আল-হেলাল সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
পদায়ন সংশোধনের নামে বদলী সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের ২ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত ৭ আগস্ট পশ্চিম শরীফপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য উজ্জল চৌধুরী দুর্নীতি দমন কমিশন সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তরা হচ্ছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান ও দিরাই উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং ৩৮৯৫/২০১৬ এবং কনটেম্পট অব কোর্ট মামলা নং ৫২২/২০১৮ এর প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদায়ন সংশোধনের নামে কথিত বদলী সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন রায়হানা সিদ্দিকা রামের একজন নিরীহ প্রধান শিক্ষিকা। গত ৩১ জুলাই ৭৩৯ (০৮) নং স্মারকে রাধানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক আভারানী সরকার কে সুজানগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং পশ্চিম শরীফপুর সরকারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক রায়হানা সিদ্দিকা কে মকসদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংশোধিত পদায়নকৃত বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য আদেশ দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। জানা যায়,বদলকিৃত উক্ত দুই শিক্ষিকার মধ্যে আভারানী সরকার বদলীর জন্য একাধিকবার লিখিত আবেদন নিবেদন করলেও রায়হানা সিদ্দিকা বদলীর জন্য কোন আবেদন করেননি। মোছাঃ সেলিনা আক্তার নামের একই স্কুলের অপর একজন শিক্ষিকাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি প্রদানের লক্ষ্যে দুই কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে কথিত বদলী সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছেন বলে শরীফপুর গ্রামের সচেতন নাগরিকগন জানান। তারা বলেন,সেলিনা আক্তার প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ মামলায় লড়ে যাচ্ছেন। ৩৮৯৫/২০১৬ নং রীট পিটিশন মামলায় প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমা দায়েরের অনুমতি দিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিজ্ঞ বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রীট পিটিশনটি খারিজ করেন। পরে সংক্ষুব্ধরা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১ ঢাকায় ২৮৮/২০২০ নং এ.টি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালা এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা ৫২২/২০১৮ এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত এ.টি ২৮৮/২০ নং মামলাটি এখনও স্ব স্ব আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২৯ আগস্ট প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলাটির শুনানীর তারিখ রয়েছে। এছাড়া সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন বালার জায়গায় বর্তমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুর রহমান নিজেই আদালত অবমাননা মামলার আসামী। ঐ মামলাটির কোন রায় এখনও হয়নি। দুটি আদালতে বিচারাধীন মামলা দুটি নিস্পত্তি হওয়ার আগেই মোটা অংকের টাকা ঘুষের বিনিময়ে রায়হানা সিদ্দিকাকে বদলীর আদেশ দেয়া হয়েছে বলে শরীফপুর গ্রামের নাগরিকগন সাংবাদিকদের অবগত করেন। শরিফপুর গ্রামের অভিভাবকরা বলেন,গত ৩রা আগস্ট বুধবার বিকেল ৪টার সময় দিরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক,সিলেট থেকে দিরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি,উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শরিফপুর নিবাসী সাদেকুর রহমান চৌধুরী ছাদ মিয়া কে ঢেকে আনেন। তিনি যথারীতি শিক্ষা অফিসে গিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে বসামাত্র শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক মোছাঃ সেলিনা আক্তারকে আদেশ করেন ছায়াদ মিয়ার পায়ে ধরে সালাম করতে। যেই কথা সেই কাজ মোছাঃ সেলিনা আক্তার তাৎক্ষনিকভাবে ছায়াদ মিয়ার পায়ে পড়ে যান। এবং তাকে পশ্চিম শরিফপুর গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ছাদ মিয়া বলেন,প্রধান শিক্ষক আমি বা কেউ পয়দা করার জিনিস নয়। এটা একটা সিস্টেম এর ব্যাপার। আপনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য আদালতে মামলা করেছেন। আপনার মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে। আদালত যেদিন ফায়সালা দেবে সেদিন আপনি প্রধান শিক্ষক হবেন। এখন আমি কি করে আপনাকে প্রধান শিক্ষক বানাবো।
