চট্টগ্রাম অফিস
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই কয়েদি’র সিন্ডকেট চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগার হাসপাতাল নিয়ন্ত্রন করছে বলে অভিযোগ উঠছে ! কোন মামলায় নতুন কেউ জেলে গেলে কারা হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সাজাপ্রাপ্ত মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং সন্ত্রাসী বন্দিদের পরিবারের কাছ থেকে কারা হাসপাতালের নামে দুই কয়েদি’ নিয়মিত চাঁদা আদায় করে চলেছে। ফলে সাধারণ কারাবাসীদের কাছে ওই দুই কয়েদি ভয়ংকর আতংক হয়ে আছে। এসব আসামীরা জানে না এখানে জেল সুপার, কারা প্রশাসন ও কারা পুলিশের বিশাল একটি জনবল এই কারাগার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন । এখানেও নিয়ম নীতি আছে, আছে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি। ওই দুই কয়েদীর কারণে এই কারাগারটি নরকে পরিণত হয়েছে। তৈরী হয়েছে রাষ্ট্রীয় জনবলের বিরুপ ধারণাও। প্রকৃত রোগীরা এই কারা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পায় নাই। অথচ কালো টাকার মালিকেরা ওই কয়েদির সহযোগিতায় কারা হাসপাতালের সব সুবিধা নিয়ে থাকেন।
বছরের পর বছর মাদক, ইয়াবা ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, ঋণ খেলাপী, খুনী ও দাগী আসামীরা হাসপাতালের যাবতীয় সুবিধা নেয়। এই সুবিধা পাইয়ে দেন উল্লেখিত দুই কয়েদী।
অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নিয়ন্ত্রন করেন চট্টগ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি-৫৫১৪/এ মোহাম্মদ শামীম ও সাত লাখ পিস ইয়াবা মামলার ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ৯০০৬/এ এহসান মোহাম্মদ আরফাতসহ সিন্ডকেটের নিয়ন্ত্রনে। তারা সাধারণ রোগীদের ভুল-ভাল চিকিৎসা দেয়ার কারণে কারাগারে অনেক বন্দির প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। তাদের অবৈধ অনৈতিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করেন কারারক্ষি মো. হাবিব। করোনাকালিন নতুন বন্ধিদের হোম কোয়ারেন্টিনের পরির্বতে হাসপাতালে রেখে লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্য করে আসছে তারা। চক্রটি হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সহকারী সিভিল সার্জনকেও প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালিন সময়ে কারাগারে নতুন কোন আসামি কারাগারে আসলে ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার পর ওয়ার্ডে রাখার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।
সরকারি নীতিমালা অমান্য করে বর্তমানে শামীম এবং এহসান মিলে কারারক্ষি হাবিবের সহযোগিতায় হাসপাতালে নিয়ে নামে মাত্র ভর্তি দেখিয়ে জন প্রতি ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। মাসিক ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে দিতে বাধ্য করেন। যদি কোন কারণে তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। হাসপাতালের চিকিৎসা ও ওষুধ পত্র সব নিয়ন্ত্রন করেন শামীম এহাসান সিন্ডিকেট। কারা হাসপাতালের রোগীরা শামীম ও এহসানকে চিকিৎসক হিসেবে চিনেন এবং তারাই মূল চিকিৎসক বলে দাবি করেন। কারা হাসপাতালের অবহেলা অব্যস্থাপনার কারণে প্রতি মাসে কারাগারে বন্দির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে । গত ৬ মে পায়ে রক্তাত্ব হয়ে কয়েদি খোরশেদ আলম চিকিৎসা নিতে গেলে তাকে শামীম চিকিৎসা দেন। এতে ভুল চিকিৎসার কারনে কয়েদি খোরশেদের পায়ের অবস্থা মারাত্বক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। সম্প্রতি জামিনে কারামুক্ত হওয়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার তৌহিদুল ইসলামের পুত্র মনিরুল আজাদ কারা হাসপাতালের অভ্যন্তরের বিষয়ে ভয়াবহ, লোহমর্শক দৃশ্যর বর্ণনা দেন প্রতিবেদকের কাছে। শামীম এবং এহসান ডাক্তার না হয়েও নিয়মিত রোগীদেরকে ওষুধের প্রেসক্রিপশনও দিচ্ছেন। এমন কি বিভিন্ন ঔষধও তারা বিক্রি করে থাকে। প্রকৃত পক্ষে শামীম প্রাইমারী স্কুলের গন্ডিও পার হতে পারেনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার সুপার শফিকুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সরকারিভাবে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া আছে। শামীম ও এহসান মোহাম্মদ আরফাত নামে কেউ এখন কারা হাসপাতালের দায়িত্বে নেই। আল্লাহর রহমতে এত সব কারাবাসী মধ্যে কেউই করোনা আক্রান্ত হয়নি।