মাহমুদুল হক আনসারী
অস্থিরতা পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে গ্রাস করছে। অস্থির সমাজ অস্থির রাষ্ট্র। পরিবার থেকে শুরু করে সবখানেই এখন একধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। কেন এই অস্থিরতা। মানুষ ব্যক্তিজীবন পারিবারিক সামাজিক এবং রাষ্ট্রের নানা সেক্টরে প্রয়োজনীনয় নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রতিটি মানুষ এখন কর্মেও কাজে অস্থিরতা ভোগ করছে। সামাজিক এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান অস্থিরতার মধ্যে পড়ছে। আমদানি রপ্তানি সংকটে আছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো রপ্তানিকারক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ডলার সংকট এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি আমদানি রপ্তানিতে সংকট তৈরি করেছে। পরিবার সমাজের দায়িত্বশীল কর্তাদের মধ্যে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যহীন অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান একধরনের সংকটের ভয়ভীতি দেখা যাচ্ছে। অনেকের মুখে শুনা যাচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা উধাও হয়ে যাবে। তাই আমানত তুলে ফেলারও গুজব শুনা যাচ্ছে। এমনিতেই সবধরনের পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে মানুষ দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করতে সঞ্চয় ভেঙে খরচ করছে। আয় থেকে ব্যয় সব সেক্টরে বেড়ে গেছে।
মানুষ একধরনের জীবন পরিচালনায় হতাশা প্রকাশ করছে। ছাত্র যুবক কৃষক কর্মজীবি সকলের মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর কিছু কারণ রয়েছে। একটি কারণ ছিল করোনার সময় মানুষ নানাভাবে অর্থনীতির সংকটের মধ্যে ছিল। অনেকেই ঋণ করে পরিবার পরিজনের খরচ সম্পন্ন করেছিল। ফলে লোনগ্রস্থ হয়েছে অনেক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান। সে অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে না পেতেই রাশিয়ান ইউক্রেন যুদ্ধ পৃথিবীতে আরেকটি অর্থনৈতিক সামাজিক রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। করোনা ছিল একটি মহামারী সংকট। সে সংকটে ব্যক্তি থেকে সমাজ রাষ্ট্র একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে। করোনা নিবারণে সমাজ একে অপরের সহযোগীতায় ছিল। কিন্তু বর্তমান রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে গোট পৃথিবী তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে অনেক উন্নয়নশীল দেশ আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। নতুন করে আর্থিক সংকটের ভয়ে অনেক দেশ তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা মেগা প্রকল্প কাট ছাট করছে। রাষ্ট্র থেকে বলা হচ্ছে মহামারীর সতর্কতার কথা। দূর্ভিক্ষের পূর্বাবাসের সতর্কবাণী। যার কারণে ব্যক্তি পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক আদান প্রদানে ব্যাপক সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে।
সব সৃষ্টিকে লালন পালনের দায়িত্ব সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টির পূর্বেই রাখার কথা ধর্মগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। সৃষ্টির প্রতি সৃষ্টিকর্তার নিদের্শ চেষ্টা প্রচেষ্টা জীবন যাপনের জন্য অব্যাহত রাখে। কে কীভাবে খাবে ভোগ করবে এবং অর্জন করবে সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেরা মানবজাতি। মানবজাতিকে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাই সৃষ্টিকর্তা কখনো প্রতিনিধির অমঙ্গল দুঃখ দুর্দশা তৈরি হোক সেটা চাইবেননা। কিন্তু মানবজাতি তার নির্দিষ্ট পথ পরিক্রমা ব্যতিরেখে অন্যায় পথে ধাবিত হওয়ার কারণে বিপথগামী ও কষ্টের মধ্যে পড়ে। আজকের পৃথিবীর নানা অনিয়ম সমস্যা অভাব অনটন সবটিই মানবসৃষ্ট বলেই বললে মিথ্যা বলা হবে না। মানবসৃষ্ট এসব সংকট সহজে সমাধানযোগ্য নয়। ইচ্ছে করে একসমাজ আরেকসমাজের বিরুদ্ধে এক দেশ অপর দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মানবীয় সমস্যা সংকট তৈরি করছে। এটা শান্তিকামী বিশ^জনগণের নিকট একেবারেই পরিস্কার যে সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিশ^মোড়লরা গোটা পৃথিবীর মানুষের ওপর সংকট সৃষ্টি করছে। এসব সংকট সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত নয়। তাই আজকের সমাজের সংকট অস্থিরতা সামাজিক অভাব অনটন সবকিছুর পিছনে মোড়লদের গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত রয়েছে।
এসব বিশ^মোড়লদের ষড়যন্ত্র চক্রান্ত সম্পর্কে দুনিয়ার সচেতন মানুষকে বুঝতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তারা অন্যায়ভাবে উন্নয়নশীল অগ্রগামী দেশ ও রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে নানা ধরনের যুদ্ধ বিগ্রহ চাপিয়ে দেয়। এসব চক্রান্ত ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধের পেছনে বিশ অর্থনীতিকে থামিয়ে দিয়ে মানবীয় সংকট তৈরি তাদের উদ্দেশ্য। আজকের সমাজের অস্থিরতার পেছনে বিশ্ব মোড়লরাই দায়ী। এ মোড়ল নেতৃত্ব দেশে দেশে আছে। তারা পরিবার সমাজ রাষ্ট্র সুস্থ এবং সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক সেটা চায়না। যার জন্য সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়। এসবের বিরুদ্ধে সাধারণ বিশ^বাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনভাবেই কোনোদেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারেনা। যুদ্ধ অর্থ ধ্বংস যুদ্ধ অর্থ শেষ। বাকি কিছু থাকেনা। যেসব দেশে যুদ্ধ হয়েছে সেসকল দেশ হাজার বছর পিছিয়ে পড়েছে। তাদের অর্থনীতি জীবন সম্পদ সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তাই কোনো সুস্থ মানুষ সুস্থ সমাজ যুদ্ধ আশা করতে পারেনা। তাই আমরা সাধারণ ও শান্তিকামী মানুষ পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধের মাধ্যমে সে দেশ সমাজ মানুষ ধ্বংস হয়ে যাক সেটা কামনা করতে পারিনা। পৃথিবীর যেখানেই যুদ্ধ বাধুক না কেন সেকারণে সারা দুনিয়ায় কোনো না কোনোভাবে মানবীয় জীবনে সংকট তৈরি হবে। আজকে তাই পৃথিবীতে মানব জীবনে মানবসৃষ্ট সংকট তৈরি হয়েছে। সংকট থেকে উত্তোরণের পথ সমাজ শাসকদেরকে বের করতে হবে। না হয় এসব অনৈতিক এবং অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ডের কারণে পৃথিবী একদিন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যাবে। সভ্যতা সংস্কৃতি মানবতা বলতে পৃথিবীতে আর কিছু বাকি থাকবে না। তাই অস্থিরতার বিরুদ্ধে সামাজিক নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং গোটা পৃথিবীকে নিরাপদ আবাস ভূমিতে পরিণত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।