নগরীর সিংহভাগ মানুষেই ভাড়া বাসার উপর নির্ভরশীল। নিম্নমধ্যবিত্ত, চাকুরীজীবিসহ সর্বোপরি মেহনতী মানুষ ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে প্রতি বছরেই জমিদার নামক একটি শোষক গোষ্ঠীর নিকট নিত্যনতুন জোর-জুলুমের শিকার হচ্ছে। ভাড়াটিয়াদের জন্য আইন থাকলেও যথাযথ প্রয়োগের অভাবে ভাড়াটিয়ারা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমতাবস্থায়, ভাড়াটিয়াদের পক্ষে মনে হয় কেউ নেই। বছর শুরু মানেই ভাড়াটিয়াদের ওপর অনিয়ন্ত্রিত বাড়ি ভাড়া বাড়ার নতুন ‘অত্যাচার’। প্রতি বছরের মতো নতুন বছরের প্রাক্কালে ভাড়াটিয়াদের কাছে ভাড়া বাড়ার নোটিশ পাঠিয়েছে অধিকাংশ বাড়ীর মালিক। বিষয়টি একতরফা হওয়ায় ভাড়াটিয়ারা এক ধরণের অর্থনৈতিক এবং মানসিক নিষ্পেষণের মধ্যেই আছেন। এর আইনসংগত সুরাহা হওয়া এখন সময়ের দাবি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, করোনাকালে অসংখ্য ভাড়াটিয়া আর্থিক সংকটের মুখোমুখি আর বাড়ীওয়ালাদের ভাড়া বৃদ্ধির ‘অত্যাচারে’ শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হওয়ার বাস্তবতা দেখেছে দেশবাসী।
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেশজুড়ে বাড়িভাড়া পরিস্থিতির যে চিত্র তুলে এনেছে, এক কথায় তাকে বলা যায় মগের মুল্লক। গত ৩০ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৮.৮ শতাংশ। অথচ এই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়া বেড়েছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ হারে। চট্টগ্রাম শহরে বেড়েছে ৩৪.৭ শতাংশ। এই জেলার ‘জমিদাররা’ ১৭% ট্যাক্স (এখনো কার্যকর হয়নি) গ্যাস আর পানির দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। যা অমানবিক ও ঘর ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের পরিপন্থী। চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকা ছাড়া নাসিরাবাদ আবাসিক এলাকা, ষোলশহর, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা, ডেবার পাড়, হাজীপাড়া, বেপারীপাড়া, মেহেদীবাগ, দামপাড়া, চন্দনপুরা, পাথরঘাটা, কাজীর দেউরী, অক্সিজেন, পাঠানটুলীসহ তৎসংলগ্ন এলাকার লোভাতুর জমিদাররা এ ধরণের অস্বাভাবিক বাসা আর ফ্ল্যাট বাসার ভাড়া বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
বাড়ি ভাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে ভাড়া বৃদ্ধি, ভাড়াটিয়াদের অধিকার পর্যন্ত সব বিষয়ে ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া আইনের তোয়াক্কা বাড়ির মালিকও করেন না, সরকারও করে না। বিধিমালা তৈরী না করায় আইনটির কোন প্রায়োগিক চরিত্র নেই। বিগত ২০১৬ সালে উচ্চ আদালত সরকারকে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠনের নির্দেশ দিলেও অদ্যাবধি সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।
আইনত দুই বছরের মধ্যে ভাড়া না বাড়ানোর নির্দেশ থাকলেও ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে প্রতি বছর। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর আয়ের বড় অংশটাই চলে যাচ্ছে বাসা ভাড়া বাবদ। তার প্রভাব পড়ছে জীবনমান, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় শ্রমজীবি মানুষকে, বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকদের পাশাপশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বল্প আয়ের লোকজন। তাদের ঘরভাড়া মধ্যবিত্তদের তুলনায় অনেক বেশি।
৩০ বছরের পুরোনো আইনের বিধিমালা তৈরি, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিটি ওয়ার্ডে ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ ও সমস্যার সমাধান এবং বিড়ালের গলায় ঘন্টা ঝোলানোর এ দায়িত্ব সরকারের। শহর গুলোতে বাড়ি ভাড়া নৈরাজ্য দূর করা নাগরিক অধিকারেরই অংশ। লাখ লাখ ভাড়াটিয়ার জ্বলন্ত সমস্যাকে উপেক্ষা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থার দ্রুত অবসান হওয়া উচিত।
অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে সরজমিন পরিদর্শন করে প্রমান সাপেক্ষে “অত্যাচারিত” বাড়ীওয়ালাদের কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমন- জেলা প্রশাসক ও চসিক মেয়রের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
জনস্বার্থে
এম.আমিন উল্লাহ মেজু
১০৫, শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।