চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে নষ্ট পণ্য ধ্বংসের নামে একটি চক্রের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার মালামাল পাচারের অভিযোগ উঠেছে। চক্রটি নষ্ট পণ্য ধ্বংসের নাম দিয়ে কাস্টমস অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় নাম মাত্র মূল্য দিয়ে পছন্দের ব্যক্তিকে নিলামের নামে পাচার করে আসছিল। এই বিষয়ে ইয়ার্ড মালিক আবদুর রহিম বললেন মাত্র ১ বস্তা মাল গরীবের ছেলেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। একই কথা বললেন ইয়ার্ডের অপর মালিক মোঃ ইছা। কাষ্টমসের সাথে ইয়ার্ডের চুক্তিদার আবদুল মান্নান বললেন মাল পাচার হলে এক বস্তা হয় নাকি ? মালামাল পথ থেকেও পাচার হতে পারে। চট্টগ্রাম কাস্টমসে ৩০০ কোটি টাকার মালামাল নষ্টের আড়ালে‘পাচারের অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নগরীর উত্তর হালিশহরের বে টার্মিনাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধ রোডের চৌধুরী পাড়ায় বিভিন্ন জনের জায়গা নিয়ে ইয়ার্ড বানায় মোঃ ইছা ও আবদুর রহিম ।এই ইয়ার্ডটি পটিয়ার মোঃ ইব্রাহিমের ছেলে আবদুল মান্নান ভাড়া নেন।ওই ভাড়া জায়গায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নষ্ট পণ্য ধ্বংসের জন্য সে ভাড়া দেয়। ওই ইয়ার্ডের মাত্র ৫ কানি জায়গা নেয় কর্তৃপক্ষ। ৫ কানি জায়গায় এতগুলো মালামাল নষ্ট করাও অবিশ্বাস্য বলে স্হানীয় লোকেরা বলছে।
অভিযোগ রয়েছে, চক্রটি কয়েক কন্টেইনার মালামাল লোক দেখানো নষ্ঠ পণ্য ধ্বংসের নামে ছবি তুলে কয়েকটি গণমাধ্যমকে দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করার পর বাকী কন্টেইনারের মালামাল বাইরে বিক্রি এবং ভাল পণ্যর কন্টেইনারও বন্দর থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বের করে দেয়।
জানা গেছে, বন্দর দিয়ে বিভিন্ন সময়ে আমদানি করা ২৯৮ কনটেইনার পণ্য ধ্বংসের দিনক্ষণ ঠিক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ। এসব কনটেইনারে থাকা প্রায় ৬ হাজার টন ব্যবহার অযোগ্য পণ্য ঘোষনা করেন। গত সোমবার ২৯ মার্চ ধ্বংস করার দিন তারিখ নির্ধারণ করেন। বিষয়টি অনেকটা গোপনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসেও নষ্ঠ পণ্য ধ্বংস করে কাস্টমস। কয়েক কন্টেইনার পণ্য ধ্বংস করার হলে অধিকাংশ পণ্য বাইরে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কাস্টমস সূত্রে জানায়, এসব পণ্য ধ্বংসের জন্য নগরীর উত্তর হালিশহরের বে টার্মিনাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধ রোডের চৌধুরী পাড়ায় অবস্থিত একটি খোলা জায়গা নির্ধারণ করেন। এর আগেও ২০১৯ সালে একই এলাকার অন্য একটি জায়গায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ১৯৪ কনটেইনারের ৪ হাজার ৮০৭টন ব্যবহার অযোগ্য পণ্য ধ্বংস করা হয়েছিল। এসব পণ্য ধ্বংস করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন,পরিবেশ অধিদপ্তর, বন্দর, সিএমপি কমিশনার, কাস্টমসের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হলেও অনেক সময় এইসব সংস্থাকে না জানিয়ে বাইরে পণ্য পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
গত ২১ মার্চ কাস্টমস হাউসে এসব পণ্য ধ্বংস করার জন্য গোপন এক মিটিং এ করেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা । ওই মিটিং-এ ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ঠ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৫ মার্চ ধ্বংস কার্যক্রম কমিটি থেকে জেলা প্রশাসক, বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসকে চিঠি দেয়া হয়। শুরু থেকে পণ্য ধ্বংস করার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর আপত্তি জানিয়ে আসছিল।
পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কে.এম কর্পোরেশনের ম্যানেজার (নিলাম) মোহাম্মদ মোরশেদ নষ্ট পণ্যর বের করার আড়ালের নামে বন্দর থেকে কন্টেইনারে মালামাল বের করার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির নিউটন দাশ নামের এক ব্যক্তি নষ্ঠ পণ্য ধ্বংসের নামে কোটি কোটি টাকার মালামাল পাচারের অভিযোগ করে অর্থ মন্ত্রনালয়, এনবিআর চেয়ারম্যান, দুদকসহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগও করেন। অভিযোগে কন্টেইনারের মালামাল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ডাম্পিং এ ধ্বংস করা হলে রাজস্ব পাবে সরকার এবং কত কন্টেইনার মামলামাল ধ্বংস করা হয়েছে তার একটি তথ্যও সংরক্ষণ থাকবে। এটা না করে বাইরে নির্জন স্থানে গোপনে মালামালগুলো ধ্বংসের নামে বাইরে পাচার করার সুযোগ আছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।