চন্দন দেব নাথ
ঋতুর রাণী খ্যাত শরৎকাল।নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শুভ্র কাশবন আর শিউলি ফুলের গন্ধ জানান দিচ্ছে মা আসছে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এই পুজাকে ঘিরে ছোট-বড় বয়োবৃদ্ধ সবাই সারা বছর জুড়ে কত উৎসাহ নিয়ে থাকে।মা আসছে, পুজোয় সবাই আনন্দ করবে। মন্ডপে মন্ডপে মাকে বরণ করার মহা আয়োজন।প্রতিমা শিল্পীরা ও হাতের জাদুতে মায়ের অবয়ব রুপ দিচ্ছেন।যেন সাক্ষাৎ দেবী মর্ত্যলোকে নেমে এসেছেন। কিন্তু সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়, মায়ের পুজোকে ঘিরে আমাদের সমাজে অপসংস্কৃতিতে ছেয়ে গেছে।আমরা পুজোকে উৎসবে পরিণত করে ফেলেছি।মায়ের পুজোর যে সাত্বিকতা তা আমরা ভুলে যাওয়ার পথে। অপসংস্কৃতিতে এমন ভাবে ডুবেছি, ডিজের তালে হিন্দি গানের অশ্লীল গান ছাড়া এখন পুজো হয় না, মাদকাসক্ত হয়ে উন্মাদ নৃত্য ছাড়া পুজো পালন করা যায় না।
দুর্গাপূজার যে মাহাত্ম্য তা আমরা অনেকেই তা জানি না।দুর্গাতত্ব,মহালয়াতত্ব, দেবী দুর্গার বোধন,শাক্তমতে দেবী আধ্যাশক্তি মহামায়ার আরাধনা ইত্যাদি ইত্যাদি। ধর্মীয় শাস্ত্র পড়ার প্রতি আমাদের যেমন আগ্রহ কমছে তেমনি করে বাড়ছে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ। এই ধরণের অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে, প্রাচীন কাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নৃত্য, ঢাক -ঢোল, কাঁসা, ঘন্টার আরতিতে মায়ের আরাধনায় আগ্রহ বাড়াতে হবে। পুজো কে কেন্দ্র করে শঙ্খ ধ্বনি,উলুধ্বনিসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক আয়োজন বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বোপরি সাত্বিকভাবে মায়ের আরাধনায় ডিজের ব্যবহার, প্রতীমাকে ঘিরে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা পরিহার করতে হবে। আমাদের যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তাদেরকে এসব বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। অপসংস্কৃতি দূর হয়ে, আমাদের যে বাঙালি চিরচেনা সংস্কৃতি, পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।