সেখানে অভিযুক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার খেজুরতলা বাসিন্দা এলাকার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সচিব মো. সাহাবুদ্দিন (৩৬), একই থানার হোসাইন আহমদ পাড়ার মৃত ইসলামের পুত্র নবী চেয়ারম্যানের বাড়ির জহুর আলম (৩৫), একই দক্ষিণ মুসলিমাবাদ কসাই গলির বাসিন্দা বাল্লা (৬৫) ও একই থানার কাটগড় এলাকার বাসিন্দা মনসুর (৬০)।
এদিকে দখলের সময়ে ধারণকৃত একটি ভিডিও চিত্রে কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের একান্ত সচিব মো. সাহাবুদ্দিনসহ তার অনুসারীদের দেখা গেছে।
চলতি বছরের ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সদর দফতর বরাবর ভূমি দস্যুদের হাত রক্ষা পেতে আরও বেশ কয়েকটি পৃথকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম। সেখানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল বারেক, সিএমপির পতেঙ্গা থানার হোসাইন আহমদ পাড়ার মৃত ইসলামের পুত্র নবী চেয়ারম্যানের বাড়ির জহুর আলম (৩৫), একই থানার ডেইল পাড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকার মৃত খুলু মিয়ার পুত্র মো. ইসমাইল সওদাগরের বিরুদ্ধে জায়গা দখল করা অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কাউন্সিলর আব্দুল বারেক কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। তিনি কাউন্সিলর হিসেবে তার শপথ বাক্য পাঠের কয়েকদিনের মধ্যে শুরু যায় ওনার আগের চেহারা। দখলের চেষ্টা চালিয়েছে মুসলিমাবাদ সাগরপাড় ঘেঁষে বেঁড়িবাধ, কাটগড় হিন্দু পাড়ার দুই নম্বর গলির ভেতরে এক হিন্দু পরিবারের জায়গা জোর করে দখল করা চেষ্টা করেন তারা। সম্প্রতি পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ মুসলিমবাদ বেগমগঞ্জ সোসাইটি সংলগ্ন বর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে মনোয়ারা বেগমের জমি জোর করে দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের চেষ্টা করে কাউন্সিলরের লোকজন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৩ মাসে আগে পতেঙ্গা থানার কাটগড়ের হিন্দু পাড়া গলিতে রতিশ চন্দ্র দে নামে এক ব্যক্তি জায়গা দখল করতে গিয়েছিল কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের ব্যক্তিগত সহকারী সাহাবুদ্দিনসহ আরও ৮-১০ জন লোক। পরে সেখানে শ্রাবনী নামে এক গৃহিনীর প্রতিবাদের মুখে পালিয়ে যায় দখলবাজরা।
এছাড়া পতেঙ্গা থানার খেঁজুরতলাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে জায়গা দখলের নেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠে।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘দখলের চেষ্টা করা জায়গাটি এক দাগে প্রায় ১৬ গন্ডা। সেখানে বিএস দাগ ১২৩৭ ও খতিয়ান নম্বর ৫৮৪ মূলে ২ গন্ডা তিন কড়া জমি বিএস নামজারি হয় আমার স্বামীর নামে। জায়গাটি মূলত কেনা সম্পত্তি। তারা জোর করে কোনো কিছু জিজ্ঞসা না করে জায়গাটির মাঝখানে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক সেবা হটলাইন-৯৯৯ এ কল করা হলে তাৎক্ষনিক পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। পুলিশ আসার আগে জায়গার মাঝখানে ৩ ইটের গাথুনি দিয়ে একটি সীমানা প্রাচীরও নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ এসেই ওই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা বন্ধ করে দেয়। আমি এর বিচার চাই।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের ব্যক্তিগত সহকারী মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘ঝামেলা হওয়া জায়গাটি জহুরের। তিনি আমার বন্ধু। তাই বন্ধুর কাজে সহযোগিতা করতে সেখানে গিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল বারেক বলেন, ‘জায়গাটি শফির। এটা নিয়ে বায়না করেছিল জহুর আলম। এটা নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় উনি বিক্রি করে দিচ্ছিল। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক না।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ওই জায়গা নিয়ে আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা হয়েছে। এখন বিষয়টি এসিল্যান্ড মহোদয় দেখবেন। এখানে আমাদের দেখার আর কিছু নেই।’
চসিক কাউন্সিলর কার্যালয়ে দুই সাংবাদিক অবরুদ্ধ!
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুদ্দিন লিজয় প্রকাশ সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক অবরুদ্ধ করে লাঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠেছে।
৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকালে স্টিলমিল বাজার পোস্ট অফিস গলি সংলগ্ন কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের অস্থায়ী কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলাধারার দুই সাংবাদিক স্টিলমিল বাজারে প্রতিবেদন করতে আসেন। এ সময় দোকানিদের সাথে কথা বলার পর স্টিলমিল বাজারে অস্থায়ী কাউন্সিলর কার্যালয়ে যান। তখন কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুদ্দিন প্রকাশ সাহাবুদ্দিন তাদেরকে অবরুদ্ধ করে নানা অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ফেসবুক লাইভে গিয়ে নানা অপবাদ দেন। পরে পতেঙ্গা থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।
এ বিষয়ে সাংবাদিক শাহরুখ বলেন, স্টিলমিল বাজারে দোকানদারদের কাছ থেকে বর্তমান কাউন্সিলর ও তার সহযোগিরা চাঁদাবাজি করেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমি এবং আমার ক্যামেরা পারসন সুজন দাশ সংবাদ কাভারেজ করতে আসি। এ বিষয়ে বাজারে দোকানদারদের বক্তব্য নিয়ে কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের বক্তব্য নিতে গেলে তার সহকারী সাইফুদ্দিন প্রকাশ সাহাবুদ্দিনসহ কাউন্সিলরের কয়েকজন সহযোগী আমাদেরকে ওই অফিসে প্রায় দেড় ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় শাহাব উদ্দিন ফেসবুক লাইভে গিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে লাঞ্চিত করেন। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে জানতে চসিক কাউন্সিলর আব্দুল বারেকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
পতেঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) রবিউল হোসেন বলেন, ওসি স্যার থানার বাইরে আছেন। সাংবাদিককে অবরুদ্ধ ও লাঞ্চিত করার বিষয়টি আমি জানি না। সুত্র চট্টগ্রাম প্রতিদিন ও সিটিজিনিউজ