নিজস্ব প্রতিবেদক
মামলা হলো আইনের জগতে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। মামলার মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অধিকার পুনরুদ্ধার এবং কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়।
এই শ্রেণিভুক্ত বহু পরিবার মামলায় জড়িয়ে নিঃস্ব হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আবার যথাযথ তদারকির অভাবে কারো কারো মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। বস্তুত এসব কারণে ন্যায়বিচার পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। দেশে বিরাজমান এ ধরনের পাহাড় পরিমাণ মামলাজট নিরসনে এক দশক ধরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ অর্থে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বলতে বোঝায়, ‘এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মামলায় যেতে অনিচ্ছুক পক্ষসমূহ আদালত ব্যতীত অন্য কোনো মধ্যস্থতায় তাদের পারস্পরিক বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তি করে থাকে।’ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব হ্রাস পায়। অন্যদিকে সময় ও অর্থের ব্যয় প্রচলিত বিচারব্যবস্থার ন্যায় দীর্ঘ হয় না।
গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য। আমাদের দেশে মামলাসংশ্লিষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তিতে তিন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যেমন : বিচার বিভাগীয়, আধা বিচার বিভাগীয় এবং বিচার বিভাগবহির্ভূত পদ্ধতি। বাংলাদেশে যেসব প্রচলিত আইন রয়েছে, সেগুলোর অধীনে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিচার করাকে ‘বিচার বিভাগীয়’ পদ্ধতি বলে।
অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দ্বারা নিষ্পত্তিযোগ্য কিছু কাজকে ‘আধা বিচার বিভাগীয়’ কাজ বলে। সর্বশেষ বিচার বিভাগবহির্ভূত পদ্ধতিতে যে মীমাংসা করা হয়, মূলত সেসব কার্যক্রমকেই বলা হয় ‘এডিআর (Alternative Dispute Resolution) তথা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি।’
অন্যকথায় আদালতের প্রথাগত পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির ধারণার বিপরীতে আদালতের বাইরে কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের ভেতরে সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করার নাম ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’। এখানে মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে মামলার বিভিন্ন জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করা।
আজ (৩১ আগস্ট’২২) বুধবার দুপুরে জেলা জজ আদালত চট্টগ্রামের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রাম’র মাসিক সভায় এসব কথা বলেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমদ ভূঞা।
জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজিয়া সুলতানা’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমী, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম, সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা সিভিল সার্জন প্রতিনিধি ডাঃ মোহাম্মদ নুরুল হায়দার, চসিক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসি।
এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সরকারি কৌঁসুলি নাজমুল আহসান খান, ব্লাস্ট সমন্বয়কারী ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী ও নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, ডিল্যাক প্যানেল আইনজীবী এডভোকেট বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, সিডিডি কর্মকর্তা রনি সরকার, ঘাসফুল কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম প্রমূখ।