1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
সন্দ্বীপে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা অভিযুক্ত স্বামী গ্রেফতার  চট্টগ্রামে র‌্যাবের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৪ চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহাসড়কে অবৈধ গাড়ির অরাজকতা বন্ধ করতে আবারো বিআরটিএ’র অভিযান আমি আজ কথা দিচ্ছি  আপনাদের একা রেখে পালিয়ে যাব না, সুখে দুঃখে আপনাদের পাশে থাকব, আমি আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চাই- ওয়াসিকা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিআরটিএ’র সাঁড়াশি অভিযান, জরিমানা অর্ধলাখ মে মাসেও থাকবে তীব্র গরম, তাপমাত্রা ছাড়াতে পারে ৪৪ ডিগ্রি সব স্কুল-কলেজ ৭ দিন বন্ধ ইসরাইলি মন্ত্রীর টুইটকে ঘিরে তোলপাড় সীতাকুণ্ডে ৫টি চোরাই গরু ১টি পিকাপ একটি দেশী অস্ত্রসহ গ্রেফতার ৩ জন বিশ্বের প্রভাবশালীদের তালিকায় আলিয়া

৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে গানের মানুষ প্রাণের মানুষ আইয়ুব বাচ্চু

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৬১ বার পড়া হয়েছে

আবছার উদ্দিন অলি

এই রূপালি গীটার পেলে চলে যাবো একদিন, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, সুখেরি পৃথিবী, সুখেরি অভিনয়, সেই তুমি কেন এতো অচেনা হলো, তারা ভরা রাতে, ফেরারী এই মনটা আমার, ঘুম ভাঙ্গা শহরে, তিন পুরুষ, আমি বার মাস তোমায় ভালবাসি, আম্মাজান আম্মাজানসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সংগীত তারকা আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের গৌরব। কিংবদন্তী ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু চিরদিনের মত আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। গীটার হাতে আর কখনো তাকে দেখা যাবেনা, দেখা যাবেনা কোন মঞ্চে, এমনকি গাইবেনা আর কোন গান। চট্টগ্রামের আইয়ুব বাচ্চু, বাংলাদেশের আইয়ুব বাচ্চু, উপমহাদেশের আইয়ুব বাচ্চু, আমাদের আইয়ুব বাচ্চু।

১৮ অক্টোবর ২০২২ আইয়ুব বাচ্চু’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী নানা আয়োজনে পালিত হবে। তিনি রেখে গেছেন রাজকন্যা নামের এক মেয়ে এবং তাজওয়ার নামে এক ছেলে। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ইছহাক ও মাতার নাম নূর জাহান। আইয়ুব বাচ্চুর সুনাম সু-খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে পৌঁছে গেছে। তিনি চট্টগ্রামের অহংকার। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর তারকা খ্যাতি ও আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তার গাওয়া শতাধিক সুপার হিট গান আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনকে করেছে সমৃদ্ধ ও বর্ণাঢ্য। চট্টগ্রাম নগরীর এনায়েত বাজার জুবিলী রোড এলাকায় জন্ম আইয়ুব বাচ্চুর, তার ডাক নাম রবিন। নগরীর মুসলিম হাই স্কুলে তিনি পড়ালেখা করেছেন। কৈশোর থেকেই সঙ্গীত পাগল ছিলেন তিনি। পাড়ায় প্রায় সকল অনুষ্ঠানেই তার উপস্থিতি ছিল। তবে প্রথমে ছিলেন শ্রোতা। বেশি আগ্রহ ছিল গিটারসহ বাদ্যযন্ত্রগুলোর প্রতি। শুরুটি হয়েছিল গিটারিস্ট হিসেবে। একটানা প্রায় এক দশক কেটে যায় গিটার হাতে। সে কারণে সঙ্গীত শিল্পীর চেয়েও তার পরিচিতি বেশি হয় গিটারবাদক রূপে। পাড়া মহল্লায় বিয়ে সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছেন দল নিয়ে।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। শিল্পীর সঙ্গীত জীবনের সূচনা হয় ১৯৭৭ সালে। ১৯৭৮ সালে তার প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’। এরপর যোগ দেন সোলসে। ১৯৮০ সাল থেকে পরবর্তী এক দশক পর্যন্ত সম্পৃক্ত ছিলেন এই ব্যান্ডে। সোলস ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে নিজে গঠন করেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। প্রথমে এলআরবির পূর্ণ অর্থ ছিল লিটল রিভার ব্যান্ড। পরে এই নামে অস্ট্রেলিয়াতে আরেকটি ব্যান্ড থাকায় বদলে করা হয় লাভ রানস বাইন্ড।

তার প্রথম একক এ্যালবাম প্রকাশ পায় ১৯৮৬ সালে ‘রক্তগোলাপ নামে’। আর ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় এলআরবির প্রথম এ্যালবাম এলআরবি। এরপর একে একে আসা এই ব্যান্ডের অন্য এ্যালবামগুলো সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারী মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিষ্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২) প্রকাশ পায়। একক এ্যালবামের মধ্যে রক্তগোলাপের পর রয়েছে ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির টানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্টস্ট্রুমেন্টাল ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এ ছাড়াও প্রচুর মিশ্র এ্যালবামে কাজ করেছেন।

১৯৭৩ সালে সুরেলা ব্যান্ডের জন্ম হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে জন্ম নেয় সোলস। শুরুতেই ঐ বছরেই যোগ দেয় তপন চৌধুরী এবং ১৯৭৫ সালে যোগ দেন নকীব খান। সর্বশেষ ১৯৮২ সালে সোলস ব্যান্ড আইয়ুব বাচ্চুর পদার্পন ঘটে। সোলস ব্যান্ড থেকে চারটি এ্যালবামে আইয়ুব বাচ্চু সাথে ছিলেন। লীড গীটারিস্ট হিসেবে যোগ দিলেও পরে বাংলা ও ইংরেজী গান করতেন। সোলস এর স্বর্ণযুগ সময়ে আইয়ুব বাচ্চু সাথে ছিলেন। তবে দুঃখের বিষয়, এত জনপ্রিয় গান করার পরে তাকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়নি। দাবি জানাচ্ছি, মরণোত্তর হলেও জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার। মুঠোর ভিতর পদ্ম নিয়ে, ঘুম ভাঙ্গা শহরে কলেজের করিডোরে ফেরারী মনটা আমার, চাঁদ এসো কি, দেখ দেখি জনতা, তুমি আমি নয় আজ চল গাই গান, সোলস্ এর এই গানগুলো আইয়ুব বাচ্চু সুর করেছেন।

চট্টগ্রাম মিউজিক্যাল ব্যান্ড এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি আর আইয়ুব বাচ্চু, আমরা ছিলাম অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমি থাকতাম অভয়মিত্রঘাট, কুমার বিশ্বজিৎ থাকতো আলকরনে, আইয়ুব বাচ্চু থাকতো এনায়েত বাজারে। অল্প দুরত্বের তিন বন্ধুর অবস্থান আমাদের বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে। আইয়ুব বাচ্চু আর কুমার বিশ্বজিৎ ঢাকা চলে গেলেও আমি চট্টগ্রামে থেকে যাই। কিন্তু আমাদের তিন বন্ধুর বন্ধন এতটাই সুদৃঢ় ছিল যে, এখনো পর্যন্ত তা বিরাজমান রয়েছে। এক মুহুর্তের জন্যও কেউ কাউকে ভুলতে পারি নাই। সে তিনজনের একজনের চলে যাওয়া আমাকে কতটা ব্যথিত করেছে, তা বলে বোঝাতে পারবো না। আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামে আসলে এবং চট্টগ্রাম থেকে গেলে আমাকে ফোন করবেই। দীর্ঘকালের আমাদের যে বন্ধুত্ব, তা এ সময়ে খুবই বিরল।

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, বাচ্চুর সাথে আমার ৪৭ বছরের বেশি সম্পর্ক। বাচ্চু ছাড়া আমি নিজেকে খুব একা অনুভব করছি। এই উপমহাদেশে যে ক’জন বিখ্যাত মিউজিশিয়ান আছেন তাদের মধ্যে বাচ্চু একজন। আইয়ুব বাচ্চু সবাইকে সহজে আপন করে নিতে পারতো। তার গায়কী এবং গিটার বাজানো এটি একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড জগতের আইকন। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে। বড় অসময়ে তার চলে যাওয়া আমাদেরকে কষ্ট দেয়। বাচ্চুর জনপ্রিয় গানগুলো শ্রোতারা শুনছে। এটি বাচ্চুর বড় সার্থকতা।

আইয়ুব বাচ্চুর গান, স্টেইজ শো, টেলিভিশনে পারফরম্যান্স, সব ক্ষেত্রেই আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। গীটার বাজানো দিয়ে তার গান শুরু দর্শকরা অন্যভাবে উপভোগ করতো। তরুণ প্রজন্মের কাছে আইয়ুব বাচ্চু ছিল প্রাণপুরুষ। স্টেইজে উঠা মাত্রই আইয়ুব বাচ্চুকে দেখে দর্শকদের যে আনন্দ-অনুভূতি, সেটি খুব কম শিল্পীর বেলায় ঘটে। কোন ষ্টেজে কোন পরিবেশে শ্রোতাদের মন বুঝে কি গান গাইতে হবে সেটি আইয়ুব বাচ্চু সবচেয়ে ভাল বুঝতেন। শ্রোতাদের বুক ভরা ভালোবাসা তাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

গীতিকার ফারুক হাসান বলেন, তার লিখা গানের শব্দ চয়ন আমাদের মনের মাঝে আলোকিত করে। তার লেখা গান, তারা ভরা রাতে, সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, এ গানগুলো তরুণ প্রজন্মদের মনে সব সময় উদ্বেলিত করে। তার গায়কী স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্য সবার মনে আজীবন চির জাগরুক হয়ে থাকবে। জীবদ্দশায় স্বীকৃতি তিনি পাননি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের দাবি, তাকে সম্মান জানানো হোক।

জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী বলেন, আইয়ুব বাচ্চু সবার প্রিয় শিল্পী ছিলেন। কাউকে না বলে হঠাৎ করে যেন চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু। এত বড় মাপের শিল্পী সহজে পাওয়া যায় না। তিনি যেভাবে গান গাইতেন, শত বছর পূর্বেও কিংবা শত বছর পরেও এমন শিল্পী আসেনি এবং আসবে না।

ব্যান্ডশিল্পী নকীব খাঁন বলেন, আইয়ুব বাচ্চু আমাদের ব্যান্ড সঙ্গীতকে জয় করেছে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছেন বিশ্বব্যাপী। তার গান এখন শ্রোতাদের মুখে মুখে। এমন শিল্পীর জন্ম একবারই হয়। এতগুলো হিট গান যা কল্পনাও করা যায় না। আমি আইয়ুব বাচ্চুর গানগুলো সংরক্ষণের দাবী জানাচ্ছি।

আইয়ুব বাচ্চু’র ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে বিন¤্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রইল। তাঁর গাওয়া গানগুলো কোটি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকুক চিরকাল চিরদিন।

 

 

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla