সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ কর্মীদের ক্ষোভ
এম জসিম উদ্দিন
চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত সেই আলোচিত হাসপাতাল ঘিরে এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। এলাকাটির গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সাত রাস্তার মোড় থেকে গোয়ালপাড়া হয়ে এনায়েত বাজারমুখী সড়কটি হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি। এতে চলাফেরায় চরম ভোগান্তির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। গণরোষের মুখে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই জমিটি পুরোটাই হাসপাতালের জন্য প্রস্তাবিত। প্রকল্পের কাজের স্বার্থেই তা বন্ধ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রবিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে হঠাৎ তারা দেখতে পান প্রকল্প এলাকার পাশে চলাফেরা বন্ধের আদেশ দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেয় রেলওয়ে। পরে কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখা যায়নি।
গণবিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আহসান জাবির বলেন, ‘ওই এলাকাটি হাসপাতাল প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত। ওই রোডে চলাফেরা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের জন্য একটি ডাইভার্ট (বিকল্প) রোড করা হয়েছে।’
গোয়ালপাড়া সড়কের ভাসমান চা বিক্রেতা আবু জাফর ও স্হানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন, ‘উনারা যে ডাইভার্ট রোডের কথা বলছে সেটা রেলওয়ে ক্লাবের পিছন দিকে। সেদিকে বের হতে অনেক কষ্ট হবে। সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা একটি সংস্থা কিভাবে হঠাৎ বন্ধ করে দেয় সেটা বুঝতে পারছি না। এখানে কানাকে হাইকোর্ট দেখানোর মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’
সংস্কৃতি কর্মী ও শিক্ষক মিনু মিত্র বলেন, হাসপাতালের কাজ দৃশ্যমান হলেই কঠোর আন্দোলনে যাবে নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
ইট পাথরের জঞ্জালে ঘেরা নগরীর বুকে একটু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলানোর জায়গা চট্টগ্রামের সিআরবি। সেখানেই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) একটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ এলাকায় শতবর্ষী গাছপালা কেটে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্তে চরম আপত্তি প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন ও সাধারণ মানুষ। দাবি ওঠে- ‘সবুজ গিলে হাসপাতাল নয়।’
চলমান আন্দোলনের মাঝেই হাঁটাচলার পথ বন্ধের ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা । সপ্তাহখানেক আগে চলাফেরা বন্ধের গণবিজ্ঞপ্তি বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে সেখানে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমরা শুনেছি গোয়ালপাড়া যাওয়ার সড়কটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজও আমরা সিআরবিতে আছি। এ প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংস্কৃতি কর্মী, সাংবাদিক রোকন উদ্দিন আহমদ ও সংস্কৃতি কর্মী মোহাম্মদ আকরাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিআরবিতে বেনিয়া গোষ্ঠীর বানিজ্যিক হাসপাতাল নির্মান সহ্য করা হবেনা। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা গোয়ালপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুর রব এর কবরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করেছে রেল কতৃপক্ষ । রোকন ও আকরাম বলেন, কোনো ধরনের অভিযোগ আপত্তিও পাত্তা দিচ্ছে না রেলওয়ে ।
২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। এরপর ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। মূলত এরপর থেকেই ‘সবুজ বাঁচানোর’ আন্দোলনে নামে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে শুরু থেকেই কারও আপত্তি পাত্তা দিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।