব্যাটালিয়ন) জানান, মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য। মৃৎশিল্পের সাথে এখনো ঘুরছে উপজেলার প্রায় ১ শত পরিবারের ভাগ্যের চাকা। সেই মৃৎশিল্পের আজ দুর্দিন চলছে। এক সময় নিজেদের পছন্দ মত তৈরি জিনিস পেতে ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখেছি। বর্তমানে মেলামাইন প্লাষ্টিক কিংবা অন্যান্য শিল্প সামগ্রী স্বল্পমূল্যে বাজারজাত হওয়ায় মৃৎশিল্পের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও ফুলের টব, মাটির কলস, মাটির পাতিল, মাটির তাবার প্রতি ক্রেতাদের রয়েছে বিশেষ চাহিদা। তিনি পরিবেশবান্ধব মৃৎশিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।