সম্প্রতি ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার শীর্ষ সম্মেলনে ডিজিটাল প্রযুক্তির নতুন ও উচ্চতর ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং শিক্ষাকে সার্বিকভাবে বিজ্ঞানসম্মত করতে দু দেশের তরফে যে যৌথ অঙ্গীকার করা হয়েছে, তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, গত ০৪ মে, মঙ্গলবার, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত বৈঠকটিতে চলতি দশকে ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার বাণিজ্য সমৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জলবায়ু, কর্ম, শিক্ষা, গবেষণা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে ‘রোডম্যাপ ২০৩০’ কর্মসূচি প্রণীত হয়েছে। শীঘ্রই দু দেশের মন্ত্রী পরিষদের তত্ত্বাবধানে “বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন কাউন্সিল (সায়েন্স এন্ড ইনোভেশন কাউন্সিল) আয়োজনেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁরা।
বৈঠকে কোভিড সঙ্কট মোকাবেলায় ভ্যাকসিন তৈরীর ক্ষেত্রেও অংশীদারিত্বের বিষয়টি তুলে আনেন দুই নেতা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এর সম্মিলিতভাবে তৈরী কোভিড টিকাকে ভারতে তৈরী, ইংল্যান্ডে বিকশিত এবং সারাবিশ্বে ব্যবহৃত বলে অভিহিত করেন তাঁরা। সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে বলে রায় দেন দুজনে।
ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করতে মূলত যে প্রধান বিষয়গুলোর অবতারণা করা হয়েছে
১। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নারীদের ভূমিকা জোরদার করতে ভূমিকা গ্রহণ করা এবং নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরী করতে পদক্ষেপ নেয়া।
২। ইন্ডিয়া ইনোভেশন কম্পিটেন্সি এনহেন্সমেন্ট প্রোগ্রাম (আইআইসিইপি) এর মতো প্রোগ্রাম গুলোকে উৎসাহিত এবং জনপ্রিয় করতে স্কুল, কলেজ, শিল্প-কারখানা, সরকারের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা এবং উদ্ভাবনকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করা।
৩। দু দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় গবেষণা, উদ্ভাবন কর্মসূচি এবং সরকারী সম্পর্কে উচ্চমানের এবং যুগোপযুগী করে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেয়া। স্বাস্থ্য, চক্রবৃদ্ধি অর্থনীতি, জলবায়ু, জ্বালানী, নগর উন্নয়ন, প্রকৌশল, পরিবেশ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রিসাইক্লিং এর মতো বিষয়গুলোতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রয়োগ পূর্বক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়া।
৪। যেকোনো প্রকারের সরকারী, বেসরকারী গবেষণা ও উদ্ভাবন কার্যক্রমকে আরো বেশি পরিমাণে ফলপ্রসূ করতে বাণীজ্যিকীকরণ করা। সকল প্রকার দুর্নীতি হ্রাস করা।
৫। শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মতো বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি বিনিময়, কর্ম সংস্থান, যৌথ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক সুবিধা সহজে প্রদান করতে হবে।
৬। প্রযুক্তিগত ভাবে একে অন্যের পরিপূরক হতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়াতে হবে। ভালো কাজ গুলোর প্রচার করতে হবে। তথ্য আদান প্রদান করতে হবে। তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। টেক সামিট আয়োজনের মাধ্যমে বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা এবং নীতি নির্ধারকদের এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।
৭। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। স্টার্ট আপ ব্যবসার মতো প্রোগ্রাম গুলোকে বৃদ্ধি করতে উৎসাহিত করতে হবে। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যহত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, বৈঠকের শেষ ধাপে, কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে প্রধানমন্ত্রী জনসনকে ভারত ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে, লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ এর প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জনসন।