মো. আবদুর রহিম
বাংলাদেশ রক্ত আর ত্যাগের ফসল। আমরা স্বাধীন জাতি। আমাদের দেশ একটি জাতির একটি দেশ। চলমান ডিসেম্বর মাস। এ মাসের ১৬ তারিখে ১৯৭১ এ আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমাদের দেশে দু’টি পক্ষ ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছিল। যারা ১৯৭১ এ পরাজিত হয় তাদের অংশ হলো রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি। এদেশের রাজনৈতিক দল হলো জামাত-শিবির, মুসলিম লীগও তাদের অন্য সহযোগীরা। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ। নেতা ছিলেন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই এদেশের স্বাধীনতার শত্রু বা পরাজিত একটি শক্তি ঘাঁটি করে আছে। তারা স্বাধীনতা মানে না, বাঙালি জাতীয়তাবাদ মানে না, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না, তারা ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সাম্যে বিশ্বাসী না। তারা উগ্রবাদী, সাম্প্রদায়িক, তারা খুন-সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। এই উগ্রগোষ্ঠী এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের খুনিচক্র একাকার। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি এবং ১৯৭৫ এর খুনিচক্র তারা একজোট হয়ে বিএনপি নামক একটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর ব্যানারে শক্তি সঞ্চয় করে স্বাধীনতার ৫১ বছর পর বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বিনাশ করতে তৎপর। পরাজিত ও খুনির পৃষ্ঠপোষক দল বিএনপি মহান বিজয়ের মাস ১০ ডিসেম্বরকে টার্গেট করে সন্ত্রাসের নেশায় বিভোর। দেশ, জাতির উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিরোধী সব অপশক্তি ১৯৭১ এ পরাজিত কতিপয় বিদেশি শক্তির উপর ভর করে এবং অবৈধ অর্থের জোরে তারা নতুন করে উন্মাদনায় মেতে উঠেছে। এবারের বিজয়ের আনন্দকে বিশ^ ফুটবল খেলার আনন্দকে ধুলায় মিশিয়ে দেশের গৌরবগাঁথাকে ম্ল্যান করে দিতেই তারা সভা সমাবেশের নামে, গণতন্ত্র ও স্বাধীন মত প্রকাশের নামে ১৯৭১, ১৯৭৫, ২০০১ থেকে ২০০৬, ২০১৩, ২০১৪ সালের ন্যায় সন্ত্রাস-অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষের রক্তের নেশায় মাঠে নামতে চায়। তারা ১০ ডিসেম্বরকে টার্গেট করেছে। রাজনীতি মানুষের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণ ও দেশের কল্যাণে রাজনীতি। রাজনীতির ভাষা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, দলের আদর্শ, উদ্দেশ্যে, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও পরিকল্পনা বা ভিশন সম্পর্কে জনমত সৃষ্টি করা, মানুষকে ভোটমুখি করা, নির্বাচনমুখী করা, গণতান্ত্রিক চর্চা করা, ভাল-মন্দ মানুষকে বুঝানো। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড হওয়াই বাঞ্চনীয়। গণতন্ত্রের নিয়মে বিজয়ী দল সরকার পরিচালনা করবে এবং বিজিত দল বিরোধী দলের আসনে বসে সরকারের ভুলত্রæটি ধরিয়ে দিয়ে সঠিক পথে রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়তা করবে। দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জনে সহায়ক হবে। দেশ বাঁচলে, মানুষ বাঁচলেইতো ক্ষমতা যাওয়া-না যাওয়া নির্ভর করে। দেশের উন্নয়নে বাধা, সমৃদ্ধিতে বাধা, গণতন্ত্র বিকাশে বাধা, দেশের সুনাম, সুখ্যাতিতে বাধা, দেওয়া বা সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদে যুক্ত হওয়া, মানুষ খুন করা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, দেশের মানুষের সম্পদ ধ্বংস করার নাম কি রাজনীতি? লুটপাট, পাচার ও মাদক সেবনের নামতো রাজনীতি হতে পারে না। সুতরাং সংঘাত ও সন্ত্রাস কারোর জন্য শুভকর নয়। বাংলাদেশে বিরাজমান শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, আইনের শাসন, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সফলতার কারণে বিশ^সভায় বাংলাদেশ মডেল রাষ্ট্র। বাংলাদেশ উন্নয়নের যাদুর স্পর্শে বিশ্ববাসীর বিষ্ময়। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের একমাত্র সফল কান্ডারী সফল রাষ্ট্রনায়ক দার্শনিক জননেত্রী শেখ হাসিনা। করোনা ভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে পরাশক্তির নিষেধাজ্ঞা সত্বেও বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কারণে স্থিতিশীল। এদেশটিতে মন্দা ও দুর্ভিক্ষের কোন আলামতই নেই। বিশ্ববাসী যখন মন্দার পূর্বাভাসে আতংকিত। যখন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব টালমাটাল এ সময়ে আমাদের বিজয়ের মাসে আমাদের দেশের পরাজিত ও খুনীচক্র হঠাৎ করে বিনা কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছে। দেশ-প্রেম বির্বজিত এই অপশক্তি নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করছে। তাদের দেশপ্রেমিক হওয়া, দেশকে ভালবাসা, দেশের মঙ্গল কামনা, তাদের উচিত গনতন্ত্র চর্চা করা, তাদের উচিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া। যদি এই অপশক্তি অতীতের ন্যায় সন্ত্রাস ও অগ্নি সন্ত্রাসের পথে হাটে তাহলে তাদের ২টি ক্ষতি হবে ১) তাদের সন্ত্রাস ও অগ্নিসন্ত্রাস, গুজব, মিথ্যাচার নিস্ফল হবে। ২) জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হবে। তাদের উচিত হবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে গঠনমূলক রাজনীতিতে ফিরে আসা। আদর্শবিহীন রাজনীতি হলো সুবিধাবাদিতা। এ সুবিধাবাদিতা চিরকাল ছিল, চিরকালই থাকবে। অর্থাৎ যারা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করে তারা সবদেশে, সবকালে কম-বেশি থাকে থাকবে। সরকার ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ও দেশপ্রেমিকদের কাজ হলো অশুভ শক্তি যাতে কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা ভেঙে দিতে না পারে সেজন্য তাদের কঠোর ভাবে দমন করা। সরকার জনগণের জানমাল হেফাজত করতে বাধ্য। দেশের শান্তিপ্রিয় সব নাগরিক চায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, দেশ যেন শান্তিতে থাকে। সরকার তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের সাধারণ মানুষের জান-মাল যেন সুরক্ষা দেন, এটাই সাধারণের কামনা। আমাদের বিশ্বাস ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করে গণতন্ত্র নসাৎ কেউ করতে পারবে না। কোন অপশক্তি দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চাকা অচল করতে পারবে না। সংঘাত, সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্র কোন মঙ্গল বয়ে আনবে না। যুদ্ধ ধ্বংস ছাড়া কোন সুফল আনতে পারে না। সুতরাং আজ যারা বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে সংঘাত ও সন্ত্রাসের পথে হাটছে, তাদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক, তারা দেশপ্রেমিক হোক, তারা গণতন্ত্রে বিশ^াসী হোক, তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হোক, এটাই দেশবাসীর একান্ত কামনা।