মাহমুদুল হক আনসারী
বর্তমানে আত্মহত্যা কথাটি প্রায় প্রতিটি মানুষের মাঝে সাধারণ একটি কথায় পরিণত বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ তরুণ তরুণী জীবনের সমস্যার সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকে বেছে নিয়েছে। যার মাধ্যমে তারা মহাপাপে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে।
আত্মহত্যা বলতে মূলত নিজের জীবন নিজে শেষ করাকে বোঝায়। এটি বর্তমান সময়ে আমাদের চারপাশে ব্যবহারের বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে জীবনের সব সকল সমস্যার সঠিক সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকে বেছে নিয়েছে। আবার অনেকেই প্রিয়জনের দেওয়া ব্যথা কষ্ট দূর করার জন্য মৃত্যুকে অনায়াসে বরণ করে নিয়েছে। আত্মহত্যা বিভিন্ন উপায়ে সংগঠিত হতে পারে। আত্মহত্যা গলায় দড়ি ছাদ থেকে লাফানো বিষ পান অথবা অন্য কোন উপায়ে সংঘটিত হয়। এটি সামাজিক একটি অপরাধ এর মাধ্যমে একটি পরিবার ও একটি সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়। আত্মহত্যার কারণে একটি পরিবার অকালেই ধ্বংসের পথে ধাবিত হয় এবং পরিবারকে সামাজিকভাবে বিভিন্ন ধরনের হেনস্থার শিকার হতে হয়। আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না বরং এটি নতুন নতুন সমস্যার তৈরি করে দেয়। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আত্মহত্যা সব থেকে বড় পাপ যাকে মহা পাপ বলা হয়। আত্মহত্যা ব্যাক্তি পরিবার সমাজ রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যাধি। আত্মহত্যা কারী যে একদিনেই তার এই সিদ্ধান্ত নয়। তার ব্যাক্তি জীবন ধীরে ধীরে আচরণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত আসা। তার বয়স পড়ালেখা খেলাধুলা আচার আচরণ সবকিছুই এই চরিত্র পর্যন্ত আসার জন্য দায়ী। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দায়ী। সমাজ এর জন্য কম দায়ী নয়। আমাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো এর জন্য দায় এড়াতে পারে না। পারিবারিক ও সামাজিক বৈষম্য এর জন্য কম দায়ী নয়। অর্থনৈতিক বৈষম্য সামাজিক অস্থিরতা নাগরিক অধিকার থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত সেটিও অন্যতম কারণ। অর্থনৈতিক সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা থাকা চায় । পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সবগুলো সেক্টরে শিশু কিশোর যুবকদের জন্য সমানভাবে বিধান বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। সকল শিশু কিশোর চায় তাদের ন্যায্য অধিকার। শিক্ষা বাসস্থান অন্ন বস্ত্রের অধিকার। শিক্ষার সমান অধিকার সব শিশু কিশোর শিক্ষার্থীদের জন্য সমান ভাবে থাকা চায়। আমাদের দেশের নানা ভাবে শিক্ষার বৈষম্য দূর করা চায়। কয়েকমূখী শিক্ষা গোটা জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। নাগরিক হিসেবে সকল শিশুর সম অধিকার থাকা চাই। কিন্তু সেই অধিকারের যায়গায় নানা ভাবে বৈষম্য আর দূরত্ব। আত্মহত্যার জন্য পরিবার সমাজ রাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না। শিশু যুবক যুবতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রবণতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি সমাধান ও বন্ধ করতে সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সামাজিক ভাবে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে আত্মহত্যা নামক সংস্কৃতির বিরোদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা চাই। আমাদের সকলের উচিত এই মহা বিপর্যয় থেকে সমাজ ও জাতিকে রক্ষা করা।
বর্তমান সময় আমাদের চারপাশে আত্মহত্যা বিষয়টি খুব বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই এখন জীবনের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকে বেছে নিচ্ছে।
