পটিয়া প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলম মেম্বারের বিরুদ্ধে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়সহ বেশ কিছু গরিব-অসহায় মানুষের জায়গা জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে জায়গা দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে স্থানীয়রা জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার কুসুমপুরা ইউপি সদস্য হাজী মোহাম্মদ আলম ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনিস্টিটিউটের ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। নগরীর খাতুনগঞ্জে ১৯৯৭ সালে এক মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে টানা ২০ দিনের মতো আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে পটিয়া থানায় ভিকটিমের পরিবার মামলাও করে। ওই মামলা থেকে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামশুদ্দিন আহমদের সহযোগিতায় রেহাই পাওয়ার পর আলম বিদেশে পালিয়ে যান।
জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর কাছে আলম মেম্বারের অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আশ্রয় না পেলেও কথিত পিএস এজাজের সহযোগিতায় আলম মেম্বার এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ও কিশোর গ্যাং গ্রুপ গড়ে তোলেন। জামায়াত নেতা থেকে রাতারাতি আওয়ামী লীগার বনে যাওয়া হাজী আলমের জবর দখলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি হিন্দু যুগী সম্প্রদায়ের সুধীর রঞ্জন নাথ, জগদীশ চন্দ্র নাথ, ননী গোপাল নাথ, স্বপন নাথ, সাধন নাথসহ অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আত্মীয় ফারুক চৌধুরীর স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও তার ভাই গিয়াস উদ্দীনের থানা মহিরা এলাকায় আদালতে বিচরাধীন জায়গা দখল করে গত ৭ মে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন আলম মেম্বার। আলম মেম্বারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলেও অদৃশ্য শক্তির কারণে পটিয়া থানায় মামলা নেয়নি।
জামায়াত নেতা আলম মেম্বার ২০১৩ সালে দেশে এসে জনৈক যুবলীগের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন। টাকার বিনিময়ে ভাগিয়ে নেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিরও পদ। টাকার বিলিয়ে কুসুমপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হন। এরপর দখল করেন থানা মহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদও। শুরু হয় থানা মহিরায় হাজী আলমের একক সাম্রাজ্য। হিন্দুদের জায়গা দখল, মুসলমানদের জায়গা দখল, সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাস জায়গা দখল করে ভাড়া ঘর নির্মাণ, যা থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকার বেশি ভাড়া আদায় হয়। তার ভাড়া ঘরে চলে মাদক ও বিউটি পার্লার ব্যবসার আড়ালে অসামাজিক কর্মকাণ্ডও। এ ছাড়াও থানা মহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শত বছরের প্রাচীন লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
হাইব্রিড আওয়ামী লীগ আলম মেম্বারের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিব্রত। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আকবর আলী বলেন, আলম মেম্বারের বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় মানুষ আমাদের কাছে আসছে। বিয়ষটি আমরা উপজেলার সিনিয়র নেতাদেরও জানিয়েছি। হুইপ মহোদয়কেও বিভিন্ন মাধ্যমে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এজাজ চৌধুরী বলেন, আলম মেম্বারকে নিয়ে এলাকার কিছু মানুষ রাজনৈতিক গ্রুপিং করছে এবং সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে গ্রুপ রয়েছে। তার কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সংক্রান্ত অভিযোগ আমাদের হাতে আসেনি এবং কেউ আমাদের বলেওনি। হুইপ মহোদয়কে কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি আমরা জানার কথা, এখনো পর্যন্ত জানেন না বলে তিনি জানান।
থানামহিরা এলাকায় আলম মেম্বারের সহযোগিতায় আদালতে বিচারাধীন জায়গা মোহাম্মদ নিজাম নামের এক ব্যক্তির পক্ষ হয়ে দখলে দেয়ার অভিযোগ গত ২৭ মে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নুরুল আজিম নামের এক ব্যক্তি।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য হাজী মোহাম্মদ আলম এ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমার পূর্বপুরুষরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমার বাবাও এলাকার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে তাহলে আমাকে যে শাস্তির দেয়া হবে তা মেনে নেব। মেম্বার আলম গাছ কাটা প্রসঙ্গে বলেন, স্কুল কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে কাজ কাটা হয়। রেজুলেশনের কপিটি দেখতে চাইলে প্রথম দেবেন বলেও পরে উল্টে যান। এমনকি এই বিষয়ে জানার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম্বার চাইলেও তিনি দিতেও রাজি হননি। তিনি উল্টো জানতে চান কারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তারা কারা ?