চট্টগ্রামের বিভাগীয় ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা। আইন মেনে কাজ করতে গেলেই বিপদ। সরকার-নির্ধারিত ফি জমা দিয়েও ঠিক সময়ে মিলছে না সাধারণ বা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট। বরং দালালদের শরণাপন্ন হলে ঠিক সময়ে ঠিকই মিলছে সেবা।
পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ভুক্তভোগী পূর্ববাংলাকে বলেন, দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে সরকারি নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পাসপোর্টের কাগজপত্র জমা দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অফিসে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাগজপত্রে ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হলে কাগজপত্র নিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়। সচেতন লোকেরা বলছেন, দালালদের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতে ইচ্ছে করেই পরিস্থিতি জটিল করে রাখা হয়েছে।বিষয়টি তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।
আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে,পাসপোর্ট অফিসে দালালদের সংঘবদ্ধ একটি চক্র রয়েছে। ওই দালালদের দিয়ে করলে সবকিছু ঠিকঠাক মতো হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ পাসপোর্ট অফিসে আসলে দালাল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে পদে পদে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিস ঘিরে ৯০ থেকে ১০০ জনের সংঘবদ্ধ একটি দালালচক্র রয়েছে। ওই দালালদের মারফতে সব কিছু হয়। এখন দালালরা আগের মতো পাসপোর্ট অফিসে অবস্থান না করলেও বাইরে থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সবকিছু লেনদেন করে।
এইসব দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট না করলে নানান ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে মাসের পর মাস ঘুরাতে থাকে। দালালদের সরকারি নির্ধারিত ফি’র সাথে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি দিলে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাসপোর্ট হাতে এনে দিচ্ছে।
সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের একটি ভাগ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে চলে যায়। শুধু তাই নয়, অভিযোগ রয়েছে— চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ সেবাগ্রহীতারা মাসের পর মাস ঘুরে দালালদের শরণাপন্ন না হয়ে কাগজপত্র জমা দিতে পারলেও দ্রুত পাসপোর্ট ডেলিভারি পেতে প্রত্যেক সেবাগ্রহীতাকে ২ হাজার ১ শ’ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। টোকেন না নিলে পুলিশ ভেরিফিকেশন জটিলতায় আটকে যাচ্ছে পাসপোর্ট।
এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিস থেকে দেয়া স্লিপে উল্লেখ করা নির্ধারিত সময়ে অনেকেই পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ বলেছেন তাদের ১২ দিন অতিরিক্ত সময় লেগেছে। আর সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ পাসপোর্ট করার সময় দালাল বা অন্যের সহযোগিতা নিয়েছেন। আবার তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই দালালের সহযোগিতা নিয়েছেন। ‘
পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক বলেন, কারা দালাল, কারা টাকা (ঘুষ) নেয় তাদেরকে আপনারা ধরে দিন । কয়েকজন অফিস স্টাফ ও দালালদের নাম বললে তিনি কয়েকজনকে চিনেন বলে জানান।দালালদের ধরে দেবার দায়িত্ব কী সাংবাদিকদের ? তিনি এমনভাবে বললেন তথ্য নেয়া ও জনগণকে জানানোর জন্য সংবাদ প্রকাশ করার চেয়ে দালালদের ধরে আনার কাজই যেন সাংবাদিকের আসল কাজ।