আত্মহত্যা একটি মারাত্মক রোগ। মানুষ নানা ভাবে একজন রোগী। মানসিক, শারীরিক রোগছাড়া খুব কম মানুষই পৃথিবীতে আছে। মানুষ আল্লাহর প্রেরীত প্রতিনিধি। সব সৃষ্টির উপর মানুষ শ্রেষ্ট সৃষ্টি। মানুষের বিবেক বুদ্ধি আছে। চিন্তা চেতনা ভালো মন্দের মাপকাটি আছে। কোনটি সত্য আর কোনটি অসত্য সেটি মানুষ বুঝবার ক্ষমতা রাখে। মানুষ একাকি ভাবে জীবনে চলতে পারে না। মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে আগমন সেটিও অন্যের উপরে নির্ভরতা ও অপরের সাহায্য। আসার পর থেকে পিতা মাতা, অপরাপর পরিবারের সদস্যদের সাহায্য তার বেডে উঠা। ক্রমেই একজন শিশু থেকে সে বড় হতে থাকে। হাটি হাটি পা পা করে সেই শিশু বড় হয়ে উঠে। সে কথা বলতে শিখে।
অক্ষর জ্ঞান অর্জন শুরু করে। বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা শুরু হয়। ভাষা, বই, সংস্কৃতি, শিখতে থাকে। পরিবার সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কে ধারণা অর্জন করে। মানুষ চিনা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বড় হয়। লেখা পড়া স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, পর্যন্ত তার যাত্রা চলতে থাকে। সে একজন মানুষ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন দিক ও সৃষ্টি কালচার অনুসরন অনুকরনীয় হয়ে উঠে। সে কিন্তু যা শিখে তার পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র হতে শিখছে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু মহল, সমাজের চতুপাশ হতে আহরণ করছে। যা দেখছে তাই শিখছে, তাই করার উপর অভ্যস্ত হচ্ছে। এটি সমাজের একটি চরিত্র। দেখেই অনুসরন অনুকরন। যত বড় হচ্ছে ততই তার চাওয়া পাওয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার চাহিদা আগ্রহ আবেদন নিবেদন বাড়ছে।
এটি মানুষের সভাবগত অভ্যাস। মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই । পাওয়ার কোনো কমতি নেই। আবেদনের শেষ নেই । যা পেয়েছে আরো পেতে চায়। যা পেয়েছে আরো অধিক ভালো মন্দ খাওয়ার পাওয়ার চাওয়ার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের হিসেব আছে। একজন শিশুকে পিতা-মাতার নিকট দৈনন্দীন কর্মের ভালো মন্দ হিসেব দিতে হয়, কি করবে করবে না সেটির জন্য আবেদন করতে হয়। সব ধরনের মানুষকে জবাব দিহিতার মধ্যে চলতে হয়। জবাব দিহিতার বাইরে কেউ নয়। সন্তান-সন্তানাদির খবর রাখা তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা সেটি কোনো দুষ ও ভূল বিষয় নয়। সন্তানের চলাচলে খবর রাখা দায়িত্বশীল পরিবারের কর্তৃব্য। সময় মতো সন্তানের সৎ সঠিক চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অভিভাবকের কর্তব্য। সেটিকে কোন সন্তান ভূল হিসেবে চিন্তা করলে সেটি হবে বাস্তব একটি কঠিন ভূল। সন্তানের প্রয়োজনীয় জীবন চলার উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অভিভাবক পরিবারের উপর ন্যস্ত থাকবে। ইচ্ছে করে ভালো মন্দ কোনো কিছুর সিদ্ধান্ত সন্তান নেয়া উচিৎ নয়। সবকিছুর চিন্তা সিদ্ধান্ত অভিভাবক সুচিন্তিত ভাবে গ্রহণ করবেন নিজ সন্তানের জন্য।
বর্তমানে তথ্য প্রযোক্তির যোগ। প্রায় পরিবারে সন্তানদেরকে প্রযোক্তি নির্ভর মোবাইল দেয়া হয়েছে। সন্তান তার লেখা পড়ার সাথে সাথে মোবাইলের মাধ্যমে তার আশ পাশ চিনতে পারছে। জানতে পারছে, সকলের আচার আচরণ মানুষের চিন্তা ও চেতনা। রুচি অরোচি, দেখতে দেখতে একজন শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতী, মানুষ অনেক কিছু সেখান থেকে শিখছে। এ শিখা থেকে মানুষ অভ্যাস পরিবর্তন করছে। চরিত্রের মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে। ভাষা, কথা, আচার অনুষ্ঠান বদলে ফেলছে। মানুষ মূলতঃ কাকে অনুসরন করবে সেটি ঠিক ভাবে বুঝতে পারছেনা। কী কী অনুসরন করবে,কার কাছ থেকে আদর্শ শিখবে সেটি ঠিক করতে পারছেনা। চতুর্পাশে যা দেখছে তাই গ্রহণ করতে মন চায়। সামর্থ্য আমার কতোটুকু পর্যন্ত আছে সেটির হিসেব না করে ইচ্ছা ও চাহিদা বৃদ্ধি মূলত আত্মহনন ও আত্মহত্যা নামক অপসংস্কৃতির জন্ম। কোনো কিছু পাওয়ার জন্য আত্মহনন যোগ্যতা নয়। পাওয়ার জন্য আত্মহত্যা মাধ্যম ও হতে পারে না। আত্মহত্যার প্রচলন কম বেশি পৃথিবীর সব দেশে আছে। আত্মহত্যার সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো ধার্মিক ব্যাক্তি আত্মহত্যার পথ অনুসরণ করতে পারে না। কোনো মেধা সম্পন্ন মানুষ সে কাজ পছন্দ ও বাস্তবায়ন করতে পারে না।
