যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে আহত কিংবা নিহত হতে পারে পথচারী থেকে শুরু করে ভবনে বাস করা মানুষ। কিন্তু সে দিকে কর্তৃপক্ষের কোন দৃষ্টি নেই। কত হতাহত হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর প্রবর্তক মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই আধা ভাঙ্গা জন আতংকের অবৈধ ভবনকে জোড়া লাগানোর কাজে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হিজড়া খাল দখল করে গড়ে তোলা সেই ভবন গত ২০১৯ সালে প্রায় অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেড। তারপর হাল ছেড়ে দিয়েছে সিডিএ। এরই ফাঁকে আবার কাজ শুরু করেছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের তত্ত্বাবধানে আধাভাঙ্গা ভবনকে অপসারণ করবে বলে সিডিএ-কে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন আবার ওই ভবন পুনঃ নির্মাণের কাজে নেমেছে। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের চরম ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভবনগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে আবার ব্যবহার উপযোগী করার এমন প্রচেষ্টাকে ‘জেনে শুনে বিষ পান করার সামিল’ বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল।
তাদের বক্তব্য, ভবনটি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হলেও ভূমির মালিক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এমন অবস্থায় যেকোন মুহুর্তের ভূমিকম্প কিংবা ঘূর্নিঝড়েও ধসে পড়তে পারে এই ভবন। কেড়ে নিতে পারে ভবনে অবস্থানরত এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার শত লোকের প্রাণ। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন কর্মকান্ড রীতিমত আইন বিরোধী।
এই ব্যাপারে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। চসিকের নিকট থেকে জায়গা নিয়ে এটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে। তবে স্টেট বিভাগের কাছে এই ব্যাপারে কোন খবর থাকতেও পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে প্রবর্তক মোড়ে হিজড়া খালের উপর নির্মিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ভবন দুটি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিডিএ। ভবন বাঁচানো ও উচ্ছেদ ঠেকাতে সেই সময় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সিডিএ’র সাথে বেঠকে বসে। ভবনগুলো তারা নিজেরা অপসারণ করবে জানিয়ে সিডিএ’র কাছে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে প্রতিশ্রুতির প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ভবনগুলো অপসারণ তো করেননি উপরন্তু চরম ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভাঙ্গা ভবন জোড়াতালি দিয়ে আবার ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
এই ব্যাপারে সিডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এই ভবনের জায়গা সরকারি খাস জমি। আমরা সেই জায়গা সেনাবাহিনীকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম। তারা সেটা উদ্ধার করেছে। এখন ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ নিয়ে কিছু কথা আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ওই অংশের অপসারণের ব্যাপারে ভবন কর্তৃপক্ষকে সিডিএ’র কাছে আবেদন জানাতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে তাহলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়। কিন্তু ভবনের কাগজপত্র ঠিক না থাকলে ক্ষতিপূরণের প্রশ্নই আসে না। জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনী কিন্তু এই নিয়ম অনুসরণ করে যাচ্ছে। আবার আইনে আছে খালের পাড়ে কমপক্ষে ৭ ফুট জায়গার মধ্যে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ক্ষেত্রে সিডিএ নিজস্ব ক্ষমতা বলে তা অপসারণ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরা অপসারণ করবে বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হলে স্থপতি আশিক ইমরান গণমাধ্কেযমকে বলেন, এই ভবন দুটি নিয়ে সবাই রীতিমত শঙ্কিত হয়ে আছি। যেকোন সময় এই ভবন ধসে পড়তে পারে। ভবন দুটি এমনিতেই সীমিত জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। তার উপর এখন আবার অর্ধভগ্ন সেই ভবনকে আবার পুনর্নিমাণ করা হচ্ছে-এটা তো রীতিমত ভয়াবহ ব্যাপার। প্রবর্তক মোড়ের মত পস্ (অভিজাত) এরিয়ায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পুরো এলাকাকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন কাজ কখনোই উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের উচিত এই ব্যাপারে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।
উল্লেখ্য, সাবেক সিটি মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদে গত ২০০০ সালে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে হিজড়া খালের একাংশ দখল করে চারতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। যেটি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভবনটি নির্মাণের সময় বিভিন্ন মহল থেকে এর বিরোধিতা করা হলেও তা মানা হয়নি।পরবর্তীতে এই ভবনের অদূরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পশ্চিম গেট সংলগ্ন অংশে হিজড়া খালের উপর ছয়তলা আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটিকে প্রকৌশল অনুষদ হিসেবে ব্যবহার করেছে। এভাবে খাল দখল করে ভবন তৈরি করার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি চলাচল বলতে গেলে বন্ধই হয়ে যায়। এর ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে প্রবর্তক মোড়ে বুক সমান উচ্চতায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।