তিনি শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক কে বলেন,আপনি এভাবে আমাকে ঢেকে এনে অপমান না করলেই পারতেন। কারন আপনার ক্ষমতা আছে যে কাউকে যেকোনভাবে প্রধান শিক্ষক বানানোর বা চেয়ারে বসানোর অথবা যে কাউকে বদলি করার। এখানে আমাকে কেন ঢেকে আনলেন।আপনিতো মামলার ফায়সালা হওয়ার আগেই একজনকে প্রধান শিক্ষক বানিয়ে ফেললেন। ঐ মেয়েতো এমনিতেই আমার আত্মীয়। সে আমাকে হাতপায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আপনি তাকে কেন এবং কোন যুক্তিতে এ আদেশ দিলেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র এইচএসসি পাশ। শরীফপুর গ্রামের কোন অভিভাবকরা তাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মানতে চায়না। তাছাড়া সে যতদিন আমাদের গ্রামের রেজিষ্ট্রার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল ততদিন নিয়মিত ক্লাস করেনি। তার বিরুদ্ধে ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমি আইন ও জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে কিভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনে নেবো। এছাড়া সে নিজেই কিভাবে আমার হাতপায়ে ধরে প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা বলে। সে ঐ পদের জন্য মামলা নিস্পত্তি হওয়ার আগেই এত লালায়িত কেন ? আরো জানা যায়,দিরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন মীরাজুল আশেকীন নামে অপর এক শিক্ষা কর্মকর্তা। তাকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে দায়িত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র ঘুষ বানিজ্যের অসদুদ্দেশ্যে দুর্নীতিবাজ আব্দুর রাজ্জাককে জুনিয়র হওয়া স্বত্তেও বেআইনীভাবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ সুযোগে গত ৪/৫ বছর ধরে উক্ত অযোগ্য সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আইন লঙ্গন করে দিরাই উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত করেছেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে আব্দুর রাজ্জাকের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,একটি স্কুলে দুজন প্রধান শিক্ষক কিভাবে থাকে। তাই আমরা সংশোধিত পদায়নের
মাধ্যমে একজনকে বদলী করে আরেকজনকে রেখে দিয়েছি। বিগত দিনে অনেক সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেছেন এক স্কুলে দুজন প্রধান শিক্ষক কেন এই সময় আপনারা কোথায় ছিলেন। এখন আমরা একজনকে বদলী করতেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল। সেলিনা কবে কখন কোন আদেশে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আরো জানা যায়,কথিত সংশোধিত পদায়নের আদেশের ভিকটিম প্রধান শিক্ষক রায়হানা সিদ্দিকা বদলীকৃত মকসদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের আগেই পশ্চিম শরীফপুর সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত থাকাবস্থায় একই বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক প্রীতিলতা দাসকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে নিজের ছুটি মঞ্জুর করে নেন। সহকারী শিক্ষা অফিসার মীরাজুল আশেকীন বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধান শিক্ষক রায়হানা সিদ্দিকা ছুটিতে আছেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রীতিলতা দাসকে দায়িত্বপালন করতে দেখা যায় স্বীকারে পরিদর্শন খাতায় স্বাক্ষর করে আসেন। কিন্তু ৬ আগস্ট শনিবার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রীতিলতা দাসকে হুমকী ও ধমক দিয়ে সেলিনাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেন। আব্দুর রাজ্জাকের হুমকির কারণে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুর রহমান বলেন, আব্দুর রাজ্জাক কেন, কোন উদ্দেশ্যে শিক্ষিকা সেলিনা আক্তারকে ছায়াদ মিয়ার কাছে মাফ চাওয়ায় এবং এক লক্ষ টাকা ঘুষ কার কাছে কিভাবে চেয়েছে নিয়েছে তা আমি জানিনা। এর জন্য কোন অভিযোগ হলে এর কৈফিয়ত সে দেবে। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ ও বর্তমান বিচারাধীন ট্রাইব্যুনালের মামলায় সেলিনা আক্তারকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সরাসরি কোন নির্দেশ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,না এ ধরনের কোন নির্দেশ নেই। আদালত অবমাননা মামলাটি নিস্পত্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে
তিনি বলেন,না এ মামলাটিও নিস্পত্তি হয়নি। তাহলে দুটি মামলা যেখানে বিচারাধীন সেখানে কেন বদলীর আদেশ দিতে গেলেন জানতে চাইলে তিনি
বলেন,সুনামগঞ্জ ২ নির্বাচনী এলাকা দিরাই শাল্লা আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য দীর্ঘদিনের ঝামেলাগুলো নিস্পত্তি করার জন্য বলায় আমি সংশোধিত পদায়ন করেছি। এমপি ড.জয়াসেন গুপ্তা কি প্রধান শিক্ষক রায়হানা সিদ্দিকাকে বদলীর জন্য কোন ডিও লেটার বা মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন,না তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোন শিক্ষককে বদলী করার কথা বলেননি বা ডিও লেটারে উল্লেখ করেননি। তাহলে কেন এবং কোন যুক্তিতে একজন প্রধান শিক্ষককে আবেদন না করার পরও বদলী করতে গেলেন জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ঐ শিক্ষা কর্মকর্তা। নিরীহ শিক্ষকরা বলেন,এ দুজন শিক্ষা অফিসার নামের কসাই। এরা চলমান দুর্য়োগে বা আগের করোনাজনিত কারণে যেখানে বদলীর আদেশ মানবিক ও প্রশাসনিক কারণে বন্ধ সেখানে এরা অতি উৎসাহী হয়ে এক লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে একজন নিরীহ প্রধান শিক্ষকের সাথে অমানবিক আচরন অব্যাহত রেখেছে। তথাকথিত বদলীর আদেশ অবিলম্বে বাতিল না করলে আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য নিরীহ প্রধান শিক্ষক রায়হানা সিদ্দিকার পক্ষ থেকে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীফপুর গ্রামের সচেতন নাগরিকরা।