সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি
“গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান” শান্তিতে বাচঁতে হলে প্রয়োজন সবুজের ছায়া, এ শ্লোগান’কে সামনে রেখে পিএইচপির উদ্যোগে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে ১৬৬ একর ভূমিতে গড়ে উঠেছে নীরব সবুজ বিল্পব। পাহাড়ে বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস বনভূমিকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহ। শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত বাড়বকুণ্ড পাহাড়ে গাছে গাছে ফুল-ফল ও কলির গন্ধে ছড়িয়ে পড়েছে মনোরম সবুজের ঢেউ।
এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বদিকে থাকালে বড় বড় গাছে ঠাসা জঙ্গল চোখে পড়তো। তখন শিয়াল, বানর, হুনুমান, হরিণ, বন মোরগ, হাতি, চিতা ও মেছো বাঘসহ অসংখ্য প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিচরণ করতো। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটার ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের সেই জৌলুস। ঐতিহ্যের সেই বিশাল বৃক্ষরাজি অল্প সময়ের ব্যবধানে উজাড় হয়ে পাহাড় পরিনত হচ্ছে ন্যাড়া ভূমিতে। এমতাবস্থায় উপজেলার বাড়বকুণ্ড পিএইচপির উদ্যোগে ন্যাড়া পাহাড়ে প্রায় ১৬৬ একর পাহাড়ি ঢালু ভূমিতে দৃশ্যমান হচ্ছে সবুজ বনায়নের ঢেউ। পিএইচপির বাগান পরিচর্যায় অসংখ্য লোকের প্রয়োজন হওয়ায় বাড়ছে ব্যাপক কর্মসংস্থান। অসংখ্য শ্রমিকের নিরলস পরিশ্রমে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও বিরল প্রজাতির সারি সারি বৃক্ষরাজিতে ন্যাড়া পাহাড়ে দেখা দিয়েছে সবুজের ঢেউ। দুটি বাগানে প্রায় ১০ হাজার আম গাছ ছাড়াও ফলজ বৃক্ষের মধ্যে জাম, কাঁঠাল, লিচু, ডালিম, বেল, পেঁপে, কুল, লেবু, তেঁতুল, জলপাই, জামরুল, পেয়ারা, মাল্টা, আপেল, আমড়া, কামরাঙ্গা ও আমলকি সহ নানান প্রজাতির ফলজ গাছ। বাগানের এ ফল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
ন্যাড়া পাহাড়ে অপরূপ সবুজ বনায়নের নীরব স্বাক্ষী হয়েছেন উপজেলার ছোট দারোগার হাট, তাহের-মন্জুর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান। তিনি জানান, বনায়ন আর মহাসড়কের দুরত্ব স্বল্প পরিসরের হওয়ায় দৃষ্টিনন্দন সবুজের এ ঢেউ পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে বিনোদনের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেখানে প্রতিনিয়ত বনভূমি উজাড়, পাহাড় কর্তন আর বৃক্ষ নিধনের সংবাদে পরিবেশবাদীরা সোচ্ছার, সেখানে পিএইচপির পরিবেশ রক্ষায় এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আশার আলো। আমি পিএইচপির পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এমন উদ্যোগের সফলতা কামনা করছি। সীতাকুণ্ড হেল্থ এণ্ড এডুকেশন ট্রাস্ট্র এর নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রামস্থ সীতাকুণ্ড সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, সরকারের নানান উদ্যোগ ও পরিবেশবাদীদের শত প্রচেষ্টায় থামানো যাচ্ছে না পাহাড় দখল, কর্তন আর বৃক্ষ নিধন। সীতাকুণ্ডে কতিপয় শিল্পোদ্যোক্তার অবৈধ ভাবে পাহাড় কাটা আর নির্বিবাদে বৃক্ষ নিধনে পরিবেশ ধ্বংসের বিপরীতে পিএইচপির এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। পাহাড় আর সমুদ্রে অপরূপ উপজেলার উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পসহ জীব-বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে সরকারী-বেসরকারী ভাবে বনায়নে রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। আর উপজেলায় পিএইচপি সেই কাজটি নীরবে করে যাচ্ছে।