কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কনের বাড়িতে বর হাজির। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষ। বিয়ে বাড়ির উঠানে টানানো হলো একটি বড় দাঁড়িপাল্লা। দাঁড়িপাল্লার এক পাশে তুলে দেওয়া হলো বিয়ের পোশাক পরিহিত কনেকে। অন্য পাশে রাখা হলো এক, দুই ও পাঁচ টাকা মূল্যের কয়েন। পরে কনের ওজনের সমপরিমাণ কয়েন দিয়ে মাপা হলো তাকে। এমনি এক অভিনব বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রাগপুর মাঠপাড়া গ্রামের রতন আলীর মেয়ে মাছুরা খাতুন রিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় একই গ্রামের মাইনুল ইসলামের ছেলে বিপ্লবের। বিয়ের উদ্দেশ্যে তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে মেয়ে ও ছেলে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। শুরু হয় বিয়ের দিনক্ষণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা। গত মঙ্গলবার তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পরে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিয়ে বাড়িতে সকলের উপস্থিতিতে মেয়ের বাবা দাঁড়িপাল্লায় মেপে কনের সমপরিমাণ কয়েন (টাকা) দিয়ে ছেলেকে উপঢৌকন দেন। দাঁড়িপাল্লায় মেপে টাকা দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মেয়ের পরিবার থেকে বিষয়টিকে মানত হিসেবে বলা হলেও অনেকে বিষয়টিকে যৌতুক হিসেবে দেখছেন। এ বিষয়ে জানতে ছেলে ও তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। জনসম্মুখে ওজন করে টাকা দেওয়া ঠিক হয়নি। এটি যৌতুক না মানত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় মানুষের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে।
মেয়ের বাবা রতন আলী বলেন, ছেলে-মেয়ে নিজেরা সম্পর্ক করে কিছু দিন আগে বিয়ে করে। গত মঙ্গলবার উভয় পরিবারের সম্মতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মেয়ের ওজনে টাকা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়ের জন্মের সময় মানত করা হয়েছিল। মেয়ে বেঁচে থাকলে বিয়েতে তার ওজনের সমপরিমাণ টাকা উপঢৌকন দেব। তাই মেয়েকে পাল্লায় মেপে কয়েন দেওয়া হয়েছে।
প্রাগপুর ইউনিয়নের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়ের বাবা রতন আলী একজন পোশাক শ্রমিক। ঈদে ছুটিতে এসে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দাঁড়িপাল্লায় মেপে টাকা দেওয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল মাস্টার বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর শুনেছি। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আমি সেখানে যাইনি। তবে কেন মেয়ের সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দাঁড়িপাল্লায় মেপে টাকা দেওয়ার বিষয়টি অন্যায় হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা আইনগত অপরাধ। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।