জমির মালিকরা একদিকে ভূমি হারা হচ্ছে অন্যদিকে ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম ভুমি অফিস ঘিরে দালাল চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে। ‘এল এ শাখার দালাল ওরা ‘ এ শিরোনামে পূর্ব বাংলায় সংবাদ প্রকাশিত হবার পর দুয়েকদিন দালালেরা গা ঢাকা দিলেও এখন আবারো দালালীতে লিপ্ত হবার অভিযোগ উঠেছে।ফলে জমির মালিকরা একদিকে ভূমি হারা হচ্ছে অন্যদিকে ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে । দালালী করে ওরা কোটিপতি হচ্ছে ! সর্বনাশা এই কারণে ক্লীন ইমেজের ভুমি মন্ত্রীর সুনাম নিয়েও চলছে টানাটানি।
আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভুমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভুমিমন্ত্রণালয়কে যুগোপযোগী ও ডিজিটালে রুপান্তর করে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাগাবে কঠোর পরিশ্রম করে চলছে। যার স্বীকৃতিতে তিনি জাতীসংঘ পদক লাভ করেছেন ।এইজন্য সংসদে প্রধানমন্ত্রী ভুমিমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।দেশজুড়ে ৫ আলোচিত মন্ত্রীর মধ্যে ভুমিমন্ত্রী অন্যতম আলোচিত মন্ত্রী। ‘ভুমি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ছোঁয়া, জনদূর্ভোগ কমেছে বহুগুণ’ এই শিরানামেও পূর্ব বাংলায় সংবাদ ছাপানো। ৫জুলাই ২০২০ ‘ভুমিমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন’ এই সংবাদটি পূর্ব বাংলার বিপুল পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।সব মিলিয়ে ক্লীন ইমেজের মন্ত্রী দেশ ছাড়িয়ে জাতীসংঘ পদক লাভ এটি একটি বিরল অর্জন ।এই অর্জন ধরে রাখা যেমন জরুরী তেমনী সুনাম বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখাও প্রয়োজন।
জানা গেছে, সাধারণ মানুষ যখন ভুমি অফিসে গিয়ে দালালের কমিশন ও আইনী মারপ্যাচে হয়রাণী শিকার হয় তখন ভুমিমন্ত্রীর এতসব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নাম মাত্র গুটি কয়েক দালাল ও দূর্নীতিবাজ আমলার কারণে ক্লীন ইমেজের মন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন হোক এটা কারও কাম্য নয়।মন্ত্রীর শুভাকাঙ্খীরা চান দালাল ও দূর্নীতিবাজ আমলার কঠোর শাস্তিও।দালাল চক্রের প্রস্তাবে কমিশন না দেয়ায় প্রবাসী জাকারিয়া এখনো বৈধ জায়গার ক্ষতিপূরণ পায়নি। বরং দালালেরা দূর্নীতিবাজ আমলার যোগসাজসে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়, প্রবাসী জাকারিয়া এখন ফাঁদে আটকে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় ‘১৭ সাল থেকে প্রহর গুনছে।আনোয়ারার হারুন অর রশীদ নামক জনৈক দালাল এই অপকর্মে জড়িত।
জুয়েল কান্তি দত্ত, মোঃ ইউছুফ, জাহেদুল আলম, নুরুল ইসলাম প্রকাশ টাউট তেইন্যা, জসিম উদ্দীন, মোঃ বাবুল, এয়ার মুহাম্মদ, ছাত্রদল ক্যাডার ইকবাল হায়দার চৌধুরী, নবী হোসেনরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার দালালিতে লিপ্ত আছে। ওদের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। কর্ণফুলী থানার রাজিব, মোঃ রহিম ও বাশঁখালী উপজেলার বাদশা মেম্বার, চকরিয়া উপজেলার আলমগীর রানা বোয়ালখালী উপজেলার রিগান বিশ্বাসও এলএ শাখায় দালালি করে থাকে। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখায় তাদের নাম আছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে দালালদের একটি নামের তালিকা আছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র নিশ্চিত করেছে।
