নগরীর বন্দরটিলা সিটি কর্পোরেশন ৩৯ নং ওয়ার্ড অফিস এর সম্মুখে শিশু আয়াতের হত্যাকারীর ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় । ২৬ নভেম্বর শনিবার বেলা ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত আসামি আবির এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।
মানববন্ধনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানবিক স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতা ও সাধারণ মানুষ ও এত্র এলাকাবাসী অংশ নেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক স্কুল ছাত্রী বলেন, আমাদের নিরাপত্তা কোথায় ? আয়াত যে আবিরের কোলে উঠত ও ঘুরে বেড়াতো যে আবিরকে আদর করে চাচ্চু ডাকতো । সেই আবিরই কতটা নির্মমভাবে হত্যা করলো আয়াতকে। যদি সুষ্ঠু বিচার না হয়, তাহলে আরও পাঁচটা মায়ের কোল খালি হবে। আমরা অতি দ্রুত আবিরের ফাঁসি দেখতে চাই । মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ৬০ ঊর্ধ্ব এক ব্যাক্তি বলেন, মানুষ এখন আর কিভাবে মানুষকে বিশ্বাস করবে ? যাদের বাসায় থাকলো যাদের সাথে এক সাথে খাবার খেল তাদেরই আদরের একমাত্র মেয়েকে মেরে ফেললো । আমি এই হত্যাকারীর ফাঁসি চাই ।
গত ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানাধীন বন্দরটিলা নয়াহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার মসজিদের পাশ থেকে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় আয়াতকে অপহরণের চেষ্টা করে সে। অপহরণ করার সময় চিৎকার করলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ আকমল আলী সড়কে নিজ বাসায় নিয়ে ছয় টুকরো করে। পরে এসব টুকরো দুটি বস্তায় করে পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ এলাকায় বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়।
ওইদিন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা। এ ঘটনায় থানা পুলিশ কোনো ক্লু উদঘাটন করতে না পারলেও ২৪ নভেম্বর দিনগত রাতে ১১টার দিকে ইপিজেড থানার আকমল আলী সড়ক থেকে আবির আলী নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আটকের পর পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে শিশু আয়াতকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণের কথা স্বীকার করেন আবির আলী। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে ধারালো বটি ও এন্টি কাটার দিয়ে মরদেহ ছয় টুকরো করে পাশের সাগর পাড়ের নালা ও সাগরে ফেলে দেওয়া হয় বলে পিবিআইকে তথ্য দেন। সেই অনুযায়ী পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিষ্ফল অভিযান পরিচালনা করে পিবিআই।
২৫ নভেম্বর শুক্রবার সকালে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকে জানান, ১৫ নভেম্বর অপহরণের পরপরই আয়াত চিৎকার করায় শ্বাসরোধে হত্যা করে আবির আলী। আবির আলী নামের ১৯ বছর বয়সী এ যুবক আয়াতের দাদার বাসার পুরোনো ভাড়াটিয়া ছিলেন ।
হত্যাকাণ্ডটি সুপরিকল্পিত হিসেবে উল্লেখ করে পিবিআই পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশু আয়াতকে হত্যার পর মরদেহ গুমের বিষয়টি হিন্দি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ থেকে রপ্ত করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান আটক আবির আলী।’ এ ঘটনা গণমাধ্যমে আসার পর দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।