এটি একটি জগন্য অপরাধ। ধর্ম ও রাষ্ট্রের মাপকাঠিতে আত্মহনন অসম্ভভ কঠিন গর্হিত কাজ । জীবন মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ। এর বাইরে জীবন ও মৃত্যু হয় না। পূথিবীর সমস্ত অর্থ খরচ করে ও একটি জীবন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। ইচ্ছে করে মৃত্যুর যাত্রী হওয়া সৃষ্টিকর্তার সাথে চরম ভাবে বেয়াদবী ছাড়া কিছু নয়। এ অপরাধের বিচার ও শাস্তি খুবই কঠিন । এ মর্মান্তিক অপরাধের শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথ আছে বলে আমার জানা নেই। জীবন কোনো মানুষের জন্য সুখকর বিষয় নয়। জীবনে সর্বদা শান্তি সূখ মিলবে সেটিও ভাবা ঠিক নয়। মানব জীবন অর্থ সূখ শান্তি দু:খ বেদনার সংমিশ্রন। তাই জীবনে দু:খ অভাব অনটন সমস্যা লেগেই থাকবে সেঠিকে চরম ভাবে বিশ^াস করতে হবে। কঠিন ভাবে নিজের উপর অন্যায় সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। সফলতা ব্যর্থতা জীবনের সর্বদায় সঙ্গী। চাওয়া পাওয়ার আগ্রহ চাহিদা জীবনে থাকাটাই স্বাভাবিক। সফলতা আর ব্যর্থতা মৃত্যুর পূর্বে পর্যন্ত জীবনে সম্পৃক্ত থাকবে। একজন সাধারণ মানুষ থেকে সর্বচ্চো ব্যাক্তি পর্যন্ত তার কোনো দিন চাহিদার শেষ থাকে না। এটিই জীবন এবং এটিই সত্য। এর বাইরে চিন্তা করার বাকী থাকে না।
কেন আত্মহত্যা করছে, কোন অভিমান ইচ্ছে পূরণ না হওয়ার কারণে এ পথ বেছেঁ ন্য়ো ইচ্ছে পূরণ করতে হলে পরিশ্রম ও সাধনা থাকতে হয়। শুধু শুধু কর্ম ও সাধনা হীন ভাবে কোনো আশা ইচ্ছে পূরণ হয় না। সেটিও সমাজকে বুঝতে হবে। যারা এ পথের যাত্রী হয়েছে, তারা কোথাও না কোথাও কর্ম কাজে সমাজ হতে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। সেটি সকলেই বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় । কিন্তু যিনি আত্মহত্যা করছেন তিনি ভূল কাজে পা বাড়িয়েছেন। সামর্থ্যরে বাইরে তার চাহিদা ছিল। চিন্তা বুদ্ধি কর্মসূচিতে অবশ্যই ভূল ছিল। তাই আত্মহত্যার পথ বেছেঁ নেয়। জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিলেই যে, তার মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে সেটা কিন্ত নয়। আত্মহননের মাধ্যমে একটি দুটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , তা নয় । বরং রাষ্ট্র ও সমাজ অধিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং হচ্ছে। প্রতিবাদের ভাষা এটি নয় আরও অনেক ধরনের ভাষা দিয়ে প্রতিবাদ করা যেতে পারে। এ ধরনের অভ্যাস হতে মানবসমাজকে বিরত থাকা চায়। এসব বিষয়ের প্রতি সমাজকে সচেতন হতে হবে। অধিক ভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন ও কাউন্সিলিং গড়ে তুলতে হবে।
কী পরিমাণে আত্মহনন হচ্ছে সেটির হিসেব দেয়া আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। সমাজকে এ চরিত্রের মারাত্মক ব্যাধি থেকে সচেতন করাই হলো লেখার মূল উদ্দেশ্য ।
করণীয়, শিশু বয়স থেকেই যার যার ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে সন্তানদের প্রতি মূল্য বোধ চর্চা করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পারিবারিক সামাজিক ভাবে হতাশার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। সামর্থ্যের বাইরে আবেদন নিবেদন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লোভ লালসা পরিহার করতে হবে। উচ্চা বিলাসি জীবন যাপনে সন্তানদের অভ্যস্ত করা থেকে বিরত রাখতে হবে। সহজ সরল জীবন যাপনে চর্চা শিখাতে হবে স্বল্প ও মিতব্যায়ী শিক্ষা দিতে হবে। চারিত্রিক আদর্শ তৈরি করতে মহমনীষীদের জীবনী অনুসরণের উপর গুরুত্ব রাখতে হবে। সুশৃংখল জীবন যাপনে জীবনের শুরু থেকে অভ্যাস্ত করতে হবে। বখাটে, অসৎ চরিত্রহীন সঙ্গ হতে সতর্ক রাখতে হবে। জীবনের প্রথম থেকে একজন অভিভাবক তার সন্তানের প্রতি কঠোর দায়িত্ব শীল ভূমিকা পালন করলে হয়তো বা ব্যাক্তি , পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র আত্মহত্যার মতো মারাত্মক সামাজিক এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারে। আসুন আমরা আমাদের প্রিয় সন্তানদের প্রতি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে অভিভাবক সুলভ ভূমিকা পালন করি। ধর্মীয় জ্ঞান মহা মনিষীর উপদেশ তাদের মধ্যে প্রচার করি।