সার্ভেয়ার, চেইনম্যানসহ দুর্নীতির অভিযোগে আটক কিংবা গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে গেলেও এসব দালালরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম এলএ শাখার সার্ভেয়ার খাজা উদ্দীন, দালাল জোহরা তার বাবা ওসমান গনি, চেইনম্যান নেজামুল করিমকে গ্রেফতার করা হয়। ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার চেক উত্তোলন চেষ্টার সাথে জড়িত থাকায় গত বছরের ১০ নভেম্বর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এর আগে আরেক চেইনম্যান নজরুল ইসলামসহ দুইজন দুদকের হাতে গ্রেফতার হন। তাদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্যের বিপুল টাকা উদ্ধার করা হয়। দুর্ত বিএনপির ক্যাডার ইকবাল হায়দার চৌধুরী তার বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামে বর্তমানে বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সোসাইটিতে বসবাসরত চট্টগ্রাম এলএ শাখায় দালালি করে কোটি কোটি টাকার গাড়ি বাড়ির মালিক বনে গেছে। জমি জমাও বিস্তর। জনশ্রুতি আছে, ইকবাল জাল দলিল ও এলএ শাখায় দালালি করে কামিয়ে নিয়েছে অন্তত ৫০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে দালালি থেকে অর্জিত টাকায় কাজের সুবিধার্থে আদালত পাড়ায় অফিস করতে ইকবালের নজর পড়ে এলএ শাখার দক্ষিণে সরকারি কিছু খালি জায়গা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ফুঁসলিয়ে সংগঠনের ভবনের নাম দিয়ে একটি দু’তলা ভবন যার নিচতলায় ক্যান্টিন ও ওপরে অফিস তৈরী করে ইকবাল। প্রথম দিকে ওই ভবনের ওপর তলায় অফিস কক্ষ নেওয়ার কথা ছিল ইকবালের। এজন্য সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নিচতলার ক্যান্টিনটি মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে দিতে ২০১৮সালের ২ সেপ্টেম্বর চুক্তিবদ্ধ হন। পরবর্তিতে এই ক্যান্টিন চোখে পড়ে ইকবালের। তখন সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে হাতে নিয়ে মনির হোসেন বাদলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ক্যান্টিনটি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে নেয় ইকবাল। বিএনপির এই ক্যাডারের বিরুদ্ধে অস্ত্র, নাশকতা, সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন মামলা আছে বলে জানা গেছে।এদের বিশাল একটি চক্র ভুমিমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন হয় এমন কাজে লিপ্ত রয়েছে।
এছাড়া জাল দলিল তৈরী করে চট্টগ্রাম এলএ শাখা হতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্যাডার ইকবালের সিন্ডিকেট সদস্য নুরুল ইসলাম ওরফে ফাটা তেইন্যা প্রকাশ টাউট তেইন্যা জাল দলিল তৈরী করে চট্টগ্রাম এলএ শাখা হতে কোটি টাকা উত্তোলন চেষ্টার অভিযোগে গত বছরের ১৯নভেম্বর গ্রেফতার হয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামের রিক্সাওয়ালা লোকমানের ছেলে মোঃ ইউছুফ, জাহেদুল আলম এখন কোটিপতি। ইউছুফ কয়েক বছর আগে কর্ণফুলী থানার মইজ্যারটেকে এস আলম গ্রুপের একটি কারখানায় চাকরি করতেন। জাহেদও ছোটখাট কাজ কারবার করে পেট চালাতেন। জাহেদ এখন ভাল কাপড় ছোপড় পরেন মোটর সাকেল চালান। গুয়াপঞ্চক গ্রামের পান বিক্রেতা নুরুল ইসলামের ছেলে জসিম উদ্দীন চালান প্রাইভেট কার।
জানা গেছে, তিনি নাকি এখন পাকা বাড়ির মালিকও। আমমোক্তার নামা তৈরী করে জড়িয়ে পড়ে এলএ শাখায় দালালিতে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে এই জসিম হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা, অভিযোগ ভুক্তভোগিদের। যাত্রীবাহি বাস চালক পরে পিএবি শ্রমিক নেতা হারুন অর রশিদ এখন কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক। আনোয়ারা উপজেলার মুহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইউপি মেম্বার সাদ্দাম হোসেনও এলএ শাখায় আসা যাওয়া করে। তিনি জেল হাজতে গেছেন। এখন জামিনে আছেন। আরেক দালাল জুয়েল কান্তি দত্ত চলাফেরা করেন ফকির বেশে। ঘন ঘন পান গিলেন। তিনি এখন কোটিপতি। বাড়ি আনোয়ারার ঝিওরী