মো. নাঈম হাসান ঈমন
পেশাগত কাজ করতে গিয়ে প্রায় সন্ত্রাসীদের মারধরের শিকার এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে সাংবাদিকরা। সাংবাদিক সুরক্ষায় দেশে বিশেষ কোনো আইন নেই। সাংবাদিক সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের এখন আর কোন বিকল্প নাই। গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য, হাসপাতাল, মামলার কপি ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৩ জুন ‘২২ তারিখ বিকেলে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার চল্লিশকাহনিয়া গ্রামের বাড়ি থেকে বরিশাল ফিরছিল দৈনিক শাহনামার প্রধান বার্তা সম্পাদক, বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক, বরিশাল অনলাইন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানী। তার মাকে স্থানীয় বাজার থেকে খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে দিয়ে জাহিদের দোকানে গিয়ে বসেন নোমানী। চায়ের অর্ডার দেন তিনি। চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার আগেই দেলোয়ার, আলম, ফজলে হক, কালু মোল্লা, হোসেন আলী, ফেরদৌস, আমিনুল ও দুলালের নেতৃত্বে একদল খুনী চক্র চাইনিজ কুড়ালসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে সাংবাদিক নোমানীর উপর হামলা করে। নোমানীর মাথায় চাইনিজ কুড়াল দিয়ে খুন করার জন্য কুপিয়েছে খুনিরা। কেন এই খুন করার পরিকল্পনা : চল্লিশকাহনিয়া হাজি বাড়ি মসজিদের অবৈধ কমিটি ও উল্লেখিত চক্রটি মসজিদ সংলগ্ন কালেমায়ে তাইয়েবা, আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা একটি গেট ও অর্ধশত বছরের একটি কবরস্থান উচ্ছেদের জন্য দেলোয়ার , আলম, ফজলে হক, কালু মোল্লা, হোসেন আলী, ফেরদৌস, আমিনুল ও দুলালসহ চক্রটি কাজ করছিল। এই খুনি চক্রটি প্রশাসনের নিকট আবেদন করে কবর উচ্ছেদ ও কালেমায়ে তাইয়েবা, আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা একটি গেট ও অর্ধশত বছরের একটি কবরস্থান উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ ২২ তারিখ স্থানীয় নীরিহ সাধারন মানুষ ও মুসুল্লীরা সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ করেন। এই সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভের সংবাদ ৩১ মার্চ ‘২২ তারিখ প্রকাশ করেন সাংবাদিক মামুনুর রশীদ নোমানীর সম্পাদিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বরিশাল খবরে। সংবাদটি প্রচারের পরই খুনি চক্র এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সাংবাদিক নোমানীকে খুন করারজন্য দফায় দফায় মিটিং করে । বরিশাল খবরে সংবাদ প্রকাশের পর ঐ খুনি চক্রটি কালেমায়ে তাইয়েবা, আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা গেট ও অর্ধশত বছরের কবরস্থান উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সাংবাদিক নোমানীকে খুন করার মিশনে নেমে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জুন ‘২২ তারিখ সাংবাদিক নোমানীকে খুন করার জন্যই চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে নোমানীকে। এ সময় বাজারে থাকা তার মা ও বোন নোমানীকে বাচাঁতে এলে তাদেরকেও মারপিট ও কোপানো হয়। সাংবাদিক নোমানীর মাতা এতে গুরুতর আহত হয় এবং তাকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলা হয়। সাংবাদিক নোমানীর মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে খুনি চক্র উল্লাস করে চলে যায়। রাখে আল্লা মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে। আল্লাহ নোমানীকে বাচিঁয়েছেন। নোমানীর মাথায় চাইনিজ কুড়ালের কোপের আঘাতের ছবি দেখলেই স্পষ্ট বুঝা যায় খুনিরা কত ভয়ংকর। ঘরটার পর পরই স্থানীয় লোকজন সাংবাদিক নোমানীকে প্রথমে রাজাপুর তারপরে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। করা হয় অপারেশন। হামলার পর অজ্ঞান হয়ে পড়েন নোমানী। বার বার জ্ঞান ফিরে পান আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকদের সফল অপারেশন ও দ্রুত চিকিৎসায় জ্ঞান ফিরে নোমানীর। রাত দশটার দিকে সংবাদ ছড়িয়ে পরে সাংবাদিক নোমানীর মৃত্যু হয়েছে। শত শত লোকজন ভিড় করে হাসপাতালে। আল্লাহর রহমত, মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। যারা সাংবাদিক নোমানীকে দেখেছেন তারাই কেঁদেছেন রক্ত আর আঘাতের ভয়াবহতা দেখে। আঘাতের ভয়াবহতা দেখেই লোকজন মনে করেছিল নোমানী আর নেই এই পৃথিবীতে। নোমানীকে গত ৩ জুন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবং গত ৭ জুন শেরেবাংলা থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তাকে তার স্বজনরা ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। নোমানী বর্তমানে সার্জারী বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস এম নজরুল ইসলাম ও নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুহিনুজ্জামান মুহিনের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথার আঘাত স্থানে দশটি সেলাই রয়েছে। ইনফেকসন হওয়ার কারনে এখনো ক্ষতস্থানে নিয়মিত ড্রেসিং করাতে হয় ।
এদিকে সাংবাদিক নোমানী জাল টাকার একটি চক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহ করে আসছিলেন। জাল টাকা ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে যায়। তারাও খুনি চক্রের সাথে হাত মিলায়। এছাড়া স্থানীয় ছাগল চোর, গরু চোর চক্রটিও খুনি চক্রের সাথে যোগ দেয়। সাংবাদিক নোমানী এলাকায় বিদ্যুৎ, বেড়িবাধঁ সহ এলাকার উন্নয়ন ও আইনশৃংখলার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তার উদ্যোগে একাধিকবার রাজাপুর থানা পুলিশকে নিয়ে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও রাতে পাহারা দেয়ার জন্য মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছেন।
এছাড়া এলাকায় একটি পাঠাগার স্থাপন করেছেন। এসব সহ্য হয়নি খুনিচক্রদের। এছাড়া চল্লিশকাহনিয়া মানব কল্যান সমিতির লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ, ছাগল ও গরু চোর, জাল টাকা ব্যবসায়ী, কালেমায়ে তাইয়েবা, আল্লাহু ও মুহাম্মদ লেখা গেট ও অর্ধশত বছরের কবরস্থান উচ্ছেদের বিরুদ্ধে ছিলেন সব সময় সোচ্চার। সত্য লিখনী, সত্য সংবাদ প্রকাশই কাল হয়ে দাড়ায় সাংবাদিক নোমানীর। নোমানীকে খুনের জন্য হামলার ঘটনায় নোমানীর বোন লিপি রাজাপুর থানায় নামধারী ৮জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা নোমানীকে কুপিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। আসামী দুলালের স্ত্রী মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য অভিযোগ এনে নোমানীর পরিবারের তিনজন ও হামলার পরে নোমানীকে হাসপাতালে দেখতে আসা দুজন এবং ঘটনা স্থলে না থাকা ৩জনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি কাউন্টার মামলা দায়ের করেছে। এদিকে আসামী যারা বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন নেননি এবং যারা নিয়েছেন তারা নোমানীর বাড়িতে গিয়ে নোমানীর মাকে বাড়ি ঘর জ্বালি দেয়ার হুমকি দিয়েছে। হুমকির পরে প্রশাসনকে জানানো হয়। হুমকির ঘটনায় নোমানীর মাতা রাজাপুর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন।