1. admin@purbobangla.net : purbobangla :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

পতেঙ্গায় লটারীর নামে ভয়াবহ প্রতারণা, স্বাস্থ্য বিধি নেই করোনার চাষ !

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২
  • ২৯৪ বার পড়া হয়েছে

পতেঙ্গা প্রতিনিধি

অনুমোদন ছাড়াই গেইট টিকেট লটারীর নামে পতেঙ্গায় চলছে ভয়াবহ প্রতারণা। ‘মাসব্যাপী শিল্প মেলা’ দেখিয়ে বিশাল একটি প্রতারক চক্র প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন বিপুল অংকের টাকা। পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ এলিট হল ও মাঠ ব্যবহার করে এইরকম প্রতারণা চালানোর বিষয়ে পতেঙ্গাসহ গোটা চট্টগ্রাম জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটি এই মেলা ঘাটে ঘাটে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও আবেদন করে মেলাটির আয়োজন করে। গেইট টিকেট এর প্রবেশপত্র দিয়ে র‌্যাফেল ড্র করার কথা বললেও এটিই একটি প্রচারণা মাত্র।

খবর নিয়ে জানা গেছে, এই মেলা কমিটি প্রতিদিন ২২০টি ব্যাটারী চালিত অনুমোদন বিহীন গাড়ী / রিক্সা দিয়ে র‌্যাফেল ড্র-এ আকর্ষণীয় পুরষ্কারের কথা বলে টিকেট বিক্রি করে থাকে। প্রতি টিকেটের মূল্য ২০ টাকা। ৭ কালারের টিকেট বিক্রি করছে এরা। অতি লোভে পড়ে সাধারণ মানুষ ছোট ছোট শিশু-ও মা-বাবা’র নামে টিকেট কিনে ভাগ্য যাছাই করে। গভীর রাতে র‌্যাফেল ড্র-এ পর যখন লটারীতে জিতে না তখন ছোট ছোট শিশু ও মা-বাবার ভাগ্য নেই বলে হতাশ মনে ঘরে ফিরে এই লটারী ক্রেতারা। এরা অল্প ও অশিক্ষিত হওয়ায় এই রকম ধারণা জন্মায় তাদের। সারাদিন মেলা ও র‌্যাফেল ড্র চলাকালে শত শত মানুষের মুখে মাক্স থাকে না, ঠেলাঠেলি ও ঠাসাঠাসি ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি নেই এখানে। যেন প্রতিনিয়ত করোনার আবাদ করছে ওরা।

আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রতি গাড়ি সর্ব নিম্ন ২০ হাজার টাকার উপরে টিকেট বিক্রি করে থাকে।  ২০ হাজার টাকা হিসেবে ধরা হয় তাহলে ২২০গুন ২০,০০০ =৪৪,০০০০০  টাকা অর্থাৎ ৪৪ লাখ টাকার শুধু রিক্সা দিয়ে টিকেট বিক্রি করা হয়। প্রতি গাড়িতে বিক্রিতা ও গাড়ি ভাড়াসহ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। গেইটে আরো প্রবেশপত্র বাবদ ৫০ থেকে ১ লাখ টাকার টিকেট বিক্রি হয়। দোকান ভাড়া বাবদ আরো বিপুল টাকা আয় হয় ও অনেক বিত্তশালী থেকে চাঁদা নেয়। ওই চাঁদার কোন হিসাবও নেই। মাইকিং করে সকাল থেকে রাত ১০টা অবধি এসব টিকেট বিক্রি করা হয়।

সম্প্রতি হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই শরীফ ৪টি গাড়ি আটক করে। মেলা কর্তৃপক্ষ বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে গাড়িগুলো ছাড়িয়ে আনে। এনিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নানা কানাঘুসা শুরু হয়।

জানা গেছে, প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকার মতো কালেকশান করে  ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ  টাকার নিম্নমানের পুরস্কার দেয় র‌্যাফেল ড্র-এ মাধ্যমে। এসব পুরস্কারের কথা স্বীকার করেন এম.এম. মোশাররফ হোসেন ওরফে কানা মাসুদ। এই ব্যক্তি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি দাবী করলেও তার সেক্রেটারীর নাম বলতে পারেননি।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, শিল্পপণ্য মেলায় দেশের ও চট্টগ্রামের কোন নামকরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য নেই। যেমন আবুল খায়ের গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ও কেডিএস গ্রুপসহ বড় বড় কোম্পানীর এই মেলায় কোন পণ্য নেই।চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিনিধিকে বলেন, এইসব বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আমাদের জড়ানো ঠিক নয়। এরা জুয়ার আসর ও করোনার আবাদ করছে।

একটি সূত্র বলেছে, ওই সংগঠনে তার স্ত্রীই ওই সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক। সূত্র মতে, সিলেটের বেল্লাল, বাদলসহ একটি সিন্ডিকেট এই মেলা আয়োজন করে। এই শিল্প মেলা চলাকালীন বিভিন্ন কাজে ও জায়গায় যোগাযোগ করার জন্য কানা মাসুদ ‘আলিশান কার’ ভাড়া করেছে। কানা মাসুদ এই কারটি ভাড়ায় নিয়েছেন বললেও একটি সূত্র দাবী করছে এটি তার নিজের গাড়ি। সারাদেশে এরা প্রতিন্ধীদের সাহায্যের কথা বলে জুয়া, ভয়াবহ লটারী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে টাকা কামানোর মিশনে নামে। বিশেষত নভেম্বর টু এপ্রিল মাস পর্যন্ত তারা এসব কাজে লিপ্ত থাকে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কানা মাসুদ তাদের সব বৈধ কাজগপত্র আছে বলে জানায়। এক পর্যায়ে অফিসে এসে সব কাগজপত্র দেখাবে বলে তিনি পূর্ববাংলা অফিসে আসেন। চোখে দেখেন না এ অভিনয়ে সে তার ছেলে পরিচয়ে ১ ব্যাক্তিও সাথে আনেন। সিল, সই ছাড়া ১টি কাষ্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগীয় কর্মকর্তা বরাবরে র‌্যাফেল ড্র আয়োজনের অনুমতির ১টি আবেদন পত্র দেখান। ওই আবেদনপত্রে কোন অনুমোদনের সম্মতি নেই। ওই আবেদনের তারিখ রয়েছে ৩রা জানুয়ারি ২০২২।

সর্বশেষ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এম.এম. মোশাররফ হোসেন (মাসুদ) নিজেকে বিএ (অনার্স) এমএম (ইংলিশ) বিএ বিইডি পরিচয় দেয় সবখানে। কোথাও কোথাও হাফেজ পরিচয় দিয়েও থাকেন। কথায় কথায় মানুষকে মামলা মোকদ্দমার ভয়ও দেখান। বলে বেড়ান বহু পত্রিকা অফিসসহ বহু পত্রিকার সম্পাদক ও মালিকের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। রয়েছে পুলিশসহ প্রশাসনের অনেকের সাথে। অনেকের নামও তিনি বলে দেন। কেউ নিউজ করলে সে মামলা করারও হুমকি দেয়। শেষে শিল্প পণ্য মেলার নিউজটি না করার জন্য লোভনীয় প্রস্তাবও দেয়। বোর্ড মিটিং করবে বলেও সে জানায়। সে এও বলে, স্থানীয় কমিশনার লোক পাঠিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছে। প্রশাসনের সাথে তাদের অলিখিত চুক্তিও আছে। কিছু লিখলেও মেলা ও লটারী বন্ধ হবে না বলে সে জোর দিয়ে জানায়। র‌্যাব-৭ প্রশাসনের উদার মানবিক সহযোগিতাকে তারা কাজে  লাগিয়ে এলিট হল ও মাঠ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে বলে সচেতন মানুষ দাবী করছে।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla