মাহমুদুল হক আনসারী
কৃতজ্ঞতা বিশ্লেষণ সামাজিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কৃতজ্ঞতা মানবীয় গুণাবলির মধ্যে থাকে। ব্যক্তি পরিবার ও সামাজিক রাষ্ট্রীয় জীবনে কৃতজ্ঞতার অনুশীলন দরকার। হরহামেশা মানুষ কারো না কারো কাছ থেকে উপকার গ্রহণ করে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে হোক । পারিবারিকভাবে হোক। সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও নানা উপকার আমরা পেয়ে থাকি। আমাদের সমাজে উপকারের প্রচলন অব্যাহত আছে। পরিবারের কর্তা থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সমাজের নানা বিষয়ে উপকার প্রদান অব্যাহত থাকে। সে উপকারের ধরন ব্যক্তিগত ও হতে পারে। পারিবারিক ও সামাজিক ভাবেও হতে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাজের নানা অঙ্গে সে উপকার প্রদান হতে পারে। পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র নানাভাবে সে উপকার প্রদান থেকে গ্রহণ অব্যাহতভাবে চলে আসছে। দুনিয়া সমাজ মানুষ যতদিন থাকবে এসব চরিত্র সমাজে অব্যাহত থাকবে।
এখানে মূলত কৃতজ্ঞতা নিয়েই লেখার উদ্দেশ্য। পরিবার সমাজ রাষ্ট্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানুষ সৃষ্টির মধ্যে জ্ঞানী ও গুণী। মানুষ অন্যসব প্রাণীর চেয়ে বুদ্ধিমত্তা ও চারিত্রিক গুণাবলি সম্পন্ন প্রাণী। মানুষকে মহান আল্লাহ তায়ালা বুঝবার শক্তি দিয়েছেন। অনুধাবন করার মেধা দিয়েছেন। ভালো এবং মন্দ তফাত করার বিশ্লেষণ শক্তি প্রদান করেছেন। ন্যায় অন্যায় বুঝবার শক্তি মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। ন্যায়বিচার ন্যায় আচার আচরণ এবং অন্যায় ব্যবহার কার্যাদি করার ক্ষমতাও মানুষের রয়েছে। এতোসব কিছু বুঝবার পরও মানুষ একজন মানুষ। মানুষ সবকিছু বুঝে আবার বুঝেও অনেক কিছু না বুঝার মতো চুপচাপ থাকে। মানুষের চরিত্র বুঝা এবং মাপকাঠি করা আরেকজন মানুষের জন্য খুবই একটি কঠিন বিষয়। এ মানুষকে নিয়ে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্র।
মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বাস করে থাকে। একাকি মানুষ বাস করতে পারেনা। একে অন্যের সাহায্য সহযোগিতা নিতে হয়। তাই সমাজবদ্ধভাবে মানুষ বাস করে থাকে। মানুষকে সুশৃংখলভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি স্বাধীন দেশে অনেকগুলো সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠান সমূহে অনেক ধরনের কর্মকর্তা কর্মচারী থাকেন। তারা রাষ্ট্রের কর্মচারী। বেতনভুগী প্রজাতন্ত্রের মানুষ। তাদের কাজ হলো রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রদান করা। সংশ্লিষ্ট সবগুলো সেক্টর সমাজের মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত। এসব প্রতিষ্ঠানের শাখা প্রশাখা একেবারে গাঁ গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত বিস্তৃত আছে। এসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের শৃংখলা রক্ষার মাধ্যমে সামাজিক শৃংখলা রক্ষা করে। কোনো সেক্টরকেই ছোট করে ভাবার সুযোগ নেয়। একেকটা সেক্টর অপর সেক্টরের সাথে সমন্বয় রয়েছে। সমন্বয় ছাড়া কোনো সেক্টর সফল হয়না। সবগুলো সেবা সংস্থার মধ্যে একটা নিবিড় সমন্বয় সম্পর্ক দেখা যায়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। স্বাধীনতার পর হতে আজ পর্যন্ত দেশে বহু ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্ধশতবছরের অধিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স। এ বয়সে যা উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে সেটা কম কথা নয়। আমরা স্বীকার করি আর না করি উন্নয়ন অগ্রগতি অনেক হয়েছে। কী কী পর্যায়ের উন্নয়ন হয়েছে সেটি বলার দরকার নেই। জনগণ সেটা নিজ চোখেই দেখছে। কোথায় আমাদের অগ্রগতি হয়েছে আর কিসে অগ্রগতি উন্নতি হয়নি সেটাও জনগণ দেখতে পাচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা , রপ্তানিখাত , শ্রমখাত , শিক্ষাখাত উন্নয়নসহ এ ধরনের অগ্রগতি উন্নতির কথা বলতে গেলে অনেক বলা যাবে লিখা যাবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হতে এ জাতি কোথায় ছিল এখন কোন জায়গায় এসে দাঁিড়য়েছে। সেটা আজকের সময়ের জনগণকে চিন্তা করা ভাবা দরকার। কারণ কৃতজ্ঞতা এটা একটি মানবীয় চরিত্র। কৃতজ্ঞতা মানব চরিত্রে না থাকলে তাকে মানুষ বলা চলেনা। অন্ততপক্ষে বোধ সম্পন্ন মানুষের মধ্যে কৃতজ্ঞতা ও বিশ্লেষণ থাকা চায়। যার মধ্যে কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্লেষণ শক্তি থাকেনা তিনি মূলত বোধ সম্পন্ন মানুষের মধ্যে পড়েনা। আজকের সমাজে দেখা যায় উপকার ভোগ করার পর মানুষ উপকারের স্বীকৃতি দিতে চায় না। আহার করার পর পান করার পর শুকরিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মানুষ কষ্ট মনে করে। এটা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা মোটেও পছন্দ করেননা। কৃতজ্ঞতাকে সৃষ্টিকর্তা ভালোবাসে। শুকরিয়া জ্ঞাপনকারী অধিকভাবে আরো উপকার পাওয়ার আশা করতে পারে। অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি পরিবার ও সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারেনা। তারা দেশজাতির জন্য প্রতিবন্ধক। ভালো কাজের প্রশংসা করা দরকার। মূল্যায়ন বিশ্লেষণ থাকা চায়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন রাষ্ট্রকে অধিকভাবে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। সবকিছুতে চুপ থাকা জনগণের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়। ভালোকে ভালো বলা কৃতজ্ঞতা। আর মন্দকে মন্দ বলে তার সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। সমাজে কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্লেষণ মূল্যায়ন বাস্তবায়ন থাকা চায়। অকৃতজ্ঞতা সমাজ রাষ্ট্র ও দেশকে পিছনে নিতে সাহায্য করে। আসুন আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মানসিকতা তৈরি করি।