মো. আবদুর রহিম
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনটি নানা কারণে গুরুত্ব বহন করে। পৌরসভা, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন, সিটি কর্পোরেশন এ তিন নামে এ নগরটির নাগরিক সেবার পেয়ে আসছে। বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনটি আকারে ৪১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। বলা হয় এর আয়তন ৬০ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ৬০ লক্ষ। এ নগরীর চারদিকে প্রবেশ পথ বিদ্যমান। ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী হয়ে মিরসরাই, সীতাকুন্ড, মহাসড়ক হয়ে নগরে প্রবশ পথ সিটি গেইট অর্থাৎ নগরীর ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড। ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী সড়ক ধরে নগরীর প্রবেশ পথ ফরহাদাবাদ চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ১নং গেইট বা নগরীর ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড। বোয়ালখালী থেকে কালুরঘাট ব্রীজ হয়ে নগরীতে প্রবেশ ৫নং মোহরা ওয়ার্ড। কক্সবাজার থেকে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালি, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া থেকে নগরে প্রবেশ পথ কর্ণফুলী নদীর উপরে হযরত শাহ আমানত ব্রীজ হয়ে ৩৫নং ওয়ার্ড দিয়ে নগরে প্রবেশ। পানি পথে প্রবেশ চট্টগ্রাম বন্দর, সদরঘাট ও ব্রীজঘাট হয়ে। এ চট্টগ্রাম নগরটি অতি প্রাচীন একটি নগর। সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, ব্যবসা-বাণিজ্যে ২টি মাধ্যম। যেহেতু সুপ্রাচীনকাল থেকে পানিপথে ব্যবসা বাণিজ্য চলে আসছে সে হিসাবে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর অর্থনীতির হাব। প্রাচ্যের রানি, অলি-আউলিয়ার পুন্যভূমি, সাগর নদী, পাহাড় পর্বত, সমতলের মহামিলনে এক নৈসর্গিক এলাকা চট্টগ্রাম। এ চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরণ বিবেচনায় এটি বাণিজ্যিক নগর। মানব সভ্যতা ও দেশি-বিদেশিদের চারণভূমি বিবেচনায় এ নগর বিশ^মানের একটি। শিল্প কারখানার দিকথেকে এখানে তৈল স্থাপনা, ড্রাইডক, সার কারখানা নিয়ে অতীব জরুরী শিল্প স্থাপনা এ নগরে। এছাড়াও ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড সহ পোশাক শিল্পের দিক থেকে চট্টগ্রামের গুরুত্বও কম নয়। আমদানী-রপ্তানি, শিল্প কলকারখানা, নৌ-বিমান বাহিনী, সমুদ্র-বন্দর-বিমানবন্দর ঘিরে চট্টগ্রামকে বলা চলে অর্থনীতির হাব বা হৃদপিন্ড। এ চট্টগ্রাম মহানগর বা সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হয় নির্বাচিত মেয়রের মাধ্যমে। মেয়রের সাথে ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ৫৫ কাউন্সিলর। যদি সামরিক শাসক মেজর জিয়া, জেনারেল এরশাদ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের শাসনামল লক্ষ করলে দেখা যাবে কেউ এসেছিল সেনাবাহিনী থেকে, কেউ এসেছিল সিভিল প্রশাসন থেকে আবার কেউ এসেছিল অনির্বাচিত লেবাসে রাজনীতির মানুষ। রাজনীতির মানুষদের মধ্যে জাতীয় পার্টির নেতা বাঁশখালীর সন্তান মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপি থেকে হাটহাজারীর সন্তান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচিত প্রতিনিধির আগমন হয়। ১৯৯৪, ২০০০ ও ২০০৫ এ তিনটি নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, রাউজানের সন্তান আলহাজ¦ এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী টানা ১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করেন। এরপর ২০১০ সালে মেয়র পদে নির্বাচিত হন ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের ১৭ বছরের কাউন্সিলার আলহাজ¦ মোহাম্মদ মনজুর আলম। তিনি ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময় প্রায় সাড়ে তিন বছর ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে পুর্নক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচন কমিশন করোনা মহামারির কারণে যথাসময়ে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে আলহাজ¦ আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদের পর ৬ মাস মেয়াদে প্রশাসক পদে দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ¦ খোরশেদ আলম সুজন। তাঁর মেয়াদ শেষে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হন অত্র সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ পরিষদ। এ নির্বাচনে বিজয়ী হন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁর দায়িত্ব চলমান। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ১ এপ্রিল ২০২৩ খ্রি.শেষ পৃষ্ঠায় দুই কলাম জুড়ে ৬ জনের ছবি দিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যুরো প্রধান ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পেশাজীবী নেতা জনাব রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ‘চট্টগ্রামে কে হচ্ছে মেয়র প্রার্থী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ছবিতে তিনি যে, ৬ জনের চবি এঁটেছেন তন্মধ্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন এক মেয়াদে মেয়র পদে আসীন ছিলেন। দ্বিতীয় জন এম. রেজাউল করিম চৌধুরী বর্তমান মেয়র, তৃতীয় জন জনাব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনীত মেয়র পদে আসীন ছিলেন, ৪র্থ জন ডা: শাহাদাতহোসেন, বর্তমান মেয়র এম. রেজাউল করিম-এর নিকট পরাজিত হন, মীর হেলাল উদ্দিন সাবেক মেয়র মীর নাছির উদ্দিনের পুত্র। ৭ম জন সাবেক মেয়র ও ১৭ বছরের কাউন্সিলার আলহাজ¦ মোহাম্মদ মনজুর আলম। আগামীতে যদি এই ৭ জনের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি প্রার্থী মনোনীত করেন তাহলে কেমন হবে সে নির্বাচন ? যদি নির্বাচনে নতুন কেউ বা পুরাতন কেউ আবার মেয়র পদে আসীন হন তাহলে চট্টগ্রাম নগর কেমন হবে ? এ প্রশ্নগুলো সাধারণ মানুষ, চট্টল দরদী শ্রেণি অবশ্যই চিন্তা করেন নয় কি ? চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন একটি ব্যতিক্রমধর্মী সেবা প্রতিষ্ঠান। এ সিটিতে স্কুল, কলেজ আছে, চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য মাতৃসদন, হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্র সহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে। তন্মধ্যে মিডওয়াইফারি, হেলথটেকনোলজি ও হোমিও কলেজ রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সেবাধরণগুলো হলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, যোগাযোগ আলোবাতির সেবা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতার বিষয়টিসহ নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের অলিগলি, নালা-নর্দমা, রাস্তাঘাট, খালবিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে কে বেশি জানেন। সিটি কর্পোশেনের আয়ের খাত কোনগুলো, অত্র প্রতিষ্ঠানের সহায় সম্পদ, ইকুইপমেন্ট, স্থাপনা ইত্যাদি সবকিছুর উপর কার কতটুকু দখল আছে? মোট কথায় ৬০ বর্গমাইল এলাকা সম্পর্ক ধারণা, নাগরিক চাহিদা, নাগরিকদের ভাবনা, দেশ ও জাতির স্বার্থ সব বিবেচনায় যিনি শতভাগ ধারণা রাখেন, যনি সৃজনশীল, যিনি সৃষ্টিশীল, যিনি আধুনিক ধ্যান-ধারণায় সমৃদ্ধ, যিনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে সক্ষম, যিনি সার্বক্ষণিক নাগরিক চাহিদা সম্পর্কে চিন্তা করেন এবং যার উচ্চাকাক্সক্ষা আছে, যার সেবার মানসিকতা আছে, যার নিঃস্বার্থ মন আছে, যারা লোভ-লালসা নেই, যার ভোগ বিলাসের মোহ নেই, যার সম্পদের মোহ নেই বা কমতি নেই, যার মানবতাবোধ আছে, যার আর্ত, পীড়িতদের প্রতি দরদি মন আছে, সেই মানুষটি যদি মেয়র পদে আসীন হতে পারেন তাহলেই চট্টগ্রামবাসী উপকৃত হবে। চট্টগ্রাম পাবে গৌরবময় স্বীকৃতি। নাগরিক পাবে শতভাগ সেবা। যদি মেয়র দিনের বেশির ভাগ সময় নগরবাসীর পাশে থাকেন, সুখ-দুঃখে সাথী হন, নগরীর সুবিধা-অসুবিধা গুলো সরাসরি দেখে ব্যবস্থা নেন, তিনিই হবেন প্রিয় মানুষ। আমরা সাধারণ নাগরিক চাই মশকমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত, অধিক করের বোঝামুক্ত, আলোবাতি, যোগাযোগ সুবিধা ও পরিচ্ছন্ন নির্মল পরিবেশ। আমরা বায়ুদূষন, শব্দদুষণ থেকে মুক্তি চাই। আমরা চাই বাসপোযোগী নাগরিক বান্ধব পরিচ্ছন্ন সবুজ আবহ। প্রিয় নগরবাসী আগামী দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, সংস্কৃতিমনা, খাঁটি বাঙালি মনের একজন মানুষ ঠিক করুন। যিনি দেবে মানসিক সেবা ও স্বস্তি। সেদিনের অপেক্ষায় আমরা থাকলাম।