রাহাত হুসাইন অতিথি প্রতিবেদক
পঁচাত্তরোর্ধ্ব এমপিদের আসনে নতুন মুখ খুঁজতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এ ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় পর্যায়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, বিশেষ বিবেচনায় এমন কয়েকজন থাকবেন পরিবর্তনের আওতার বাইরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান জাতীয় সংসদে ২০ জনের অধিক সংসদ সদস্য রয়েছেন যাদের বয়স পঁচাত্তরোর্ধ্ব। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যাদের বয়স পঁচাত্তরোর্ধ্ব তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই, স্বাস্থ্যগত বিষয়টি বিবেচনা করে সেই এলাকায় দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
আগামী দিনে দলের প্রয়োজনে তরুণ নেতৃত্বকে সুযোগ দিতে চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরোর্ধ্ব এমপিদের জীবদ্দশায় সেই এলাকায় সাবেক ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে যারা ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দিবেন বলে মনে মনে স্বপ্ন দেখেন, অথচ তারা তাদের সেই স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করতে পারেন না, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ঘুরে যেতে পারে তাদের ভাগ্যের চাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বছরের ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন মুখ- তরুণদের সংগঠনের নেতৃত্বে এনে তাদের রাজনৈতিকভাবে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। সম্প্রতি ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচনে ৩১টিতেই নতুন মুখ প্রার্থী করেছে দলটি।
মনোনয়নের পরিবর্তন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা যাচাই করে দেখব কার জেতার সম্ভাবনা আছে, কার নেই। যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, কে ভোট পাবে, কে পাস করতে পারবে সবকিছু বিবেচনা করেই মনোনয়ন দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন এই বক্তব্যের মধ্যদিয়ে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও।
টানা বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আগামী নির্বাচনে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা অধিকতর গ্রহণযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিসম্পন্ন তাদের নৌকার প্রার্থী করবে দলটি। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যেসব নতুন মুখ দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল এবং তারকা খ্যাতি অর্জন করেছে তারাও নৌকার মনোনয়নে এগিয়ে থাকবে। এছাড়াও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েপড়া এমপিদের আসনেও নৌকার মাঝি পরিবর্তন করার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত। তারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় তারুণ্যনির্ভর প্রার্থী বেছে নিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে নির্ভার থাকা যাবে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নের ক্ষেত্রে কারা গুরুত্ব পাবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সৎ, নির্ভীক, এমন প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেয়া হবে। কোনো এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তিনিও মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে পড়বেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার বিষয়ে সার্ভে করছেন। আমলনামা দেখে আগামীতে মনোনয়ন দেয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনায় আনা হয়। যাদের জনপ্রিয়তা ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, দলের সঙ্গে কাজ করছেন, দলের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে।