সবুজ অরণ্য
কখনো মনের আনন্দে প্রাণ খুলে গান গেয়ে উঠে। কখনো তাকিয়ে থাকে রিক্সার টুনটান শব্দের দিকে। কখনোবা আবার ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে থাকে বন্ধ দোকানের দাওয়ায় কিংবা রাস্তায়।
কারো কাছে কোন আব্দার নেই সে কিশোরীর। নেই স্বার্থের প্রয়োজনে ঠকবাজিও। প্রচন্ড খিদে পেলে অথবা কখনো জঠরের বেদনায় নিরবে দু’চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পরে নিঃশব্দে। পরক্ষণেই খিলখিলিয়ে হাসিতে যেন উপহাস করে স্রষ্টার সৃষ্টিকে।
মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীটি দীর্ঘ দিন ধরে নগরীর চান্দগাঁও থানার কাজীর হাট, চর রাঙ্গামাটিায়া স্কুল সড়কের বন্ধ দোকান, ফুটপাত আর রাস্তাকে বেছে নিয়েছে তার বসতিস্থল হিসেবে।
এভাবেই আজ কেটে গেলো প্রায় দু’সপ্তাহের বেশি সময়, সদ্য কৈশোর অবতীর্ন করা মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীটির।
বলতে পারেনা নিজের নাম অথবা ঠিকানা। তবে কথা বলার ছলে যতটুকু বোঝা যায় মোটামুটি শিক্ষার আলোয় আলোকিত ছিলো তার জীবন।
প্রাইমারি চিকিৎসক ও স্থানীয় সুব্রত মেডিকেল হল’র স্বত্বাধিকারী দেবাশীষ দেব (দেবু) জানান, ‘আজ প্রায় পনের-ষোল দিন ধরে মেয়েটিকে দেখছি। কখনো ভিক্ষা কিংবা খাবারের জন্য বিরক্ত করেনা কাউকে, যে যা দেয় তা খায়ে চুপচাপ বসে থাকে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু একজন প্রাইমারি চিকিৎসক হিসেবে আমার যতটুকু মনে হয়েছে মেয়েটির মনের উপর খুব দখল গিয়েছে। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ওর এরকম অবস্থা হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা পেলে সেও ফিরে আসতে পারবে সমাজের মূল স্রোতধারায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে বেশ কজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আজ অনেকদিন ধরে মেয়েটিকে আমরা দেখছি। কিন্তু কখনো কাউকে বিরক্ত করতে দেখিনি। মেয়েটিকে দেখে খুব কষ্ট লাগে। আবার ভয় হয় এলাকার মাদকাসক্ত যুবকদের, আল্লাহ না করুক তাদের কারণে যদি মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীটির জীবন বিপন্নতায় পরে। আমরাও চাই কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা তাকে তাদের কাছে দ্রুত ফিরিয়ে নিতে পারুক।
সমাজের মানবিক মানুষেরাই আজ মানসিক ভারসাম্যহীন কিশোরীটির বেঁচে থাকার একমাত্র আশার প্রদীপ। তাঁরা চাইলেই মেয়েটি ফিরে পাবে তার নিজস্ব ঠিকানা।
সমাজের মানবিক মানুষদের একজন এগিয়ে এলেই কিশোরীটি খুঁজে পাবে সুন্দর জীবনের স্বাদ।