গ্রামে। বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার চেইনম্যানদের সাথে তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। এলএ শাখায় চাঁদাবাজি করে দালালি করে অন্যের টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাখপতি কোটিপতি বনে গেলেও ওরা থাকেন বহাল তবিয়তে। ওদের কিছুই হয়না। ওদের কারনে ভুয়া মামলার শিকার হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকে। কিন্তু শত অসহায় ভুক্তভোগি এসব মানুষের পাশে কেউ নেই। প্রশাসন সরকারী দল, আইন শৃংখলাবাহিনীর লোকজন কি করেন তাদের দায়িত্বটা কি প্রশ্ন রাখেন ভুক্তভোগিরা। তারা ছাড়াও আরও দালাল আছে এলএল শাখায়। নাজির মোয়াজ্জেম হোসেন, সহকারী মোজাফফর আহমদ, সার্ভেয়ার মাহবুবুল আলমসহ বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার অসাধু কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। সহকারী মোজাফফর আহমদ প্রতিটি ফাইল থেকে টাকা নিয়ে থাকে। মিচ মামলায় তার সাথে আপোষে না আসলে সেটি আর সামনে এগুইনা। মাসের পর মাস পরে থাকে এসব মিচ মামলার ফাইল। সংবাদ কর্মীরাও তার রুষ্ট আচরনের শিকার বলে অভিযোগ আছে। দালাল ধরবেন না প্রতারনার শিকার হবেন না এলএ শাখার দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে নানা চমক লাগানো কথা। কথা আছে, কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে আছে নেই। কিন্তু একজন দালালও এলএ অফিস আদালতে ধরা পড়েনা তারা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ায়, কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা মিথ্যা কথা শুনিয়ে ফাইল আটকে রাখে। পরে ভুক্তভোগিদের ভাগে এনে আদায় করা হয় মোটা অংকের চাঁদাসহ নানা সুবিধা। অন্যতায় সার্ভেয়ার কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে মিথ্যা মামলা টুকে দিয়ে ফাইল আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ অহরহ। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনলাইন পত্রিকা সি ভায়েস২৪ এ সবিস্তারে সংবাদ প্রকাশ করা হয় ক্যাডার ইকবালের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, এলএ শাখার তালিকাভুক্ত দালাল ভূমি খেকো ক্যাডার সন্ত্রাসী ইকবাল হায়দার বর্তমানে কম আসা যাওয়া করে এলএ শাখায়। নিয়োজিত লোকজনই করে তার কাজ। ক্যান্টিন নেয়ার খাবারের ব্যবসার পাশাপাশি এলএ শাখার সার্ভেয়ার-কানুনগোসহ সকল কর্মকর্তাকে ভালো মানের মাছ মাংস ভাত বিনামূল্যে খেতে দিয়ে আরও ভালো সম্পর্ক তৈরী করে ইকবাল হায়দার। এভাবে আনোয়ারার চায়না জোন, টানেল নির্মান প্রকল্পের বন্দর, বৈরাগ, বেলচুড়া, হাজিগাঁও, বটতলী, চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা, হালিশহর রিং রোড, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, বে-টার্মিনাল নির্মানসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের দালালি ইকবাল গ্রুপের হাতে। সার্ভেয়ারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে ইকবালের ভালো সম্পর্কের সুবাধে এলএ শাখার দালালি কারবার জমজমাট করে তুলে এই ইকবাল। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতে ছাত্রদলের এই সন্ত্রাসী ক্যাডার ইকবাল ও তার সিন্ডিকেট কিভাবে অধিগ্রহণের শত শত অসহায় মানুষের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। চট্টগ্রাম শহরে ও স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীর সেল্টারে সন্ত্রাসী ভূমি খেকো এই ইকবাল বেপরোয়া হয়ে উঠে।
এদিকে দুর্নীতির ডিপো এলএ শাখা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায়। দৈনিক পুর্বদেশ পত্রিকায়ও বেশ কয়েকটি সংবাদ ছাপা হয় এলএ শাখাকে নিয়ে। তারপরও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার।