মোশাররফ হোসেন মুসা
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নব্য নির্মিত পদ্মা সেতু ২৫ জুন তারিখে উদ্বোধন করা হয়। সরকারি দল বলছে- নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ একটি সাহসী পদক্ষেপ। বিরোধী দল বলছে- সেতু নির্মাণ কারোর পকেটের টাকায় হয়নি। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হয়েছে। উভয় পক্ষের কথায় ” মালিকানা বোধ’ ফুটে উঠেছে। ” আমাদের দেশ আমরা চালাবো” এমন প্রতিজ্ঞাকে সামনে করে দেশ স্বাধীন করা হয়েছে। বিদেশের টাকায় দেশ চালাবো এমন অঙ্গীকার করে মুক্তিযুদ্ধ করা হয়নি। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রকৃত মালিকানার পরিচয় রেখেছেন। ঠিক একই ভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য ফেরৎ পাঠিয়ে মালিকানা প্রতিষ্ঠার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। আবার বিরোধী দল জনগণের ট্যাক্সের কথা বলে পরোক্ষভাবে মালিকানার কথাই বলছেন। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অসচেতন ( কিংবা তাদেরকে অসচেতন করে রাখা হয়েছে)। তারা যদি এ সুযোগে জানতে পারে দেশের উন্নয়ন হয় তাদের টাকায়- এটাও শুভ লক্ষণ( অধিকাংশ মানুষ মনে করে সরকারের টাকা তাদের টাকা নয়, অতএব সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল)। আবার যারা বলেন – সরকারি দল – বিরোধী দল কারোর মধ্যেই মালিকানা বোধ নেই, তারা প্রমাণ করে দেখাক তাদের মধ্যে মালিকানা বোধ আছে। তারা শুধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, আর সরকারি দলের কাছে দাবিনামা পেশ করে দায়িত্ব শেষ করছে। দাবি করা মানে সরকারি দলের মালিকানা মেনে নেয়া। নাগরিকের মধ্যে ‘মালিকানা বোধ’ জাগ্রত হয় দুইভাবে, তথা দীর্ঘকাল স্বশাসনের মাধ্যমে গড়ে উঠে কিংবা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। এখানে জাপান দেশ একটি উদাহরণ হতে পারে। এ দেশটি কখনো বিদেশি শক্তির অধীনে শাসিত হয় নি। ফলে সেখানে মালিকানা বোধ গড়ে উঠেছে। সেখানে পুলিশ না থাকলেও দেশ চলবে। সেখানকার নাগরিকেরা স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনে সদা ব্যস্ত। রাজনৈতিক নেতা ও ধনীরা বিদেশে টাকা পাচার করে না। আমাদের দেশ দীর্ঘকাল ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনে ছিল। অামরা সকল সময় নিজের দেশকে পরের দেশ মনে করেছি( এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটিতে বিশদ বর্ণনা আছে)।
একটি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পর জনগণের মধ্যে মালিকানা বোধের তীব্র তাড়না লক্ষ্য করা যায়। তারা চাঁদা তুলে স্কুল, ক্লাব, রাস্তাঘাট, সাঁকো নির্মাণ শুরু করে। এটি শুধু মালিকানা বোধের বিষয় ছিল না, জাতি গঠনের উন্মাদনাও ছিল। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল পদক্ষেপের কারণে জনগণের উন্মাদনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এখন অার নতুন করে যুদ্ধ হবে না, তবে সাংস্কৃতিক অান্দোলন শুরু করা যেতে পারে। সেই অান্দোলনে অবশ্যই ভুল স্বীকারোক্তি ও ক্ষমা চাওয়ার কর্মসূচি থাকতে হবে৷ লেখক: গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।