শবে কদর মুসলিম জাতির জন্য একটি পূণ্যময় রাত । বাংলাদেশ সহ অসংখ্য মুসলিম দেশগুলোতে এ রাতটি ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপিত হয় । এ রাত মর্যাদা ও গুরুত্বের দিক দিয়ে হাজার বছরের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদাত ও সাধনা করে যা কিছু অর্জন করা সম্ভব ; এ রাতেই তা লাভ করা সম্ভব । এ মাসে পবিত্র কুরআনুম মাজিদ কে লাওহে মাহফুজ থেকে শেষ আসমানে অবতীর্ণ করা হয়। যা রাসূল (দ.)’র ৬৩ বছর জিন্দেগীতে পর্যায়ক্রমে ও প্রয়োজনানুপাতে ওহীর মাধ্যমে নাযিল হয়। এ রাতে পবিত্র কুরআন নাযিলের বিষয়টি সুরা কদর, সুরা দুখান ও সুরা বাকারার আয়াতাংশে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাতেই হায়াৎ, মাউত ও রিযিক সহ মানুষের যাবতীয় বিষয় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। যদিও ভাগ্য বা তাকদীর পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহ তা’লা অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান; একারণেই আল্লাহ তা’লা এ রাতটিকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। যাতে আল্লাহ তা’লা বান্দার গুনাহ মাফ করতে পারেন, হায়াৎ ও রিযিক বৃদ্ধি করতে পারেন। রমজান মাসের শেষ দশকের ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ বিজোড় সংখ্যার যেকোন একটিতে শবে কদর অনুসন্ধান করা জরুরী। তবে ২৭ ই রমজান শবে কদর হওয়ার ব্যাপারে একাধিক হাদীসের বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রত্যেক জিনিস চেনার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। অনুরূপে এ রাতকে সনাক্ত করার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য আছে; যা হাদীসের বর্ণনায় পওয়া যায়; যথা- (১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না, (২) রাতটি নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ অতি গরম ও নয় আবার ঠান্ডাও নয়, (৩) এ রাতে মৃদু হাওয়া বা বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে, (৪) এ রাতে মানুষ ইবাদাত করে স্বাচ্ছন্দ্য ভোধ করবে, (৫) এ রাতে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, (৬) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত। (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ: ২১৯০; বুখারী: ২০২১; মুসলিম: ৭৬২)। আল্লাহ তা’লা এ রাতে হজরত জিবরাইল (আ.) সহ অসংখ্য ফেরেশতাদের প্রথম আসমানে প্রেরণ করেন; বান্দার চাওয়া পাওয়া লিপিবদ্ধ করার জন্য। । হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়্যতে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’’ (বুখারি শরীফ)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ঐ রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করবো?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’(‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’) (ইবনে মাজাহ, আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ, নাসিরুদ্দিন আলবানী)। সুরা দুখানের ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তা’লা বলেন, “ফিহা ইউফরাকু কুল্লু আমরিন হাকিম।” অর্থাৎ এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুমোদিত হয় বা স্থিরকৃত হয়। অর্থাৎ লাউহে মাহফূয হতে লেখার কাজে নিয়োজিত থাকা ফেরেশতাদের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সারা বছরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন বয়স, জীবিকা এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত যা ঘটবে ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। ইবনে উমার (রাঃ), মুজাহিদ (রহ.), আবূ মালিক (রহ.), যাহহাক (রহ.) প্রমুখ এ আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। শবে কদরে যেসব আমল করা যায়: নফল নামাজ তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুত, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। নামাজে ক্বেরাত ও রুকু–সিজদা দীর্ঘ করা। কোরআন শরিফ: সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সুরা ত্ব-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরা তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; তাওবা–ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদি করা; কবর জিয়ারত করা। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করে দোয়া করা অতীব সাওয়াবের কাজ। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কল্যাণ দিয়ে ধন্য করুন। লেখক, Kawsar Uddin Maleki