এম. আলী হোসেন
মুসলিম উম্মাহর দু’টি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মাঝে ঈদুল ফিতর একটি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশের মুসলমান ঈদুল ফিতর পালন করে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক ঘোষিত পুরস্কারের প্রত্যাশায় ঈদ অনেক বেশি মহিমান্বিত ও আনন্দঘন। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি জাকাত ও ফিতরা আদায় শেষে ঈদের জামাত থেকে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত হয়ে প্রফুল্ল মনে আনন্দ উৎসবে ঘরে ফেরার অনাবিল আনন্দ এই ঈদের বিশেষ সওগাত।
ঈদুল ফিতর ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ও আধ্যাত্মিক সুষমামণ্ডিত। সাধারণ আনন্দ উৎসব ও ঈদের আনন্দ উৎসবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কেবল আনন্দ-উল্লাস নয়, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভ এবং মানব কল্যাণের সুযোগ রয়েছে এর মধ্যে। কঠোর সিয়াম সাধনা, সংযম, দান-খয়রাত, ত্যাগ-স্বার্থপরতা ও সার্বজনীন কল্যাণে আত্মনিবেদনের সমন্বয়ে ঈদ উৎসব অনেক বেশি বাস্তবিক শুভময়তা এবং পারলৌকিক মুক্তির প্রত্যাশায় ঋদ্ধ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাকিদ। আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে। দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙ্গাইতে নিদ’
ঈদের এই সার্বজনীন ও পারলৌকিক কল্যাণ, সাম্য-সৌহার্দ্যরে বার্তা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়ে ও কর্মে যথার্থভাবে প্রতিফলিত হলেই ঈদের অন্তর্নিহিত আহ্বান সফল ও সার্থক হবে। মুসলমানদের মধ্যে ধনী-দরিদ্র, বর্ণ-গোত্র, ভাষা, ভৌগোলিক অবস্থানগত পার্থক্য ও উঁচু-নিচুর ভেদাভেদের কোনো সুযোগ নেই। ঈদের নামাজের জামাতে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয় মুসলমানেরা। তাদের সমাবেশ এবং হাতে হাত ও বুকে বুক মেলানোর দৃশ্য বেহেশতি বাঞ্ছনায় উদ্ভাসিত।
ঐতিহ্যগতভাবে ঈদ আমাদের দেশে বরাবরই ব্যাপক আয়োজন, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে সব মানুষই তাদের সাধ্যানুযায়ী ঈদ-উৎসবে শরিক হয়। বরাবরই প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মানুষ গ্রামে ছুটে যায়। একযোগে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরমুখী যাত্রায় পথেঘাটে এক ভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা হয়। পথে পথে নানা দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয় ঈদ যাত্রীদের। একদিকে পরিবহন ব্যবস্থায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিযোগিতা ও অতিরিক্ত যাত্রীবহনের ঝুঁকি, অন্যদিকে রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি, যানজট ও রাস্তার বেহাল দশা মাথায় নিয়ে চলে ঈদযাত্রা।
অবশ্য এবারকার পরিস্থিতি আগের তুলনায় বেশ ভয়াবহ ও আতংকজনক । বৈশ্বিক অতি মহামারী এই উৎসবে গত বছরের মতো এখনো রয়ে গেছে। আগের তুলনায় রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো হলেও সমাবেশ ও সম্মেলন স্বাস্হ্য সম্মত নয়। যানজট আছে তবে অসহনীয় নয়।
এইবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- যে যেখানে আছেন, সেখানে ঈদ উৎসব করুন। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। স্বাস্হ্য বিধি মেনেই ঈদ উৎযাপন করুন।
আমাদের আন্তরিক প্রত্যাশা, ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে ইসলামের অহিংসা, ক্ষমা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা জাগরিত হোক, সন্ত্রাস অবসিত হোক, সবার মধ্যে প্রকৃত ধর্মবোধ ও মূল্যবোধ সংহত হোক। সেই সঙ্গে এটাও প্রত্যাশা করি, ঈদ আনন্দময় ও উৎসবমুখর হোক। পূর্ব বাংলার সকল পাঠক, লেখক, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।