চট্টগ্রাম নগরীর কদম মোবারক সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে চুরি ঘটনা সাজিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজেই বেকায়দা পড়েছে। প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসায় প্রধান শিক্ষক ধামা চাপা দিতে তৎপর।
প্রধান শিক্ষককের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ।
জানা গেছে, আন্দরকিল্লাস্থ কদম মোবারক সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের গত ২ এপ্রিল রহস্যজনক চুরির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় গত ৪ এপ্রিল একটি ডায়েরী করেন। চুরির বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান সিটি কর্পোরেশনকে অভিহিত করেন। প্রধান শিক্ষকের দুই জায়গায় দুটি অভিযোগ করলেও একটি অভিযোগ অন্য অভিযোগের সাথে মিল নেই। থানার সাধারণ ডায়েরীতে নগদ ২৫ হাজার টাকা চুরির বিষয়টি প্রধান্য দেয়া হলেও সিটি কর্পোরেশনের অভিযোগে শুধুমাত্র দুটি ল্যাপটপ চুরির বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ নিয়ে রয়েছে রহস্য। স্কুলে চুরির বিষয়টি তদন্ত করতে এসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মূল রহস্য।
স্কুলে রক্ষিত সিসিটিভির ক্যামরা ফুটেজেও মেমোরী থেকে মুছে দেন প্রধান শিক্ষক। ঘটনার দিন স্কুলের পিওন প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে মৌখিক ছুটি নিয়ে বাঁশখালী গ্রামের বাড়িতে ছিলেন বলেও স্কুলের একাধিক শিক্ষক- কর্মচারীরা জানান। তবে যে দুটি ল্যাপটপ চুরির কথা বলে হচ্ছে ল্যাপটপ দুটি প্রধান শিক্ষকের বাসায় পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্কুলের কর্মচারী- শিক্ষকেরা ধারণা করছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে স্কুলের কোন শিক্ষক-কর্মচারীর সাথে বিরোধ সৃষ্টি হলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়ে তাদেরকে হয়রানির চেষ্টা করেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে স্কুলের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন কৌশলে চাপ সৃষ্টি এবং চলতি বছর এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের সনদ আটকে রেখে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে শাস্তিমূলক বদলী হয়ে ফের যোগদান করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অবৈধভাবে টাকা আদায়, স্কুলের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমানের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে স্কুলের সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৩ জুন সিটি কর্পোরেশনের শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ পারভেজ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয় হুমকির অভিযোগে গত বছরের ১৪ মার্চ স্কুলের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় প্রধান শিক্ষক মোবাইলে ডেকে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করে।
গত ৩১ মে এসএসসি পরীক্ষার মূল সনদ আনতে গেলে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সহকারী শিক্ষক দিদারুল আলম জোর পূর্বক স্বাক্ষর নেন। অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে শিক্ষা জীবন নষ্ট করে দেয়ার হুমকি দেয়।
বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও লিখিতভাবে জানানো হয়। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে ১০৯ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ২০০ টাকা নেয়ার বিয়ষটি শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। ভর্তির সময় নির্ধারিত ৩ হাজার টাকার বাইরে বিনা রশীদে বিভিন্ন অজুহাতে শত শত টাকা আদায় করা অভিযোগ রয়েছে।
স্কুলের পদাধিকার বলে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী। স্কুলের অনিয়ম দুর্নীতির বিয়ষটি শিক্ষক ও অভিভাবকেরা সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকেও জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, স্কুলে চুরি হয়েছে বলে শুনেছি তবে চুরির ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছেও রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। যাতে অন্যায়ভাবে কেউ কোন ব্যক্তিকে ফাঁসাতে না পারে সেদিকে কমিটির খেয়াল রাখবে। যদি প্রধান শিক্ষকের কোন দোষ প্রমানিত তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোখলেছুর রহমান জানান, স্কুলে চুরি হওয়ার বিষয়টি আমি অফিসিয়ালী যেখানে জানার সেখানে জানিয়ে দিয়েছি। চুরির সময়ের সিসিটিভির ক্যামরা ফুটেজ গায়েব করার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি। অফিসের পিওনকে ফাঁসানোর চেষ্টা করার বিষয়ে বলেন, যে দায়িত্বে ছিল সে তো দায়ী কারণ সে না থাকায় চুরি হয়েছে তবে ছুটিতে থাকা এবং ছুটি দেয়ার বিষয়ে বলেন এ ধরণের কোন অফিসিয়ালী কাগজ পিওন দেখাতে পারবে না সেটা তদন্তের সময় স্বীকারও করেছে বলে জানান।