জমজ সন্তানের রিপোর্ট দিয়ে রোগী পরিবারকে টেনশানে রাখে ওরা
ভুল রিপোর্টে স্বামী স্ত্রী ও আত্নীয় স্বজন টেনশানে ছিলেন । সন্তান প্রসবের পর রোগী ও সংশ্লিষ্টরা বুঝলেন ওই রিপোর্টটিই ছিল ভুল ।এই রকম অসংখ্য ভুল রিপোর্ট রোগীরা হজম করলেও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের কিছুই হয় না বরং তারা লাভে ও লোভে চালাচ্ছে এই রোগ লালন কেন্দ্র। আনোয়ারার বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাটে ছৈয়দ শপিং মলের ২য় তলায় এসএমএ পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন কোন অনুমোদন ছাড়াই মানুষের রোগ নির্ণয়ের নামে চালাচ্ছে এই প্রতারণামূলক ব্যবসা।
জানা গেছে, বোয়ালিয়া গ্রামের মো. ইউসুফের স্ত্রী রহিমা বেগম অসুস্থতা বোধ করলে গত ১০ মার্চ এসএমএ পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নিয়মিত চিকিৎসক ডাক্তার শ্রাবনী বড়ুয়ার কাছে নিয়ে যায়। চিকিৎসক তাদের ল্যাবে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে বলে। চিকিৎসকের কথা মতো রোগী আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে। তারা রিপোর্ট দেখে জানান রোগী গর্ভ ধারণ করেছে।
৩০ শে জুন আবারো একই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের চিকিৎসকের কাছে গেলে তারা আবারো আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে রিপোর্ট দেয় রোগীর গর্ভে জমজ বাচ্চা রয়েছে। দুইবার দুই ধরণের রিপোর্ট আসায় বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এসএমএ পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লোকজন জোর দিয়ে বলেছে তাদের রিপোর্টে কোন সমস্যা নেই।
পরে অন্য একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গিয়ে পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি করলে রোগীর একটি বাচ্চার রিপোর্ট আসে। গত ৬ জুলাই ওই রিপোর্ট মতে একটি কন্যা সন্তানও জন্ম হয়। তাদের ভুল রিপোর্টে ওই দম্পতির চার মাসের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে । তাদের দেয়া ভুল রিপোর্টে আর্থিক ও মানসিক ভাবে রোগী সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক চালু করতে গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে ১২ টি শর্ত পূরণ করতে হয় তার একটিও নেই এটিতে। তবু প্রতিদিন শতশত মানুষের সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে এসএমএ পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টার । এভাবে দীর্ঘ দিন ধরেই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটি সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে প্রতারিত করে আসছে বলে জানা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জানায়,ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটির কোন অনুমোদন নেই। ভুল রিপোর্টের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
জানা যায়, অনুমোদনের হেলথ লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ,বায়ু ক্যামিস্ট্রি, এক্স-রে টেকনেশিয়ান সনদ,প্যাথলজি টেকনেশিয়ান সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, সিভিল সার্জনের অনুমোদন সনদ, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন,ইনকাম টেক্স সনদ,পর্যাপ্ত পার্কিং জায়গা ও রেড়িয়েশন নিয়ন্ত্রক ব্যাজসহ প্রয়োজনীয় কার্যাদি নিশ্চিত করে আবেদন করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উল্লেখিত বিষয়াদি নিশ্চিত করে লাইসেন্স প্রদান করে। কিন্তু এসএমএ পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের উল্লেখিত কোন কাগজপত্রও নেই।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে আনোয়ারার এসএমএ পুপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টার লাইসেন্সের জন্য কোন আবেদনই করেনি।
এসএমএ পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পরিচালক হাসান আলীকে রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ রকম রিপোর্ট মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে, যান্ত্রিক কারনে অনেক সময় গর্ভের বাচ্চা দুইটা দেখা যায়।আমরা আগামী বিষুদবার ডাক্তার ও রোগীর স্বা্মী মুহাম্মদ ইউসুফ আলীর সাথে বৈটকে বসব।ওই রিপোর্টের স্বাক্ষর কারী ডাক্তার জান্নাতুল ফৈরদোস ও রিপোর্ট তৈরীকারী ল্যাব টেকনিশিয়ানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি তাদের নাম্বার নেই বলে জানান।ওই উল্লেখিত ব্যাক্তিদের সাথে কথা বললে জানা যেত তাদের মেশিন, ক্যামিক্যাল ব্যবহারের তথ্য।তারা বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ডাক্তার জান্নাতুল ফৈরদোস ও রিপোর্ট তৈরীকারী ল্যাব টেকনিশিয়ানের নাম্বার নেই বলে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মামুনুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অদক্ষ টেকনেশিয়ান দ্বারা আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট তৈরী করার করালেই এ সমস্যা হয়। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।