মিলাদ মুদ্দাসসির সন্দ্বীপ প্রতিনিধি
মুল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে অবস্থিত উত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারী কলেজ সন্দ্বীপ সরকারি হাজী আবদুল বাতেন কলেজ দ্বীপের প্রথম কলেজ। কলেজটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে এই কলেজই উচ্চ শিক্ষার আলো জ্বালিয়েছে। যুগ যুগ ধরে এই কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে মেধার স্বাক্ষর রাখলেও মুল ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে শিক্ষার কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় অগণিত গরীব ও অসচ্ছল মেধাবী সম্ভাবনা আলোর মুখ দেখছেনা। সন্দ্বীপে বসবাসরত ৪ লক্ষ মানুষের শিক্ষায় আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক সন্দ্বীপ সরকারী হাজী আবদুল বাতেন কলেজে। কিন্তু হতাশার বিষয় সরকারী কলেজের নানান সমস্যা সমাধান উদ্যোগে অবহেলা, আধুনিক আবাসন সুবিধা সংকটের কারণে, শিক্ষকদের অনিহার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমের বেহাল দশা। কলেজটিতে নেই কোন বিএসসি কোর্স, মাষ্টার্সেরও কোন কোর্স নেই। উমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোর্স নেই। একটি বিষয় বাংলাতে অনার্স কোর্স থাকলেও, কোন শিক্ষক নেই। নদী বেষ্টিত এলাকায় বিএসসি, অনার্স, মাষ্টার্স প্রাগ্রাম না থাকার কারনে বহু সম্ভবানাময় মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে গরীব ও মেধাবীরা। কলেজটিতে উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকের ৫৮ টি পদের মধ্যে ৪৩টি পদই শূন্য। অধ্যক্ষসহ বর্তমানে ১৫ জন। ১৫ জন শিক্ষকের ও অনেকে রীতিমত কলেজে থাকেন না। বাংলা, পদার্থ বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, আইসিটি সহ অনেক বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। কলেজসুত্রে জানা যায়, আইসিটি শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত। এ ছাড়াও বর্তমানে কলেজে উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য। ইংরেজি বিষয়ে ১জন সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক থাকলেও সহযোগী অধ্যাপকের ২টি পদই শূন্য। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক থাকার কথা থাকলে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদ শূন্য। হিসাববিজ্ঞন বিষয়ে ৪ টি পদের মধ্যে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় শ্রণির ১৪ টি পদের মধ্যে ১২ টি পদ শূন্য, ৪র্থ শ্রেণির ১৮ টি পদের মধ্যে ১৪ টি পদই শূন্য। বর্তমানে কলেজটিতে এইচ.এস.সি, বিএ, ও বাংলায় অর্নাস কোর্স মিলিয়ে ১১৬০ জন ছাত্র ছাত্রী রযেছে কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছেনা ছাত্ররা। কলেজে শিক্ষকদের জন্য নেই কোন আবাসন সুবিধা, কয়েকজন শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী দের জন্য নির্মিত ডরমিটরি ব্যাবহার করলে ও এখন সেটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত, বিজ্ঞান পরীক্ষাগারের অবস্থা একেবারেই বেহাল, পরীক্ষাগারের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, এ যেন এক বর্জ্যস্তুপ! পরীক্ষাগারের কোন পরিক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারযোগ্য নই। লাইব্রেরিতে কিছু পুরাতন বই থাকলেও বিষয় ভিত্তিক তেমন কোন বই নেই বললেই চলে। কলেজে গত ৫ বছর এইচ.এস.সি ও ডিগ্রিতে ফলাফল খুবই অসন্তোষজনক, মানবিকে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ, ব্যাবসা শিক্ষায় ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ এবং বিজ্ঞানে ৫০ শতাংশের কিছু উপরে ফলাফল করলেও বিসয়ভিত্তিক মৌলিক জ্ঞান কম পাওয়ায় উচ্চ শিক্ষায় ঝড়ে যাচ্ছে বেশীরভাগ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে, তারা জানায় যেসব শিক্ষক আছেন তারাও নিয়মিত ক্লাস নেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন গত ২ বছর সময়ে অনেক শিক্ষকের নাম শুনেছি একবারও দেখিনি। আমরা শিক্ষক চাই, নিয়মিত ক্লাস চাই, বিজ্ঞানের ভাল পরিক্ষাগার চাই, লাইব্রেরীতে বিষয়ভিত্তিক বই চাই। এসব বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফজলুল করিম আমার সংবাদ কে বলেন মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পদায়িত হওয়ার পরে ও নিয়মিত কলেজে থাকছে না শিক্ষকেরা। মুল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ সুবিধা ভাল না হওয়ায় অন্য জেলা থেকে সন্দ্বীপ পোস্টিং হওয়া শিক্ষকেরা অনুপ্রেরণা হারাচ্ছে। আমি উন্নয়নের চেষ্টা করছি, ইতিমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর জন্য আবেদন করছি। অন্যন্য শিক্ষকেরা বলেন, যদি সন্দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের যারা শিক্ষা ক্যাডারে চাকুরী করছেন তাদেরকে সন্দ্বীপে পদায়ন করলে শিক্ষক সংকটের সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরের মাথায় ২০০২ সালে কলেজটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে। ভাঙ্গনের পর কলেজের ২০০২-২০০৩ সালের পাঠদান চলে সন্দ্বীপ রহমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর ২০০৪-০৯ পর্যন্ত কলেজটির পরিচালনা ও পাঠদান চলে মোমেনা সেকান্দর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২০০৯ সালে পুনরায় কলেজটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মিত হয় সন্দ্বিপের মুছাপুর ইউনয়নে পুনঃনির্মিত হয় । প্রায় ৬.২৪ একর ভূমিতে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রদের জন্য ডরমেটরি, লাইব্রেরী, বিজ্ঞান ল্যাব, খেলার মাঠ সহ সুবিশাল ক্যাম্পাস নির্মিত হলেও মাত্র এক যুগের ব্যাবধানে নির্মিত ভবন নষ্ট হতে চলেছে। কলেজ সংশ্লিষ্টরা বলছে খুবই নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে ধারনা করছি। বর্তামানে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কলেজটির জন্য করা হচ্ছে ৬ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন। কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও সন্দ্বিপবাসী কলেজের যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে সন্দ্বীপের শিক্ষার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান।