বাংলাদেশে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানের মিলিত একটা অসাম্প্রদায়িক জাতিরাষ্ট্র। এদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯২ ভাগ মুসলমান। এদেশ গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদী একটি রাষ্ট্র। আমরা মানুষ। আমরা মানবতাবাদী। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ‘মানবতার মা’। আমাদের এই বাংলায় ধর্ম পরিচয়ের চেয়েও বড় পরিচয় আছে মানুষের। লিঙ্গ বর্ণজাত বিশ্বাস নির্বিশেষে মানুষ দু’রকম, এক কট্টরপন্তী, আরেক উদারপন্তী। একদল অসহিষ্ণু, আরেকদল সহিষ্ণু। একদল অন্ধত্ব মানে, বর্বরতা মানে, আরেক দল যুক্তি মানে, প্রগতি মানে, সভ্যতা মানে। একদল পেছনে যেতে চায়, আরেকদল সামনে। এক দল ধ্বংস চায়, আরেকদল নির্মাণ। একদল ব্যক্তি স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না, আরেক দল করে। সংঘর্ষ আসলেই এই দুই দলে।
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘিরে একটি অপশক্তির, অপদলের জন্ম হয়েছিল। সেই অপশক্তির পৃষ্ঠপোষক আমাদের দেশে বিএনপি নামক একটি দল। এ দলটি ভাষা দিবস, ৬ দফা-১১ দফা, গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন, ৭ মার্চ ১৯৭১, ১০ জানুয়ারি ১৯৭২, জাতির পিতার জন্মদিন, জাতীয় শোক দিবস কোন কিছু মানে না। তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কিনা তাও প্রশ্নবিদ্ধ। বাংলাদেশ যে, রূপকথার ফিনিক্স পাখির মত ধ্বংস থেকে সৃষ্টি করছে তা ঐ রাজনৈতিক দলটি দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের হাতে। যুদ্ধের সময় ১ কোটি মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এ যুদ্ধে সম্ভ্রম হারান ২ থেকে ৩ লাখ মা-বোন। দেশের ৩ কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে আশ্রয়হীন হয়েছিল। পাকিস্তানি বর্বরবাহিনী ‘মানুষ নয়, মাটি চাই’ এ নীতিতে তারা বাংলাদেশে চালিয়েছে গণহত্যা। তারা সেই ১৯৭১ এ কোটি কোটি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। তারপরও সেই ফিনিক্স পাখির মত বাঙালিরা জয়লাভ করেছে। ৯৩ হাজার পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছে, পরাজিত করেছে তাদের দোসর, রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের। ১৯৭১ এর ৭ মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ও নির্দেশ জাতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে পাকিস্তানিদের কবর রচনা করেছিল এই বাংলায়। সেই ১৯৭১ এর যুদ্ধে পাকিস্তানীদের পক্ষে ছিল সাম্রজ্যবাদী শক্তি যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েও বাংলাদেশের বিজয় ঠেকাতে পারেনি। পরাজয়ের গ্লানি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’। বঙ্গবন্ধু’র বাংলাদেশ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে, বাঙালি বীরের জাতি, ১৯৭১ এ পশ্চিমাদের পরাজিত করে মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেছে। পরাজিত শক্তি ১৯৭৪ এর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, দেশে অরাজকতার চেষ্টা করেছে সবশেষে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে এবং ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চারনেতাদের হত্যা করেছে। তারপরও বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে দেশের জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর সেই পরিকল্পনা সফল করতে দেয়নি পরাশক্তি। জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলার অর্থনৈতিক মুক্তির পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ক্রয় করেছে , সেই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। পশ্চিমাদের ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ দুঃসাহসের নাম ‘পদ্মা সেতু’। পাঠকদের জন্য বরেন্য মানুষদের কয়েকটি উক্তি এখানে তুলে ধরছি ১) ‘জীবনে যারা কিছুই করতে পারে না, তারাই সবকিছুর সমালোচক হয়, কেননা অহেতুক সমালোচনা ব্যর্থ লোকদের হাতিয়ার’, ডেইল কার্নি। ‘সম্পূর্ণ বিষয় না জেনে কথা বলা এবং অহেতুক নিজের প্রশংসা করা বোকার লক্ষণ’, চানক্যি পণ্ডিত। ৩) ‘স্বপ্ন সেটি নয়, যা আমরা ঘুমন্ত অবস্হায় দেখি, স্বপ্ন সেটিই যা আমাদের জাগিয়ে রাখে’ ড. আবদুল কালাম। ৪) ‘আমি স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হইনি, স্বপ্নকে সার্থক করার জন্য নিন্দা বর্জন করেছি’ গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই। ৫) ‘সে ব্যক্তিই সফল হয় যে স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য অবিশ্রান্ত চেষ্টা চালিয়ে যায়, কখনো থেমে না থেকে’ নেলসন ম্যান্ডেলা। ৬) ‘তিনি স্বপ্ন দেখেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গরা সমান মর্যাদা পাবে’ মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং। উল্লেখিত ৬ জনের উক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা তাদের রাজনৈতিক জীবনে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন। জাতির পিতা বাঙালি জাতির জন্য একটি দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তিনি ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলার স্বপ্ন এঁকেছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের কাছে তিনি জীবন দিলেন। সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দিল না ঘাতক।
জাতির পিতার শাহাদাতদের ২১ বছর পর জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা পিতার রেখে যাওয়া আদর্শ ও পথ ধরে তিনি হাঁটতে হাঁটতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার সোনার মানুষর জন্য স্বপ্ন একে একে বঙ্গবন্ধুর বাংলাকে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলায় পরিণত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। তিনি রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করে রূপকল্প-২০৪১ এর দিকে হাটছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ উপস্হাপন করে একে একে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথেও হাটাছেন। বাংলাদেশকে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি, স্মৃতি দিয়ে ঘেরাও দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। বাংলাদেশ পদ্মা সেতুই নয়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল ২০২২ সালের যে কোন সময় শুভ উদ্বোধন করবে। চলমান অন্যসব মেগাপ্রকল্প ও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের গভীর সমুদ্র বন্দর সহ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলমান। বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে মহাসড়ক ধরে সামনে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের বিষ্ময় ও উন্নয়নে রোল মডেল। আমাদের প্রতিবেশি ভারতের ফারাক্কা বাধ ও তিস্তার পানির বন্টন চুক্তি ঝুলে থাকায় বাংলাদেশ বন্যার কবলে পড়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই প্রবহমান পদ্মার ওপর ২০১১ সালে সেতু বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেতুটি সম্পূর্ণ হতো ২০১২ সালে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি ছিল শেখ হাসিনা দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের জন্য পদ্মা সেতু বানিয়ে দেবেন। তখনকার সেতুমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনে গত ১৫ জুন ২০২২ এ ‘পদ্মা সেতু বিশ্ব ব্যাংকের সেই অভিযোগ ও আজকের বাস্তবতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি জানিয়েছেন, বিশ^ব্যাংক সহ অন্যদের ভূমিকার কথা এবং সেই ২০১৩ সালেই জানিয়েছিলেন আমাদের দেশের নোবেল প্রাপক অর্থনীতিবিদসহ অনেকেই চেয়েছিলেন যেন পদ্মা সেতু শেখ হাসিনা না বানাতে পারেন। শেখ হাসিনা যে জাতির পিতার কন্যা সে কথা নোবেল প্রাপকরা ভুলে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মায় ফুল ফোটাতে সময় নিয়েছেন প্রায় ১০-১১ বছর। সব বাধা পেরিয়ে পদ্মার ফুলের গন্ধ সমগ্র বাংলাদেশিকে উৎফুল্ল করলেও ফুলেল গন্ধ অনেকেই সহ্য করতে পারছে না কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের নিন্দায় তাদের গায়ে জ¦ালাপোড়া হয়েছে। ঐ সমস্ত নিন্দুকদের শরীরে ‘শান্তি মলম’ লাগিয়ে দিলে হয়তো তাদের জ্বালাপোড়া কিছুটা কমতেও পারে। ১৯১৩-১৯১৪ সালে পাকশী এবং ভেড়া মারার মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত প্রমত্তা পদ্মার ওপর ১৩/১৪টি গার্ডার বানিয়ে হার্ডিজ ব্রিজ বানিয়েছিলেন সেই ব্রিটিশের লর্ড হার্ডিঞ্জ, তিনি ছিলেন ভারতের গভর্ণর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর উপর ৬.১৫ কিলোমিটারের সেতু বানিয়েছেন আগামী প্রজন্মের মানুষের জন্য। এই সেতু যারা পার হবেন সবাই কৃতজ্ঞ থাকবেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার কাছে। কারণ তিনি স্বদেশি বিনিয়োগে বানিয়েছেন এই সেতু, কারোর দয়ার ওপর নির্ভর না করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বেঁচে থাকলে আওয়ামী লীগ আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে অদুর ভবিষ্যতে আরিচা নগরবাড়ীতে আরেকটি পদ্মা সেতু অথবা সুজানগরে আরেকটি যমুনা সেতু বানিয়ে দিলে উত্তরবঙ্গের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বাড়বে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিলেন বাংলাদেশ পারে। তিনি যদি আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে দেশবাসীর সমর্থন পান তাহলে দেখবো আজ যাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে দেশের উন্নয়নে আগামীতে তারা আরো দিশেহারা হয়ে পড়বে এবং তারা ঘুম নিদ্রা ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে শান্তিতে ঘুমানোর জন্য সাথে ‘শান্তি মলম’ নিয়ে যাবেন। বীর বাঙালির প্রিয় বাংলাদেশ বিশ^কে অবাক করে দেখাবে বাংলাদেশ পারে-পারবে আরো অনেক কিছু। প্রিয় দেশবাসী আগামীর প্রজন্ম তোমরা চেয়ে দেখ বাংলাদেশের দিকে বাংলাদেশ আরো বিষ্ময় নিয়ে আসছে-সামনে।মো. আবদুর রহিম, সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ।