ভাম্যমান প্রতিনিধি
চট্টগ্রামে নগরী জুড়ে নিত্যদিনের যানজটে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অক্সিজেন মোড় থেকে পতেঙ্গা কাঠগড় বাজার এবং কর্নেলহাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত পুরো নগরীতেই সড়কে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য। নিউমার্কেট মোড়, জুবিলী রোড, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকমুণ্ডি লেন, শাহ আমানত সিটি করপোরেশন মার্কেট, গোলাম রসুল মার্কেট, চকবাজার, ষোলশহর, অক্সিজেনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকার অবস্থা আরো ভয়াবহ। এসব এলাকায় ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় যানবাহন থেকে যাত্রী ও মালামাল ওঠানামা হয়ে থাকে সড়কে।
আবার যানবাহন সড়কে রাখা হয় এলোপাতাড়িভাবে। এর পাশাপাশি শহর জুড়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান থাকায় সড়ক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। নগরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বৈধ বাস ও ট্রাক টার্মিনালের অভাবে শহরের তিনটি প্রবেশমুখে গড়ে উঠেছে অবৈধ টার্মিনাল। সেসব স্থানে পুলিশ ও মাস্তানদের টাকা দিয়ে যত্রতত্র বাস, অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার পার্কিং করে রাখা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ও ইপিজেডমুখী সবগুলো সড়কেই রয়েছে অসহনীয় যানজট। নগরীতে পর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা ছাড়াই একের পর এক গড়ে উঠছে নতুন নতুন মার্কেট ও হাসপাতাল।
নগরীর জামাল খান, কাজীর দেউড়ি, চকবাজার, চেরাগী পাহাড়, বৌদ্ধ মন্দির, লাভ লেন সড়ক, রাইফেল ক্লাব, ডিসি হিল, জুবিলী রোডে যানজট নিয়মিত ঘটনা। যানজটের কারণ জানতে চাইলে সিএমপির ডিসি ট্রাফিক (দক্ষিণ) বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব এলাকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই বেশ কিছু মার্কেট রয়েছে, যেখানে নেই পার্কিং ব্যবস্থা। মার্কেটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা রাস্তার ওপর গাড়ি রাখেন। মার্কেটের দোকানপাটের মালামাল রাস্তায় ওঠানামা করানো হচ্ছে। এছাড়া নিউমার্কেট এলাকার আশপাশে পুরো এলাকা জুড়েই ফুটপাত ও রাস্তার প্রায় অর্ধেক অংশ হকারদের দখলে। ফুটপাত বেদখল থাকায় মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটে। এতে যানজট আরো তীব্র হচ্ছে।
নগরীর বায়েজীদ থেকে ষোলশহর হয়ে চকবাজার পর্যন্ত সড়কটিতেও সব সময় যানজট থাকে। এসব এলাকায় বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানার পাশাপাশি অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা রয়েছে। যানজটের কারণে এসব এলাকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। গোলপাহাড়, প্রবর্তক মোড়ে রয়েছে অনেকগুলো বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তাই এসব এলাকায় রোগী বহনকারী যানবাহনের চাপ লেগেই থাকে। ‘অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য এসব এলাকায় যানজট হচ্ছে। যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে সম্প্রতি ট্রাফিক উত্তর বিভাগ ষোলশহর ২ নম্বর গেট থেকে প্রবর্তক মোড় ও সিডিএ অ্যাভিনিউর দুই পাশে জরিপ চালিয়ে ৬৬টি ত্রুটিযুক্ত স্থাপনা চিহ্নিত করেছে। দেখা গেছে, এসব স্থাপনার মধ্যে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, কমিউনিটি সেন্টারসহ ৩৩টি স্থাপনারই কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সিডিএকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, নগরীতে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও খাল থেকে তোলা মাটি রাস্তার উপরেই স্তূপ করে রাখার কারণে রাস্তা সরু হয়ে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিমানবন্দর সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ যানজট আরো বাড়িয়ে তুলেছে। পুলিশের ট্রাফিক বন্দর বিভাগ এক জরিপে বন্দরকেন্দ্রিক যানজটের জন্য ১৫টি কারণ নির্ণয় করেছে। তার মধ্যে একটি হলো বন্দর ব্যবহারকারী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইমমুভার পার্কিংয়ের জন্য কোনো টার্মিনাল নেই। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পণ্যবাহী যানবাহনগুলো বাধ্য হয়ে সড়কের এক পাশে পার্কিং করে রাখতে হচ্ছে।
এদিকে, নগরীর সড়কে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অবৈধ অটোরিকশা। এক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করা হচ্ছে একাধিক গাড়িতে। জেলার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে গাড়ি চলছে শহরে। অনেক গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ করা নেই। অনেক চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অনেকের ব্যক্তিগত অটোরিকশা ভাড়ায় চালানো হচ্ছে। অবৈধ অটোরিকশার কারণে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি শহরের রাস্তায় নিত্যদিনের যানজটেও ভূমিকা রাখছে এরা। এ ধরনের অসংখ্য গাড়ি শহরে রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট অটোরিকশা চালকরা জানিয়েছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করেই তারা শহরের রাস্তায় গাড়ি চালান। ১ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ একটি অটোরিকশার মাসিক টোকেন দেয়। এই টোকেন থাকলে চালককে আর মামলা দেয় না সার্জেন্ট। তবে এই টোকেন-বাণিজ্য করে প্রতি মাসে বিশাল অঙ্কের টাকা কিছু অসাধু পুলিশের পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।এইজন্য কিছু সৎ পুলিশের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছে।
সূত্র মতে, এই খাতে মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় হয়, যা বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে বণ্টন হয়। প্রতি মাসে আরো ১৫০ থেকে ২০০ অটোরিকশা অবৈধ টোকেন-বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছে , যার মধ্য দিয়ে পুলিশের টোকেন-বাণিজ্য আরো জোরালো হয়েছে।মিয়াখান নগর ব্রীজ থেকে কালা মিয়া বাজার পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক অবৈধ অনুমোদনহীন গাড়ী চলাচল করে প্রতিদিন।
সীমান্তবর্তী এলাকা কাপ্তাই রাস্তার মাথা, কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ ও সিটি গেইট হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অবৈধ গ্রামীন গাড়ী ঢুকে নগরে ।এসব অধিকাংশ গাড়ী সার্জেণ্ট রহমানের নামেই নগরে ঢুকে । রহমানের কথা বললেই অন্য সার্জেণ্টেরা অজানা কারণে ছেড়ে দেয়।