বিপ্লব কান্তি নাথ
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও আগামী নির্বাচন নিয়ে কিভাবে কাজ করতে চাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নিয়ে চলছে বিশ্ব মোডলদের ঘামঝরা চিন্তা। ভিসা নীতি নিয়ে তোমন মাথা ঘামাচ্ছে না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভয় নেই, বলে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সত্যি কি তাই ? স্নায়ু চাপ বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। মহাচিন্তায় রপ্তানিকারকরা ব্যবসায়ীরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া মানে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে যাওয়া। বাংলাদেশ সেখানে টিকতে পারবে তো ? কতটা প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে ? পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে খারাপ হবে নাকি ভালো ? যুক্তরাষ্ট্রকে পরোয়া না করলে বাংলাদেশের ঠিক কতটা ক্ষতি হতে পারে ? কী ভাবেন বিশ^ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ?
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে, যুক্তরাষ্ট্রকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলে দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা যারা দেয়, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রয়োজনে বাংলাদেশও কাউন্টার স্যাংশন দেবে। কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না তা নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই। কিন্তু সত্যি কি ভয়ের কিছু নেই? যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে বাংলাদেশ চলতে পারবে তো ? হিসেব বলছে অন্য কথা। বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। ভিসা নীতি নিয়ে বাংলাদেশের বহু ব্যবসায়ী আতঙ্কিত। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, শুল্কের ক্ষেত্রে বাধা আসতে পারে। কমতে পারে মার্কিন বিনিয়োগ। পাল্লা দিয়ে কমবে প্রবাসী আয়ও।
যত দিন যাচ্ছে ততই যেন নির্বাচন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ বেড়েই চলেছে। স্নায়ুচাপে রয়েছে বাংলাদেশের বহু ব্যবসায়ী। বাংলাদেশের আমদানির অন্যতম ক্ষেত্র চীন আর ভারত। আবার রপ্তানির অন্যতম ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ। এমনিতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি স্লথ হয়েছে। তার উপর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাণপণের লড়াই চালালেও, ভিসা নীতি দিতে পারে মারণ কোপ। ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে জুলাই অর্থাৎ এই ৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। ইউরোপের অন্যতম ক্রেতা দেশ জার্মানি, সেখানেও কমছে রপ্তানি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক আমদানির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫.৫১ শতাংশ। জার্মানিতে কমেছে প্রায় ৬. ৮১ শতাংশ। এরই মাঝে ভিসা নীতি নিয়ে এতটাই জটলা হচ্ছে যে, পশ্চিমা বিশ্বের বাজার ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হতে পারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের।
বিষয়টা কিন্তু এখানেই থেমে নেই। তালিকায় আছে যুক্তরাজ্য এবং কানাডার নামও। এই ধরনের রাষ্ট্রগুলো পররাষ্ট্র নীতিতে সামঞ্জস্য রাখে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। যদি হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বন্ধ করে দেয়, তখন কি হবে? পশ্চিমা দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করলে মহাবিপদ। এমনটাই বলছে বণিক বার্তার রিপোর্ট। অপরদিকে বহু বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে বিনিয়োগ প্রবাহ কমে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, যুক্তরাজ্য কানাডা ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীন কিংবা ভারত রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিশেষ সুবিধা দেয়। যা পাওয়া যায় না মার্কিন বাজার থেকে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা ধরে রেখেছে নিজেদের জোরে। তাই ভিসা নীতির সঙ্গে রপ্তানির কোন সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই বলে এসেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন হবে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারও তাই চায়। কিন্তু অন্য দেশের সিদ্ধান্ত কিছুতেই যেন মানতে পারছে না বাংলাদেশ সরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতিও কম নয়। আপাতত নির্বাচন না এলে এবং নির্বাচন না গেলে বোঝা যাবে না পরিস্থিতির ঠিক কতটা রদবদল হল।
তবে, বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের প্রায় এগারো হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটা চায়, আরও বেশি পরিমাণে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করার সুযোগ পাক। হস্তক্ষেপ নয়, সুষ্ঠু নির্বাচন চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন পিটার হাস। বাংলাদেশের জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে সুষ্ঠুভাবে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে সমস্ত রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পাশে আছে, পাশে থাকবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও চায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।