1. banglapostbd@gmail.com : admin :
  2. admin@purbobangla.net : purbobangla :
দেশের স্বার্থে বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পালকে সংরক্ষণ জরুরি - পূর্ব বাংলা
বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
জয়নাল আবেদীন মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার বার্ষিক ক্রীড়া সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সম্মানপ্রদ আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক ১৩ তম রাফি স্মৃতি টি-টুয়েন্টি গোল্ড কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’২৫ ফাইনাল খেলা সম্পন্ন ইউনেস্কো ক্লাব এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য বলার সাহস থাকাই হলো সাংবাদিকতা ক্ষমতার সামনে দাঁড়িয়ে সত্য বলার সাহস থাকাই হলো সাংবাদিকতা শহীদ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবর জিয়ারত করলেন বিএনপি নেতা বিপ্লব মাওলানা শাহ সুফি মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন মমিন (রঃ) এবং কবরবাসী স্বরণে ১ম বার্ষিক দোয়া মাহফিল ইউনেস্কো ক্লাব এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

দেশের স্বার্থে বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পালকে সংরক্ষণ জরুরি

পূর্ব বাংলা ডেস্ক
  • প্রকাশিত সময়ঃ শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১
  • ৬১০ বার পড়া হয়েছে

 মোশাররফ হোসেন মুসা

বিচারপতি রাধা বিনোদ পাল সম্পর্কে পাঠ্য পুস্তকে কিছু পড়িনি, তাঁকে নিয়ে সভা-সেমিনারে কোনো আলোচনাও চোখে পড়েনি; বিধায়, তাঁর
সম্পর্কে বিস্তারিত না জানাই স্বাভাবিক। এ দেশের মানুষ তাঁকে যথাযথভাবে স্মরণে না রাখলেও সুদূর জাপানে তাঁর নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, বলা হয়‘ভারতীয় জাপানি বন্ধু’। তাঁর পরম বন্ধু বিশিষ্ট জাপানি ব্যক্তিত্ব শিমোনাকা ইয়াসাবুরোও এবং তাঁর যৌথনামে কানাগাওয়া-প্রিফেকচারে রয়েছে ‘পাল- শিমোনাকা স্মৃতি জাদুঘর’, টোকিও এবং কিয়োতো শহরে রয়েছে দুটি নান্দনিক স্মৃতিফলক। বিজ্ঞজনেরা বলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী জাপান আর বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপান এক নয়। জাপানিরা সাম্রাজ্য বিস্তারের চিন্তা ত্যাগ করে জাতি গঠনে মনোনিবেশ করেন। জাপানি জনগণের এই বিরাট পরিবর্তনের পেছনে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে বলে কোনো কোনো গবেষক
মনে করেন। এই বিচারে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এই বিচারের অন্যতম বিচারক ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের নাগরিক বিচারপতি ড.রাধা বিনোদ পাল। তিনি ইংরেজিতে লিখিত ১২৭৫ পৃষ্ঠার এক ব্যতিক্রম, বিচক্ষণ ও সাহসী রায়ের মাধ্যমে জাপানকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ এর অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে এক বিশ্ব ইতিহাস সৃষ্টি করেন,যা আজ বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ এক শিক্ষণীয় বিষয় হিসেবে বিবেচিত। জাপান প্রবাসী বিশিষ্ট লেখক ও রবীন্দ্র গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকারের একাধিক লেখা পড়ে তাঁর সম্পর্কে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়।
আমার জানা ছিল যে তিনি কুষ্টিয়া জেলার কোনো এক নিভৃত পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৮৬ সালে। আমার এক অগ্রজ বন্ধু দৌলতপুর উপজেলার
তারাগুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা শামীম রেজার সঙ্গে একদিন তাঁর সম্পর্কে আলোচনা করি (শামীম রেজা ৯১ সালের বিএনপি সরকারের মন্ত্রী আহসানুল হক পচা মোল্লার মেজপুত্র)। তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলেন,‘তিনি তো আমাদের গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছেন! তাঁর চাচার সম্পত্তি আমার ভগ্নিপতির দাদা জসিম উদ্দীন মুল বিনিময় সূত্রে পেয়েছেন।’
রাধা বিনোদ পালের চাচার বাড়ি সরোজমিনে দেখার জন্য গত ৫ মার্চ ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক মাসুদ রানাকে সঙ্গে করে তারাগুনিয়া গ্রামে যাই। শামীম রেজা, স্বপন মোল্লা ও ফয়সাল মোল্লা আমাদেরকে তাঁর চাচার বাড়িতে নিয়ে যান। সেই বাড়িতে বর্তমানে বসবাস করছেন তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হযরত আলী মাস্টার। তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমও একজন শিক্ষিকা। তিনি তারাগুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন। তারাগুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং গত জানুয়ারি মাসে বেশ জাঁকজমকভাবে স্কুলটির শততম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। শোনা যায়, বিচারপতি পালের পৃষ্ঠপোষকতায়
স্কুলটি এম.ই. স্কুল নামে যাত্রা শুরু করেছিল। তিনি প্রথমে এলপি স্কুলে(বর্তমানে তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) ও পরে কুষ্টিয়া হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯২০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং ১৯২৫ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
হযরত আলী মাস্টার বলেন, ‘বাড়িটি ছিল রাধাবিনোদ পালের চাচা লক্ষী  নারায়ণ পালের। রাধা বিনোদ পালের পিতা বিপিন বিহারী পাল সন্ন্যাসী প্রকৃতির লোক হওয়ায় সংসার বিরাগী ছিলেন। সেজন্য বিনোদ পাল চাচার বাড়িতে লালিত-পালিত হন।
তিনি  স্হানীয় গোলাম রহমান পণ্ডিতের মক্তবে লেখাপড়ায় হাতে খড়ি নেন।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ি ছিল অবিভক্ত নদিয়া জেলার করিমপুর থানার আরবপুর গ্রামে। তাঁর পিতা জসিমউদ্দীন মন্ডল বিগত ১৯৪৭- ৪৮ সালে বিনিময় সূত্রে বাড়িটি পান। তাঁর পিতা শিশুকালে তাঁদেরকে বলতেন, ‘এই বাড়ি থেকে একজন জগৎখ্যাত ডক্টরেট হয়েছেন, তোমাদেরকেও ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।’ অবশ্য তাঁর ভাই ড.ফজলুল হক ডাবল ডিগ্রি ধারী হয়েছেন এবং ঢাকা সায়েন্স ল্যাবরেটরির পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা বাড়িটির অবয়ব অক্ষুণ্ন রেখে দিয়েছেন আজও। বিশেষ করে, বহিরাঙ্গন, পুকুর, রান্নাঘর, ল্যাট্রিন, বসত ঘর ইত্যাদি। এমনকি, ল²ীনারায়ণ পালের কাঠের বাক্স, আলনাও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। স্হানীয়দের কাছে এলাকাটি ‘জজ পাড়া’ নামে পরিচিত। শামীম রেজা বলেন, ‘তার দাদা ইউসুফ আলী মোল্লা হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি আনুমানিক ১৯৩৩ সালে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন। বিচারপতি পাল খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করেন এবং সেই মামলায় আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বিচারপতি পালের জীবন ও কর্মকাণ্ড অত্যন্ত বর্ণাঢ্য। গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপক থেকেভারত সরকারের ইনকাম ট্যাক্স বিষয়ে লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, আইনশাস্ত্রের অধ্যাপক,টেগোর ল প্রফেসর, আইনজীবী, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, কলিকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য থেকে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালের (১৯৪৬-৪৮) অন্যতম বিচারকের পদ অলঙ্কৃত করেন। অর্জন করেন ভারত সরকারের ‘পদ্মবিভূষণ’ পদক এবং জাপানের সর্বো”চ রাষ্ট্রীয় সম্মান‘পার্পল রিবন।’ ১৯৫২ সালে দ্বিতীয় বার জাপান সফর করেন। জাপানিরা তাঁকে বিপুলভাবে সংবর্ধিত করেন। ৪৫ দিনের এই সফরে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি জাপানি জনজীবনে। ধ্বংস¯‘প থেকে পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর নিমিত্তে প্রবল উৎসাহ যোগান। ১৯৬৭ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে।
তাঁর জীবনের অবিস্মরণীয় ঘটনা টোকিও ট্রাইব্যুনালের অন্যতম বিচারপতি হিসেবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও শেষ সামুরাই যোদ্ধা জেনারেল তোজো
হিদেকিসহ ২৮ জন আসামিকে অভিযোগ থেকে খারিজ করে দেওয়া। তিনি তাঁর সুদীর্ঘ রায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেন, এর মধ্যে টোকিও
ট্রাইব্যুনালকে তিনি ‘বিচারের নামে প্রহসন’, ‘বিজিতের ওপর বিজয়ীর উল্লাস’ ইত্যাদি বলে অভিহিত করেন। তিনি যুক্তিদ্বারা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন,
‘জাপানের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসব যুদ্ধাপরাধ মিত্র বাহিনিও করেছে, যেমন হিরোশিমা নাগাসাকি শহরদ্বয়ে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ।’তিনি তাঁর রায়ে জাপানকেও দোষী করে বলেন,জাপান শ্বেতাঙ্গ সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিকে অনুসরণ করে একাধিক ভুল করেছে।
১৯৫২ সালে হিরোশিমা শান্তি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করে এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আগত শতাধিক বরেণ্য ব্যক্তিরসামনে অকুণ্ঠ চিত্তে টোকিও ট্রাইব্যুনালেরতীব্র সমালোচনা করেন।তিনি বলেন,‘এটা ছিল ভিক্টর জাস্টিস (বিজয়ীদের পাতানো বিচার)।’ চীনে যদি জাপানি সৈন্য গণহত্যার জন্য দায়ী হয়ে থাকে, তাহলে আমেরিকাও নিরাপরাধ অগণিত শান্তিপ্রিয় মানুষকে আণবিক বোমা দ্বারা হত্যার জন্য দায়ী, আমেরিকারও বিচার হওয়া উচিত।’বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এত বড় মাপের একজন সাহসী বাঙালিকে ভারত ও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ চিনে না বললেই চলে। কলকাতায় আজ পর্যন্ত বিচারপতি পালের একটি ভাস্কর্য  স্হাপিত হয়নি, বাংলাদেশেও নয়। তবে মিরপুর কাকিলাদহে তাঁর পৈতৃক ভিটার কাছাকাছি স্হানীয় তরুণরা তাঁর নামেএকটি মডেল স্কুল  স্হাপন করেছেন(তথ্যসূত্র: প্রবীর বিকাশ সরকারের ‘বাঙালি পাল-জাপানি
শিমোনাকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ)।

এপ্রসঙ্গে সঙ্গে থাকা তরুণ রাজনীতিক মাসুদ রানা বলেন,‘বিশ্বযুদ্ধ বারবার সংঘটিত হয় না। আমরা সেটা কামনাও করি না। বিশ্বের শান্তি ও সভ্যতার স্বার্থে বিচারপতি রাধাবিনোদ পালের জীবনী পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি। তিনি জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী বন্ধনের প্রতীক। ’আমরা তারাগুনিয়া অবস্হানকালে জাপানে প্রবাসী প্রবীর বিকাশ সরকারের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলি এবং বাড়িটির পুরাতন অবকাঠামো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখাই। তিনি এতে খুশি হন এবং বলেন, সেখানে কোনো স্মৃতি জাদুঘর কিংবা স্মৃতিফলক স্হাপন করা যায় কি না, চিন্তা-ভাবনা করছেন। তাছাড়া তিনি আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে এসে তারাগুনিয়া গ্রামে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এখন
প্রয়োজন দেশের সচেতন মহলের আন্তরিক সহযোগিতা।

শেয়ার করুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021 purbobangla