মাহমুদুল হক আনসারী
পরীক্ষা ছাড়া প্রমোশন হয় না। জীবনের প্রতিটি স্তরে পরীক্ষা নামক সাবজেক্ট জীবনসঙ্গী। শিশু থেকে কিশোর যুবক এবং বৃদ্ধ বয়সেও মানুষকে জীবনকে সফলকাম করার জন্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। পরীক্ষা একপ্রকারের ভয় ও ভীতি মানুষের মধ্যে তৈরি করে। একজন শিশু জীবনের শুরুতেই বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। বিদ্যালয়ে স্তরে স্তরে প্রতিবছর তাকে তার পাঠ্যপুস্তকের ওপর পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এভাবে স্কুল থেকে কলেজ , কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এরপরেও আরো যারা অধিক জ্ঞান বা সার্টিফিকেট অর্জন করতে চায় তাদের জন্য সারাটি জীবনই পরীক্ষাক্ষেত্র। মানবজীবনে বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ নামধাম খ্যাতি অর্জন করতে হলে অবশ্যই পরীক্ষা নামক সেই বিষয়কে গ্রহণ করতে হয়। মানব সমাজে পরীক্ষাটা মানুষের জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শিক্ষা অর্জন করে সার্টিফিকেট প্রাপ্তির পর কর্মজীবনে পদার্পণ করতে হলেও পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। পরীক্ষা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী কোনোভাবেই কোনো ধরনের কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারেনা।
মাতৃভূমিতে সর্বোচ্চ অথবা মাঝামাঝি ধরনের শিক্ষা শেষ করার পর আন্তর্জাতিক দেশে নামিদামি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলেও সেখানেও পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই একজন শিক্ষার্থীর নিস্তার মিলে না। কোমলমতি কিশোরদের এসএসসি পরীক্ষা পনের সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। সবগুলো মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সাথে সমমানের মাদ্রাসা বোর্ডের অপরাপর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষাও একই তারিখ শুরু হবে। সে সময়সূচি ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সবগুলো ওয়েবসাইটে প্রচারিত হয়েছে। এ পরীক্ষা কয়েকবার পিছানো হয়েছে । কোভিড ১৯ ভাইরাসের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের পড়ালেখা ক্লাস বন্ধ ছিল। ঘরে বসে অথবা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ক্লাস প্রোগ্রাম থেকে যেটুকু সম্ভব হয়েছে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
শিক্ষা কার্যক্রমে বিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন আসে। করোনাকালীন সময়ে সীমিতভাবে ক্লাস পরিচালনা করা হয়। সব শিক্ষার্থীরা ক্লাসও করতে পারেনি। তবে সুখের সংবাদ হল সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদেরকে কোভিড ১৯ এর টিকা প্রদান করতে সফলভাবে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীতে কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথেষ্টভাবে সফলতা দেখাতে পেরেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস ও বিদ্যালয়মুখী হওয়ার জন্য এটা বড় একটা সফলতা। সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় এসেছে এবং তা সফল হয়েছে। তবে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে রুটিনে পরিবর্তন এসেছে এবং যার ফলে বাস্তবিকভাবে শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে। সেটাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কর্তৃপক্ষকে মাথায় রাখতে হবে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সে সংবাদে শিক্ষার্থী অভিভাবক সকলেই আনন্দিত। তবে পরীক্ষার ধরণ পদ্ধতি গ্রহণ এবং ফল প্রকাশ যেন শিক্ষার্থীদের জন্য ভীতি ও মাথা ব্যথার কারণ না হয়।
সহজ সরলভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হোক সেটিই ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক কামনা করে। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাঠে ময়দানে উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল থাকবে। সেটা স্বাভাবিক। জনগণ ও দেশের কল্যাণে তাদের কর্মসূচি পালিত হবে সেখানে কোনো ধরনের কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি শিক্ষা এবং শিক্ষার্থী বিরোধী কর্মসূচিতে পরিণত হয় তখন সেটা আর দেশ জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। তাই পরীক্ষাকালীন সময়ে কোনো ধরনের উশৃংখল রাজনৈতিক কর্মসূচি কাম্য নয়। হরতাল ধর্মঘট অবরোধের মত সব ধরনের কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে দূরে থাকতে হবে। এককভাবে কোনো দল বা গোষ্ঠীর জন্য এ পরীক্ষা কার্যক্রম নয়। এটা দেশের সব পেশা শ্রেণী , সব মতের গোষ্ঠীর সকলেরই সন্তানেরা এসব জাতীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কয়েক দফা পিছানো সন্তানদের এসব অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা যেনো কোনোভাবেই কোনো কর্মসূচিতেই বানচাল না হয়। পরিবহণ শ্রমিক মালিক সকলেই যেনো গণ পরিবহণ এবং যাত্রী পরিবহণে আন্তরিকতার পরিচয় দেয়। শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে কোনোভাবেই পরিবহণে হয়রানি করা চলবেনা। পৃথিবীর অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদেরকে পরিবহণের ভাড়া থেকে অনেকটা ছাড় দেয়া হয়। আমাদের দেশে সেটা বলার মতো কোনো ছাত্রদের জন্য পরিবহণ ভাড়া ছাড় দেয়ার নজির নেই।
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সফলতা কামনা করছি। তাদের শারীরিক মানসিক শান্তি কামনা করছি। যে কয়দিন সময় আছে তারা যেনো তাদের নিজ নিজ পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। সব বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়কে বলব অহেতুক ভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন এবং উত্তরপত্র নিয়ে যেনো ঝামেলা করা না হয়। সহজ সরলভাবে ভয়ভীতিহীন আনন্দগন পরিবেশে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারে সেটিই শিক্ষক অভিভাবক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলেই কামনা করছে।