

চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ! দেশ রাজাকার পরিবারের কাছে বিক্রি হোক সেটি আমরা চাইনা
এম জসিম উদ্দিন
আনোয়ারায় আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। পঞ্চম ধাপের এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে ইতোমধ্যে ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন অনেকে। তার মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস পরিবারের সন্তানও রয়েছে কয়েকজন । আছে ইয়াবা কারবারীও।
উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ১০টিতে এবার নির্বাচন হবে । মামলা জটিলতার কারণে জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নে হচ্ছে না নির্বাচন।
গত সপ্তাহ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে দলীয় ফরম সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা। এদিকে তৃণমূলের দাবীর মুখে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ।
সূত্র জানায়, গত এক মাস ধরে তৃণমূল পর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে প্রতি ইউনিয়ন থেকে ৩ জন করে প্রার্থী তালিকা তৈরি করে জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয় । দলের নির্বাচনি বোর্ড দলীয় মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্তসহ জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ।
তবে এ দৌড়ঝাঁপে স্থানীয় অনেক বিতর্কিত, রাজাকারপূত্র, মাদক ব্যবসায়ী এবং জনবিচ্ছিন্ন লোকও রয়েছে বলে জানা গেছে । এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় নিজ নিজ ব্লগ থেকে বিভিন্নভাবে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে অনেকে । আনোয়ারার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নৌকার মাঝি হতে মরিয়া হয়ে লবিং করছেন স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের একাধিক সন্তান । তাদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের দোসর কুখ্যাত ফজলুল কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচরদের সন্তান ও নাতি পতিরাও রয়েছে। গোয়েন্দা সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা (মান্নান) শিশু ছিলাম । যুদ্ধ দেখার সুযোগ হয়নি । তাই কে রাজাকার কে মুক্তিযোদ্ধা আমি সঠিক জানিনা।এর বাইরে মান্নান আর বেশিকিছু বলতে চাননি । ফোন কেটে দেন ।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন আনোয়ারায় অসংখ্য রাজাকার ছিল । সবচেয়ে বেশি রাজাকার ছিল রায়পুর ইউনিয়নের গহিরায় । ওই গ্রামে প্রায় তিনশোর অধিক রাজাকার ছিল । ওরা সবাই ছিল তৎকালীন চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজাকার নুরুল আনোয়ার চৌধুরী ও আনোয়ারা থানা রাজাকার কমান্ডার জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ওরফে জ্যােল্লার অনুসারী । মুক্তিযোদ্ধা মান্নান বলেন গহিরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আমার সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউসুফ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বাঙালী মুখে শুনতে পাচ্ছি, পূর্ব গহিরার মুন্সি মিয়া ও ওমর মিয়া উভয়ের পিতা মৃত আশু মিয়া । দু’জনই ছিলেন রাজাকার । এ দুই রাজাকার আপন সহোদর । উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার, সদ্য প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজল আহমদ স্বাক্ষরিত সংসদের প্যাডে বিগত ০৯/০৫/ ২০১২ ইংরেজি রায়পুর ইউনিয়নের প্রথম সারির ৪৮ জনের একটি তালিকা ছিল, ওই তালিকার কপিটি কোথায় ? জানতে চাইলে তিনি বলেন তালিকাটি মনে হয় কোথাও হারিয়ে গেছে । ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মান্নান বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি স্বত্বেও এ যাবৎ তালিকাটি পাওয়া যায়নি । তিনি বলেন তালিকাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বাঙালীর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ হলে তারা আক্ষেপ করে বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে, জীবনবাজি রেখে অস্ত্র নিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম । দেশকে শত্রুমুক্ত করেছি । স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আনোয়ারাতে রাজাকারের দানব সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবে সেটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না । এ প্রসঙ্গে শিলাইগড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন- শুনেছি রাজাকারের সন্তানেরা নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রীর দুয়ারে দুয়ারে প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে, তদ্বির লবিং শুরু করেছে । এসব শুনলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় বারবার । তিনি বলেন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর দেশ রাজাকার পরিবারের কাছে বিক্রি হোক সেটি আমরা চাইনা।